কিউয়িদের কাছে পরপর দু’টি টেস্টে লজ্জার হার ভারতের

নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ ১১৩ রানে জিতেছে। ছবি: এএনএই

পুণে— কী হল ভারতীয় ক্রিকেট দলের? এমন লজ্জার দিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে হবে, এটা কি ভাবা যায়? আবার হার! ঘরের মাঠে পরপর দুটো টেস্টে ভারত হেরে গেল নিউজিল্যান্ডের কাছে। নিউজিল্যান্ডের হুঙ্কারে রোহিত ব্রিগেড যেন গর্তে লুকিয়ে গেল। এই হারের ফলে আগামী টেস্ট বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার পথকে কঠিন করে ফেললেন রোহিতরা। আগামী ছ’টি টেস্টের মধ্যে ভারতকে পাঁচটি ম্যাচে জিততেই হবে। তা না হলে কোনওভাবেই খেলার পথ পাকা হবে না। আর একটি ম্যাচে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। সেই কারণেই ভারতীয় দলের সমর্থকদের আগামী দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। নিউজিল্যান্ডের কাছে পরপর দু’টি টেস্টে হারের ফলে চাপে পড়ে গেল ভারত। ইতিমধ্যেই নিউজিল্যান্ড সিরিজটা তাদের দখলে রাখার ছাড়পত্রটা হাতে তুলে নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্ট আগামী ১ নভেম্বর থেকে।

নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৫৯ রানে ইনিংস শেষ করার পরে ভারতীয় দল প্রথম ইনিংসে তার জবাবে মাত্র ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায়। অর্থাৎ ১০৩ রানে পিছিয়ে পড়ে প্রথম ইনিংসে। শুক্রবার নিউজিল্যান্ড ৩০১ রানে এগিয়ে থাকে। শনিবার শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ড আক্রমণাত্মক ভূমিকায় খেলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ২৫৫ রানে। নিউজিল্যান্ড ৩৫৮ রানে এগিয়ে থাকে। অর্থাৎ ভারতীয় দলকে জিততে গেলে ৩৫৯ রানের দরকার ছিল। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর আগেই ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস তাসের ঘরের মতো ভাঙতে থাকে। ভারত ২৪৫ রান করে দ্বিতীয় ইনিংসের যবানিকা টানে। ভারত হেরে গেল ১১৩ রানে। ১২ বছর পর ঘরের মাঠে শুধু হার নয়, সিরিজ হাতছাড়া করতে হল ভারতকে। যেভাবে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা নিউজিল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য বোলার মিচেল স্যান্টনারের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন, তা ভাবা যায় না। কিছুদিন আগেও প্রত্যেকে গর্ব করে বলতেন, ভারতের ব্যাটসম্যানরা যে কোনও প্রথম সারির দেশকে বোকা বানিয়ে দিতে পারে। কিন্তু উল্টো ছবিটাই দেখতে পাওয়া গেল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে ভারতের। একের পর এক উইকেট তুলে নিলেন স্যান্টনার। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৬ জন ব্যাটসম্যানকে খুব তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দেন। আবার একজনকে রান আউট করে দিয়েছেন তিনি। নিঃসন্দেহে ম্যাচের সেরা তিনি, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। খেলোয়াড়দের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে ঋষভ পন্থ রান আউট হয়ে যান। ঋষভকে দেখা গেল ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে ফেরত যাচ্ছেন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কোনও সময়ের জন্যই বড় রান করতে পারেননি। এই অভাবটা ভারতীয় দলে এখন প্রকট হচ্ছে। ভারতের ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও রোহিত শর্মা মাঠে নামলেও বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি।

রোহিত মাত্র ৮ রান করে বোল্ড আউট হয়ে যান স্যান্টনারের বলে। রোহিত যে রান পাচ্ছেন না, তা বলাই বাহুল্য। হয়তো মানসিক দিক দিয়ে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আবার শুভমন গিল একটু ধরে খেলার চেষ্টা করলেও সেখানেও তথৈবচ অবস্থা। শুভমন সেই স্যান্টনারের বলেই আউট হয়ে গেলেন ২৩ রানের মাথায়। আর বিরাট নিজেও হয়তো ভাবছেন, কিছুদিনের জন্য তাঁর বিশ্রাম নেওয়া উচিত। বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে মাত্র ১৭ রান এসেছে। তিনিও স্যান্টনারের শিকার হয়েছেন। একমাত্র যশস্বী জয়সওয়াল ভারতের স্কোরবোর্ডকে ভালো জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭৭ রান। তিনি খেলেছেন ৬৫টি বল। অনেকটা একদিনের ক্রিকেটের মতো তাঁর আগ্রাসী ভূমিকাকে প্রত্যক্ষ করতে পারলেন গ্যালারিতে হাজির থাকা দর্শকরা। ওয়াশিংটন সুন্দরের ব্যাট থেকে আশা করা গিয়েছিল, কিছু রান আসবে। তিনিও কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারলেন না। তিনি ২১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। অবশ্য এই উইকেটটা পেয়েছেন গ্লেন ফিলিপস। তবে রবীন্দ্র জাদেজা বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে থেকে ৪২ রান উপহার দিয়েছেন ভারতকে। তারপরে অনেকেই আশা করেছিলেন, রবীন্দ্র জাদেজা যেভাবে ব্যাট করছিলেন, তাতে আরও কিছু রান আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু আজাজ প্যাটেলের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন টিম সাউথির হাতে। আকাশদীপ ব্যাট করতে এসেই আউট হয়ে যান। তবে, তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৮ রান।


প্রথম ইনিংসে সরফরাজ খানের ব্যাট থেকে ভালো রান আসেনি। তেমনই দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি মাত্র ৯ রান করেন। বলতে দ্বিধা নেই, ভারতের অবস্থা এখন যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখান থেকে ফিরে আসতে গেলে, মানসিক দিক দিয়ে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশকে ওয়াইটওয়াশ করার পরে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, সেই আত্মবিশ্বাসে যে আঘাত এল, তা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা বেশ কষ্টকর। এর পরেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়া সফর। খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে। সেখানে ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ভারতীয় দলের উদ্দেশ্যে হুঙ্কার দিতে শুরু করেছেন। বলছেন, সবুজ উইকেট তৈরি করা হবে ভারতীয় খেলোয়াড়দের জন্য। এখন দেখতে হবে, আগামী দিনে ভারত কীভাবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারে ক্রিকেট মাঠে।