• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

টানা হারের লজ্জায় সরে দাঁড়ালেন কুয়াদ্রাত

বিচ্ছেদের পথটাই তিনি বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এবারে কোচ কুয়াদ্রাতের উত্তরসূরী কে হবেন, বা ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব কার হাতে বর্তাবে, এ নিয়ে এখন হাজারও প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে।

দফায় দফায় লাল-হলুদ শিবিরের কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাতের সঙ্গে কর্মকর্তাদের আলোচনা হয়েছে। কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় কোচের প্রতি তাঁদের আগ্রহ রয়েছে, এমন কথা সেইভাবে স্পষ্ট হয়নি। যতবারই কোচ বলতে চেষ্টা করেছেন খেলোয়াড়দের মাঠের মধ্যে যে ভূমিকা থাকা দরকার, তা কখনওই মেনে নিতে চাননি কর্মকর্তারা। এমনকি কোচ বলেছিলেন, আমার নামে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান কেন দেওয়া হয়েছিল, তা জানা নেই। দল হারলে সবারই মন খারাপ হয়। আমিও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। আমি তো বলেছিলাম, ভবিষ্যতের জন্য দল গড়তে হবে। সময় লাগবে। কিন্তু সেই সময় কোথায় দেওয়া হল!

আইএসএল ফুটবলে পরপর তিনটি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল হেরে যাওয়াতে সব দোষ গিয়ে পড়েছে কোচের কাছে। কোচ তবুও কঠিন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন, দলকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে, আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চোট-আঘাত থেকে খেলোয়াড়দের সচেতন হতে হবে। সেই প্রয়াসটা দেখতে পাওয়া যায়নি। কোচের নামে স্লোগান দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেই ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে দিলেন। কোচ সমর্থকদের আবেগকে কুর্নিশ করেছেন। তবে নতুন কোচ কে হবেন, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। অনেক নাম ঘোরাফেরা করছে। এখনই কোনও কোচের উপর সিলমোহর পড়েনি। তবে অর্ন্তবর্তী কোচ হিসেবে এই মুহূর্তে দায়িত্ব পালন করবেন কলকাতা ফুটবল লিগের লাল-হলুদ কোচ বিনো জর্জ। বিনো জর্জের প্রশিক্ষণে কলকাতা ফুটবল লিগে ইস্টবেঙ্গল খেতাব জয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচে হার স্বীকার করেনি ইস্টবেঙ্গল। আপাতত কোচের দায়িত্ব নিয়ে বিনো জর্জ সবার কাছে অনুরোধ করেছেন, দলকে সমর্থন করতে এবং ফুটবলারদের উৎসাহিত করতে।

গত বছর কুয়াদ্রাতের কোচিংয়েই সুপার কাপ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। লাল-হলুদ সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। গত বার ডুরান্ড কাপে রানার্স হয় তারা। কুয়াদ্রাতের অধীনে ক্লাবের এই দুই সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। বিদায়ী কোচকে সম্মান জানিয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছে ক্লাব।

তবে আইএসএল ফুটবলে প্লে-অফে দলকে তুলতে পারেননি কুয়াদ্রাত। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, দলে আরও কিছু ভাল ফুটবলার চান। তাঁর দাবি মেনে এই মরসুমের আগে দল গুছিয়ে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। গত বারের আইএসেলের সোনার বুটজয়ী দিমিত্রি দিয়ামানতাকোসকে এনেছে তারা। সই করানো হয়েছে মাদি তালালের মতো বিদেশিকে। মোহনবাগান থেকে হেক্টর ইয়ুস্তে ও আনোয়ার আলির মতো ডিফেন্ডারকে সই করিয়েছে তারা। তার পরেও এ বার খারাপ খেলছে ইস্টবেঙ্গল। ডুরান্ডে ব্যর্থ হয়েছে। আইএসএলে পর পর তিন ম্যাচে হারতে হয়েছে। তবুও দলের সাফল্য দেখতে পাননি সমর্থকরা। কর্মকর্তারা যে আশা নিয়ে দল গঠন করেছিলেন, সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থতাই চোখে পড়েছে। আর এই ব্যর্থতার কারণেই কোচ কুয়াদ্রাতের চাকরি চলে গেল। এখন দেখার বিষয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত কোচ বিনো জর্জ দলের
অবস্থান বদলাতে পারেন কিনা।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ইস্টবেঙ্গল শিবিরে কোচ বদলের নাটক নতুন করে শুরু হয়ে গেল। প্রথমেই কোপটা পড়ল কোচ কুয়াদ্রাতের উপরেই। গতবছর ইস্টবেঙ্গলের উত্তরণের পিছনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন কোচ কুয়াদ্রাত। তারপরে যখন হারের পালা চলতে শুরু করল, তখনই কোচ অনুভব করেছিলেন তাঁর পক্ষে দলের সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না। তাই বিচ্ছেদের পথটাই তিনি বেছে নিয়েছেন। কিন্তু এবারে কোচ কুয়াদ্রাতের উত্তরসূরী কে হবেন, বা ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব কার হাতে বর্তাবে, এ নিয়ে এখন হাজারও প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। তবে ইতিমধ্যেই জামশেদপুরের কোচ এবং মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ জুয়ান ফেরান্দোর সঙ্গেও কথাবার্তা বলা হতে পারে বলে অন্য সূত্রে জানা গিয়েছে।