পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী
ভারতীয় ফুটবলের আইকন সুনীল ছেত্রী বিদায়ী ম্যাচের আগে অনুভব করছেন ভারতীয় ফুটবলকে কীভাবে গর্বের জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়৷ আসলে বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অংশ নেওয়াটাকে তিনি বিশেষভাবে দেখতে চাইছেন৷ তিনি সতীর্থ ফুটবলারদের কাছে অন্য বার্তা দিয়ে বলেছেন, এই ম্যাচটা জিততেই হবে, তাহলে পরবর্তী ধাপে খেলার জন্য পথটা অনেক মসৃণ হবে৷ বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হতেই সুনীল ছেত্রী নানাভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একের পর এক গোল করে গিয়েছেন৷ তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের ব্যারিকেডকে টপকে একের পর এক উত্তর দিয়ে চলেছেন৷ তিনি প্রথমেই জানিয়ে দিলেন, আমার কাছে অবসর নেওয়াটা বড় কথা নয়, এটা তো স্বাভাবিক৷ সবাইকে একটা সময় ছুটি নিতেই হবে আগামী দিনে প্রজন্মকে এগিয়ে আনার জন্য৷ তাই ভারত ও কুয়েতের ম্যাচটাই আমার কাছে টার্গেট৷ এই ম্যাচে গোল করতে হবে৷ গোল করতে না পারলেও গোল করাতে হবে৷ ভারত জিতবে এই আশা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে হবে৷ আমরা যখন ড্রেসিং রুমে নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা করি, তখন সবার কাছেই একটা কথা থাকে, ম্যাচ জিততে হবে৷ আমরা কখনওই তৃতীয় রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারিনি৷ এবারে সেটা বড় সুযোগ রয়েছে৷ তাই ম্যাচটা জেতার জন্য আমাদের মনোসংযোগ করতে হবে৷ খোলা মনে খেলতে হবে এবং গোলের সুযোগ পেলে গোল করতে হবে৷ তাই সর্বশক্তি দিয়ে ম্যাচটা জিততে আমরা মাঠে নামতে চাই৷ এবাদেও সুনীল বলেন, ম্যাচটা বেশ কঠিন৷ তবে, কলকাতার দর্শকরা যেভাবে দলকে অনুপ্রাণিত করে, সেটা কিন্ত্ত বড় হাতিয়ার হিসেবে দেখা দেবে৷ ম্যাচটা কলকাতায় হচ্ছে৷ এটাও কিন্ত্ত দারুণ ব্যাপার৷ তাই যুদ্ধ করে ম্যাচটা ছিনিয়ে নিতে আমরা সবাই তৈরি৷
তাহলে কি ম্যাচ জেতার পরে আপনি কি অবসর ভাঙবেন? একগাল হাসি হেসে সহজভাবে বললেন, একদমই না৷ মানসিক দিক দিয়ে আমি তৈরি হয়ে গিয়েছি৷ তখন সাধারণ দর্শক হিসেবে আমি মাঠে উপস্থিত থাকব৷ খেলা দেখব৷ এটা মনে রাখতে হবে খেলতে গেলে যে কোনও খেলোয়াড়কে একটা আগাম চিন্তাভাবনা করতে হয়৷ নিজেকে কীভাবে দর্শকদের সামনে উপহার দেবেন, সেটাও আগে থেকে তৈরি করে রাখতে হব৷
তারপরে রয়েছে তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা৷ অনেক ভাবনা-চিন্তা করে অবসর নেওয়ার কথা ভেবেছি৷ আর অবসর নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন৷ আমি ১৯ বছর ধরে ফুটবলের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছি৷ জানি না, ফুটবল মাঠে আমাকে সবাই কীভাবে নিয়েছে. তবে বলতে পারি, বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের যে আবেগ, তা কোনওদিনই ভুলে থাকা যাবে না৷ তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে আমিও বলতে পারি ফুটবলঅন্তপ্রাণ বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে আমিও একজন সেবক হতে পারি৷ অবসর নেওয়ার পরে কোচ হওয়ার কোনও ইচ্ছে আছে? তার উত্তরে আবার হাসির ছলে বললেন, এখনও কিছু ভেবে উঠতে পারিনি৷ এই মুহূর্তে কোনও ভাবনাই নেই৷ অন্তত কয়েকটা মাস পরিবারের সঙ্গে অতিবাহিত করতে চাই৷ আপনি কি বিদায়ী ম্যাচে আপনার পরিবারের প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যের কাছ থেকে টিপস নেবেন? এবারও সেই হাসির ছলে বললেন, আপনারাই তো আমার টিপস৷ তাহলে অন্য কথা ভাবার অবকাশ নেই৷ আবারও বলছি কুয়েতের ম্যাচটা আমরা জিততে চাই৷
