তাহলে কে জিতল ইডেন উদ্যানে আইএসএল ক্রিকেটের প্রথম সাক্ষাতকারে? একটাই উত্তর সবার কাছ থেকে বিরাট কোহলি! খেলল তো কলকাতা নাইট রাইডার্স আর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। তবে কোহলি জিতল কেন? বেঙ্গালুরু পরিচয় বলতেই বিরাট কোহলি। সেখানে তো ম্লান হয়ে গেছেন বলিউড তারকা শাহরুখ খান। শুধু মাঠে নয়-বিনোদন মঞ্চেও হারিয়ে দিলেন কিং খানকে। মঞ্চে কোহলি উঠতেই শাহরুখ এগিয়ে গিয়ে কপালে চুম্বনে ভরিয়ে দিয়ে বরণ করে নিলেন। আর তখনই গ্যালারিতে বিরাট চিৎকারে সবাই মেতে উঠলেন। তারপরে খেলা শুরু হতেই ছত্রিশ বছর বয়সী ক্রিকেটার কোহলি জানান দিয়ে গেলেন তরুণ ক্রিকেটাররা কেন তাঁর আগ্রাসী ভূমিকাকে তারিফ করেন।
পুরো দলটাকে কীভাবে কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে হবে তার অঙ্কটা নতুন অধিনায়ক রজত পাটিদারকে কষে দিয়েছিলেন। আবার চওড়া ব্যাটে জয়ের রানটা কীভাবে স্কোরবোর্ডে সংযুক্ত করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন। ইডেন তাঁর প্রিয় মাঠ। কারা যেন বলেছিলেন কোহলিদের বেঙ্গালুরু দল সেইভাবে দাপট দেখাতে পারবে না। কলকাতা শহর কোহলির জন্যে অপেক্ষায় ছিল তা স্পষ্ট হয়েছে। কলকাতার ১৭৪ রানের জবাবে ফিল সল্ট আর বিরাট কোহলির রনংদেহি ব্যাটিংয়ে বেঙ্গালুরু দল ৭ উইকেটে জয় তুলে নিতে স্পর্ধা দেখিয়েছে। অতিভক্তি এক দর্শক তাইতো ফেন্সিং টপকে মাঠে প্রবেশ করে সটান কোহলিকে জড়িয়ে ধরে হয়তো বলেছেন, তুমি পারো নতুন আলো দেখাতে। এই আন্তরিক দৃশ্যটা সবার মনকে মাতিয়ে দিয়েছে। হয়তো সেই কারণে যেসব বিজ্ঞ সমালোচকরা কোহলির অবসর নিয়ে বড় বড় কথা বলেছিলেন তাঁরা এখন কী বলবেন?
চেনা মেজাজে দেখা গেল কেকেআরের বিপক্ষে বিরাট কোহলিকে ইডেনে। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে বিরাট ৩৬ বলে ৫৯ রান উপহার দেন। অপরাজিত থেকে কোহলি বেঙ্গালুরুকে জয় তুলে দিলেন। আর আইপিএল ইতিহাসে কেকেআরের বিপক্ষে তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১০০০ রান করার কৃতিত্ব দেখালেন। পাশাপাশি আইপিএল ক্রিকেটে চারটি দলের বিরুদ্ধে হাজার রান করা প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নাম লিখিয়ে ফেললেন কোহলি। যাঁরা ভেবেছিলেন কোহলি কোনও ভাবে স্পিনারদের বিপক্ষে স্বছন্দে খেলতে পারবেন না। তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন এবারে স্পিনারদের ঘুম কেড়ে নিতে জানেন কোহলি। তাই চাপে পড়ে গেলেন স্পিনাররা। স্পিনারদের কীভাবে ঘায়েল করা যাবে তার গোপন অস্ত্রটা ব্যবহার করলেন কোহলি।
সাধারণত পেসারদের বল যেভাবে পুল করে রান নিয়ে থাকেন তিনি, এবারে তা অবলীলায় স্পিনারদের মারতে দেখা গেল। যখন বিরাট কোহলি ও ফিল সল্ট মারমুখী ব্যাটিং করছেন, তখন সমাল দেওয়ার জন্যে কেকেআরের অধিনায়ককে অজিঙ্কা রাহানে নিয়ে আসেন বরুণ চক্রবর্তীকে। বরুণকে তোয়াক্কাই করলেন না বিরাট। কখনও লং-অফ বা কখনও লং-অনের উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিয়ে মাতিয়ে রাখেন বিরাট ইডেনকে।
তবে স্পিনারদের আরও চাপে পড়ে যাবেন বিরাটের স্লগ সুইপে। কোহলি তুরুপের তাস হিসেবে স্লগ সুইপ খেলে বরুণ চক্রবর্তী ও সুনীল নারাইনকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। আসলে স্লগ সুইপ দারুনভাবে চর্চা করেছেন বিরাট কোহলি বেশ কিছুদিন ধরে। কোহলির এই নতুন শট প্রতিপক্ষ দলের কাছে মাথা ব্যাথার কারণ হতে এমন ভাবনার কথা প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার শিখর ধাওয়ান। ধাওয়ান বলেছেন, অতীতে কোহলিকে এইভাবে খেলতে দেখা যায়নি। স্পিনারদের মোকাবিলা করতেন স্ট্রাইক রোটেট খেলতে। জুটিকে খেলতে ছেড়ে দিতেন। যা কোহলির খেলায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। তাই চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে কীভাবে জ্বলে ওঠেন বিরাট কোহলি সেটাই দেখবার বিষয়।