পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী
আগামী শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে আইএসএল ফুটবলের ফাইনালে মুখোমুখি মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস ও মুম্বই সিটি এফসি৷ দু’দলের কাছেই মর্যাদার লড়াই৷ শুধু তাই নয়, এই দুই দল পরপর দু’বছর ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছে৷ গতবছর এই মুম্বইকে হারিয়েই মোহনবাগান ভারত সেরা দল হিসেবে গৌরব অর্জন করেছিল৷ তাই এবারে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড চাইছে দ্বিতীয়বারের জন্য খেতাব জয়ের মুকুটটা তাদের কাছে আসুক৷ তারপরেও মোহনবাগানের কাছে বাড়তি সুযোগ বলতে যা বোঝায়, তা হল ঘরের মাঠে তারা খেলবে৷ পাশাপাশি, প্রায় সত্তর হাজার দর্শকের প্রেরণা তাদের ভালো খেলা উপহার দেওয়ার জন্য হাতিয়ার হবে৷ সেই কারণেই জমাটি লড়াইয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ শনিবার রাতে মেতে উঠবে, তা নিয়ে নতুন করে বলার কোনও জায়গা নেই৷ গত সেমিফাইনাল দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে দুরন্ত জয় তুলে নিয়েছে মোহনবাগান ওড়িশা এফসি’র বিরুদ্ধে৷ সেই আত্মবিশ্বাসেই মোহনবাগান চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে নতুন ভাবনায় মুম্বইকে৷ মুম্বইও কিন্ত্ত নীরবতা পালন করবে না৷ তারাও মোহনবাগানকে চাপের মধ্যে রেখে দিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে৷ সবদিক দিয়ে চিন্তা করলে উত্তেজনায় প্রতিটি মুহূর্ত গ্যালারি মুখর থাকবে৷ আর এই খেলার শেষেই আট মাসের ফুটবল প্রতিযোগিতার ইতি টানবে৷ মোহনবাগান ও মুম্বই দল দু’বারের ট্রফি জয়ের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ ইতিমধ্যেই মোহনবাগান লিগ ও শিল্ড জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছে৷ তাই তাদের সামনে ডবল করার একটা সুযোগ এসে গিয়েছে৷
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে মোহনবাগান ক্লাবে৷ তাদের কোচ জুয়ান ফেরান্দোর পরিবর্তে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনবারের আইএসএল ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন কোচ লোপেস হাবাস৷ আবার অন্যদিকে মুম্বই দলের নতুন কোচ হয়েছেন পিটার ক্রাতকি৷ মুম্বইয়ের কোচ ছিলেন ডেস বাকিংহাম৷ তাঁকে সরিয়ে কোচের বাটনটা তুলে দেওয়া হয়েছে পিটার ক্রাতকিকে৷ সেই কারণে তাঁর কাছেও কিন্ত্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটা৷ দুই কোচের মগজাস্ত্র কীভাবে খেলার মাঠে ব্যবহার করা হবে, সেটাই কিন্ত্ত দেখার বিষয়৷ তবে দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা রেষারেষি থাকবেই৷ কে কাকে ছাপিয়ে যাবে, তা নিয়ে অবশ্যই সমীক্ষা হবে৷ ভারতীয় ফুটবলে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে৷ পাহাড়ের ছেলে৷ অত্যন্ত পরিশ্রম করতে পারেন৷ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজেই দৌড়ে গিয়ে বল যেমন ধরেন, তেমনই আবার বল সাপ্লাই করতেও ওস্তাদ৷ তাই ম্যাচের রং বদলে দিতে মুম্বই অবশ্যই ছাংতের উপরে অনেক বেশি নির্ভর করবে৷ গোল বক্সের মধ্যে ছাংতে অত্যন্ত বিপজ্জনক৷ গোল করতেও তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন৷ সেই কারণে মোহনবাগানের গোলরক্ষক বিশাল কাইতকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে৷ যদি কোনওরকম ভুল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দলের উপরেই চাপ পড়বে৷ চেন্নাই থাকাকালীন ছাংতে সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন৷ যখন এক প্রান্ত থেকে তিনি দৌড় শুরু করেন, তখন প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা বেশ সমস্যায় পড়ে যান৷ কখনও তিনি ভিড়ের মধ্যে খেলেন না৷ নিজের জায়গা কীভাবে করে নিতে হয়, তা ছাংতের জানা আছে৷