সুনীল ছেত্রীর পাশে বসে ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিম্যাক হাতের মধ্যেই হয়তো অঙ্ক কষছিলেন কীভাবে কুয়েতের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটা করতে হবে৷ কিন্ত্ত সুনীলের কোচ হওয়ার কথা শুনে অবাক চোখে কোচ স্টিম্যাক বললেন, আমি এত তাড়াতাড়ি বুড়ো মানুষ হতে চাই না৷ সুনীলকে দেখেছিলাম পাঁচ বছর আগে তরুণ ফুটবলার হিসেবে৷ সুদর্শন চেহারা৷ কিন্ত্ত ওর চোখেমুখে একটা আলাদা দীপ্তি ছিল৷ আর এই পাঁচ বছরে সুনীলের বয়স বেড়ে গিয়েছে ১৫ বছর৷ এটা আমি মেনে নিতে পারছি না৷ অনেকটা স্বার্থপর হিসেবে ফুটবল মাঠ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে৷ তাই হয়তো কোনওদিনই কোচ হতে পারব না, আমি শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবি৷ অন্যকিছু ভাবতে রাজি নই৷ এটা মনে রাখতে হবে, কোচ হওয়াটা অত সহজ ব্যাপার নয়৷ এখন ভোরবেলায় অ্যালার্ম দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ার দিন নেই৷ মনে রাখতে হবে, ঘুমোবার আগে পর্যন্ত দলের জন্য ভাবতে হয়৷ ম্যাচ কীভাবে খেলতে হবে, দল কীভাবে সাজাতে হবে, এইসব চিন্তাভাবনাই বড় করে দেখা দেয়৷ এখন ফুটবলের ধারাপাতটাই বদলে গিয়েছে৷ প্রতিটা মুহূর্তকে নিয়েই চিন্তা করতে হয়৷
কোচ ইগর স্টিম্যাক বলেন, কুয়েত ম্যাচটা আমাদের কাছে ভাইটাল৷ প্রতিপক্ষ দলের বেশ কয়েকজন নামি খেলোয়াড় রয়েছেন৷ তাঁরাও লড়াই করতে পিছুপা হবেন না৷ রক্ষণভাগকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে৷ তৃতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ যখন রয়েছে, তখন সেরা খেলাটাই খেলতে হবে৷ অন্যদিকে কুয়েতের কোচ ও অধিনায়ক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত ঘরের মাঠে খেলবে৷ তারাও চেষ্টা করবে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে৷ ভারতীয় দলে বেশ কয়েকজন ভালো ফুটবলার রয়েছেন৷ এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে৷ কিন্ত্ত বুধবার কলকাতা পৌঁছনোর পরে অনুশীলনে নিজেদের তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তবে খেলাটা উচ্চমার্গে পৌঁছবে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই৷
সুনীল ছেত্রীর বিদায়ী ম্যাচের টিকিট নিয়ে বেশ হাহাকার আছে৷ সবাই খুব কাছ থেকে দেখতে চাইছেন বলে বেশি টাকা দামের টিকিটও পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে৷ আইএফএ দফতরে প্রচুর ফুটবলপ্রেমীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে৷ সবারই একটা কথা, টিকিট হবে? হঠাৎই টিকিটের চাহিদা এইভাবে বেড়ে যাওয়াতে আইএফএ’র কর্মকর্তারা চিন্তায় পড়ে গেছেন৷ আইএফএ’র পক্ষ থেকে সুনীল ছেত্রীকে বিশেষ সম্মান জানানো হবে, তারও প্রস্ত্ততি পর্ব সেরে ফেলা হয়েছে৷ আসলে সবাই চাইছেন খুব কাছ থেকে সুনীলের বিদায়ী ম্যাচটা উপভোগ করতে৷
ছবি– মউল মণ্ডল