• facebook
  • twitter
Sunday, 5 January, 2025

দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় ভারতের স্কোরবোর্ড উজ্জ্বল হল না

অল্প সময়ের মধ্যেই তা হারিয়ে যায়। রবীন্দ্র জাদেজা মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লু হয়ে ড্রেসিং রুমে সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এগিয়ে যান।

ফাইল চিত্র

প্রথম টেস্টের মতোই সিডনিতে শেষ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামলেন যশপ্রীত বুমরা। রোহিত শর্মার কাছে আগেই খবর ছিল, অধিনায়কের ব্যাটনটা তাঁর হাত থেকে তুলে দেওয়া হবে বুমরার কাছে। স্বাভাবিকভাবেই রোহিত নিজেই প্রথম একাদশ থেকে সরে দাঁড়ালেন। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতীয় দলের ছবিটা কিন্তু বদলালো না। ভারতীয় দল প্রথমে ব্যাট করতে নেমে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিল। দলের ওপেনার হিসেবে মাঠে নামলেন যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। ধৈর্য ধরে রাখতে পারলেন না। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া দলের বোলারদের কাছে খুব তাড়াতাড়ি শিকার হলেন তাঁরা। আশা করা গিয়েছিল লোকেশ রাহুল ও যশস্বী জয়সওয়ালের ব্যাট থেকে বড় রান আসবে। কিন্তু ভারতীয় দলে সেই ব্যর্থতাই দেখতে পাওয়া গেল। মাত্র ১১ রানের মাথায় ভারতের প্রথম উইকেটটি হারাতে হয়।

লোকেশ রাহুল মাত্র ৪ রান করে মিচেল স্টার্কের বলে ক্যাচ তুলে দেন স্যাম কনস্টাসের হাতে। তখন থেকেই ভারতীয় শিবিরে ধস নামতে থাকে। ভারতের দ্বিতীয় উইকেটটি পরে ১৭ রানের মাথায়। যশস্বী জয়সওয়াল ১০ রান করে ওয়েবস্টারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন স্কট বোলান্ডের বলে। দুই ওপেনার আউট হওয়াতে ভারতীয় শিবিরে হতাশার ছবিটা বড় করে দেখা দেয়। আর সেই কারণেই ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে যায় মাত্র ১৮৫ রানে। ভাবতেও অবাক লাগে, বিরাট কোহলি ও নীতিশ রেড্ডি বা ঋষভ পন্থের কাছ থেকে যে রান আশা করা গিয়েছিল, সেখানেও হোঁচট খেতে হয়েছে। ভারতীয় দলের প্রথম ইনিংসে রান সংখ্যাকে তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের একটি উইকেট পড়ে যায় ৯ রানের মাথায়। দিনের শেষ বলে অস্ট্রেলিয়ার উসমান খাওয়াজা ২ রান করে বুমরার বলে লোকেশ রাহুলের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান।

ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা কেন সচেতনভাবে ব্যাট করতে পারছেন না, তা নিয়ে সমীক্ষা করা উচিত। কী কারণে ভারতীয় শিবিরে ব্যর্থতা বড় করে দেখা দিচ্ছে, তা নিয়ে ভাবতে হবে কোচ ও নির্বাচকদের। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান থাকতেও স্কোরবোর্ডে দেখার মতো রান আসছে না। বিরাট কোহলি দলে থাকলেও, ভরসা হিসেবে তাঁকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি সফরে বিরাটের ব্যাট থেকে একটা শতরান এলেও ধারাবাহিকতা তাঁর মধ্যে নেই। বরঞ্চ সবাইকে তিনি হতাশ করে চলেছেন। যেমন ভারতীয় দলের রোহিত শর্মা কোনওভাবেই নিজেকে উজাড় করে নিতে পারেননি। যার ফলে তাঁর ব্যাট কথাই বলতে পারেনি। সেইভাবে রোহিত শর্মাকে হিটম্যান বলে যে আখ্যা দেওয়া হয়েছিল, তার কোনও হদিশ খুঁজে পাওয়া গেল না। হয়তো সেই কারণেই অধিনায়কের পদ থেকে সাময়িক বিশ্রাম দিয়ে যশপ্রীত বুমরাকে আবার দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারতীয় দলে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারতীয় দলের যে অবস্থা, তা কোনওভাবেই ভালো বলা যাবে না। শুভমন গিলও সেইভাবে রান করতে পারেননি। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ২০ রান। নাথান লিওনের বলে স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিং রুমে চলে যান। তার আগে চতুর্থ উইকেটের জুটিতে বিরাট কোহলির সঙ্গে উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থ কিছুটা সময় বেশ জমে গিয়েছিলেন।