আবার অন্যদিকে মোহনবাগানের আক্রমণভাগের ফুটবলারদের অভাব নেই৷ বিশেষ করে বিশ্বকাপার দিমিত্রি পেত্রাতোসের উপরেই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হবে৷ তিনি নিখুঁত বল বাড়িয়ে থাকেন৷ সতীর্থ খেলোয়াড়রাও সজাগ থাকেন, সেই বলটা কীভাবে নিজের আয়ত্তে রেখে গোলমুখে ছুটতে হবে৷ গোল করার মতো সুযোগ তৈরি করে দিয়ে পেত্রাতোস নিজেকে দারুণভাবে মেলে ধরেন৷ প্রয়োজনে সতীর্থ খেলোয়াড়দের দিয়ে গোল করিয়ে আনন্দ পান৷ আর্মান্দো সাদিকু ফাইনালে খেলতে পারছেন না৷ সেই কারণে পেত্রাতোসের দায়িত্ব অনেক বেশি থাকছে৷ পাশাপাশি মনবীর সিং ও জেসন কামিংস নিজের উপরে আস্থা রাখেন৷ গোল করতে তাঁরা সবসময় ছোটাছুটি করে থাকেন৷ প্রয়োজনে লিস্টন কোলাসো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে জানেন৷ মাঝেমধ্যেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে গোল করতে এগিয়ে আসেন জনি কাউকো৷ সাধারণত, জনি কাউকো মাঝমাঠ থেকে খেলে থাকেন৷ তবে তুরুপের তাস হতে পারেন কিয়ান নাসিরি৷ অবশ্য প্রথম একাদশে না থাকলেও অতিরিক্ত তালিকায় নাসিরি থাকছেন৷ সব দিক দিয়ে বিচার করলে আক্রমণভাগের দাপটটা মোহনবাগানের বেশি থাকবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ মোহনবাগান দলের কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হবে দর্শক৷ মুম্বই দলের মহেশ সিং ও রোশন সিংহের মধ্যে সমন্বয়টা ভালো৷ সুযোগ বুঝে গোল করতে তাঁরা পিছিয়ে থাকেন না৷ মুম্বই দলের ধারালো অস্ত্র বলতেই পাঞ্জাবের বিক্রমপ্রতাপ সিং৷ উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে এসে প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের অনেক সময়ই দিশেহারা করে দেন৷ ইতিমধ্যে তিনি আটটি গোল করে ফেলেছেন৷ আবার মোহনবাগানের শুভাশিস বসু, যিনি দলের পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে রক্ষণভাগ সামলাচ্ছেন৷ এখনও পর্যন্ত তিনি ২৪টি ম্যাচ খেলেছেন৷ দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল খেলোয়াড়৷ আক্রমণে সবচেয়ে বেশি বল বাড়িয়েছেন শুভাশিস৷
এবারের আইএসএল ফুটবলে মোহনবাগানের কোচ লোপেস হাবাস সেরা কোচের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন৷ মুম্বইয়ের পিটার ক্রাতকি ও গোয়ার ম্যানুয়েল মার্কুয়েস সমানভাবে এগিয়ে চলেছেন৷ সেরা বিদেশি হওয়ার দৌড়ে ভালো জায়গায় রয়েছেন দিমিত্রি পেত্রাতোস৷ সেরা গোলরক্ষক হিসেবে মোহনবাগানের বিশাল কাইতের নামটা অনেক স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ আবার সেরা ভারতীয় ফুটবলার হিসেবে মনবীর সিংয়ের নামটা ঘোরাফেরা করছে৷ এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভ করার পরেই মুম্বইয়ের কোচ পিটার ক্রাতকি বেশ হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, ষাট হাজার দর্শক আমাদের খেলা দেখে মুগ্ধ হবেন এবং লড়াই কীভাবে করতে হয়, তা প্রত্যক্ষ করবেন৷