কিন্তু বিরাট কোহলি স্কট বোলান্ডের একটি উইকেটের বাইরে বল খেলতে গিয়ে ওয়েবস্টারের হাতে বন্দি হয়ে যান। কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১৭ রান। ৭২ রানের মধ্যেই ভারতের চারটি উইকেট পড়ে যায়। ঋষভের সঙ্গে জুটি বাঁধতে মাঠে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। জাদেজাকে অনেক সময় দেখা গিয়েছে দলের খারাপ অবস্থাকে পরিবর্তন করতে তাঁর ব্যাট ঝলসে উঠেছে। যখন রবীন্দ্র জাদেজা হাত খুলে মারার চেষ্টা করেছেন, তখনই ঋষভ পন্থ আউট। ঋষভের ব্যাট থেকে এসেছে ৪০ রান। স্কট বোলান্ডের বলে ঋষভ ধরা পড়েন প্যাট কামিন্সের হাতে। পন্থ তিনটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা মেরেছেন। নীতিশ রেড্ডি মাঠে আসতেই শূন্য হাতে ফিরে যান। স্কট বোলান্ডের হাতে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দেন স্টিভ স্মিথের হাতে। ভারত আবার বেকায়দায় পড়ে যায়। রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর সপ্তম উইকেট জুটিতে ভালো খেলার চেষ্টা করতে থাকেন।

কিন্তু তা অল্প সময়ের মধ্যেই তা হারিয়ে যায়। রবীন্দ্র জাদেজা মিচেল স্টার্কের বলে এলবিডব্লু হয়ে ড্রেসিং রুমে সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এগিয়ে যান। জাদেজা করেছেন ২৬ রান। অনেকেই আবাব ভেবেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ভালো জুটি বাঁধতে পারবেন। কিন্তু সেখানেও হতাশার ছবি দেখা গেল। ১৪৮ রানের মাথায় ওয়াশিংটন সুন্দর ১৪ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে অ্যালেক্স ক্যারির হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যাট হাতে প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়ান। মাঠে আসেন যশপ্রীত বুমরা। ভালোই খেলছিলেন অধিনায়ক। বুমরার ব্যাট থেকে ২২ রান এসেছে। কিন্তু তার আগেই প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ আউট হয়ে যান ৩ রান করে। মিচেল স্টার্কের বলে স্যাম কনস্টাসের হাতে বল তুলে দেন। যশপ্রীত বুমরা ভেবেছিলেন, আরও কিছুক্ষণ সময় যদি উইকেটে থাকতে পারতেন, তাহলে ভারতীয় স্কোরবোর্ড আরেকটু ভালো জায়গায় পৌঁছত। প্যাট কামিন্সের একটা হালকা চালের বলে খেলতে গিয়ে যশপ্রীত বুমরা মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় দলের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১৮৫ রানে। নট আউট থাকেন মহম্মদ সিরাজ ৩ রান করে। আসলে এই টেস্টটার গুরুত্ব একেবারে অন্যরকম। ভারতীয় দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। অস্ট্রেলিয়াকে না হারাতে পারলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার যোগ্যতায় পৌঁছনো কঠিন হয়ে যাবে। আবার অস্ট্রেলিয়াও চিন্তা করছে, ভারতীয় দলকে হারিয়ে সিরিজটা তাদের দখলে রাখতে। সেই কারণেই ভারত ও অস্ট্রেলিয়া শেষ টেস্ট ম্যাচের রঙ কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে, তা নিয়ে আগাম কোনও ধারণা প্রকাশ করা সম্ভব নয়।