আগেই জানা গিয়েছে, এখানে প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন না রোহিত শর্মা। তারপর থেকেই জল্পনা তৈরি হয়েছিল অধিনায়কের ব্যাটনটা কার হাতে তুলে দেওয়া হবে। বেশ কয়েকটি নাম ঘোরাফেরা করছিল ভারতীয় শিবিরে। তবে সহ-অধিনায়ক যশপ্রীত বুমরাই দলকে নেতৃত্ব দেবেন, এমন ধারণা প্রায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর তারপরেই ভারতীয় শিবিরে চোট-আঘাত নিয়ে কোচ গৌতম গম্ভীর চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। ইতিমধ্যেই লোকেশ রাহুল চোট সারিয়ে আবার অনুশীলনে নেমে পড়েছেন। এটা অবশ্যই ভালো বার্তা। আবার শুভমন গিলকে নিয়ে চিন্তা দীর্ঘ হচ্ছে। তাঁর আঙুলের চোট কোনওভাবেই প্রথম টেস্টের আগে ঠিক হবে না। তাই শুভমন গিল বাদের তালিকাতেই থাকবেন, তা নিশ্চিত। পাশাপাশি, ভারতের নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার বিরাট কোহলি অনুশীলনে অত্যন্ত সিরিয়াস। যার ফলে কিছুটা নির্ভরতা বেড়েছে ভারতীয় শিবিরে।
র্পাথের অপ্টাস স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার থেকে অনুশীলন শুরু করেছে ভারতীয় দল। প্রথমেই দেখা গিয়েছে ফিল্ডিংয়ে জোর দিতে। বিশেষ করে স্লিপ ফিল্ডিং। অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে স্লিপে অনেক বেশি ক্যাচ যায়। তাই স্লিপে যাঁরা থাকেন তাঁদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হয়। এই ক্ষেত্রে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছেন না কোচ গৌতম গম্ভীর।
স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারদের দেখে প্রথম একাদশে কারা খেলবেন তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। চার জনকে সারা ক্ষণ দেখা গিয়েছে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ক্যাচ অনুশীলন করতে। তাঁরা হলেন, বিরাট কোহলি, যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুল ও দেবদত্ত পড়িক্কল। তাঁরা বাদে কখনও সরফরাজ় খান, কখনও ধ্রুব জুরেলকে দেখা গিয়েছে সেখানে। ফিল্ডারদের দিকে নজর রেখেছিলেন দলের ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপ। পরে বেশ কিছু ক্ষণ ফুটবল খেলতে দেখা যায় কোহলিদের।
ফিল্ডিংয়ের পরে ব্যাটিং অনুশীলন করে ভারতীয় দল। অপ্টাস স্টেডিয়ামের বাইরে সবুজ উইকেটে ব্যাট করতে নামেন ক্রিকেটাররা। প্রথমেই নেটে যান লোকেশ রাহুল ও যশস্বী জয়সওয়াল। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়ার দিকে নজর দেন তাঁরা। তিন ও চার নম্বরে দেখা যায় পড়িক্কল ও কোহলিকে। একটু পিছনের লেংথের বল বেশি খেলেন তাঁরা। ডিফেন্সের পাশাপাশি কাট, পুল খেলতেও দেখা যায় তাঁদের। পন্থের পরে ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নামেন জুরেল। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন তিনি। ব্যাট করতে দেখা যায় রবীন্দ্র জাডেজাকেও।
অনুশীলন থেকে বোঝা যাচ্ছে, পার্থে যশস্বীর সঙ্গে ওপেন করতে পারেন লোকেশ রাহুল। তিন নম্বরে দেবদত্ত পড়িক্কলের খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তাহলে বাংলার অভিমন্যু ঈশ্বরণের অভিষেক না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাহুল ওপেন করলে মিডল অর্ডারে একটি জায়গা ফাঁকা হবে। বিরাট ও পন্থ ছাড়া আর এক জন ব্যাটারকে খেলাতে হবে। সেই জায়গার জন্য লড়াই হচ্ছে সরফরাজ় ও জুরেলের মধ্যে। অনুশীলন ম্যাচে জুরেল ভাল খেলেছেন। প্রয়োজনে উইকেটের পিছনেও দাঁড়াতে পারেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মিডল অর্ডারে সরফরাজ খেলেছেন। তাই তাঁকেও দেখা যেতে পারে। অনুশীলনে কনুইয়ে চোট পেয়েছিলেন সরফরাজ়। তাই হয়তো এই সেশনে অনুশীলন করেননি তিনি।
দলের বোলাররাও অনুশীলন সেরেছেন। বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এই ম্যাচে অধিনায়ক যশপ্রীত বুমরা। তাই সতীর্থ মহম্মদ সিরাজ ও আকাশ দীপের সঙ্গে বেশি কিছুক্ষণ কথা বলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেখানে প্রধান কোচ গম্ভীর ও বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলও ছিলেন। ভারত তিন পেসার খেলালে এই তিন জনের খেলার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি চার পেসার খেলায় তাহলে বসতে হতে পারে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। চতুর্থ পেসার হিসাবে এগিয়ে রয়েছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ। চমক হিসাবে কেকেআরের হর্ষিত রানাকেও খেলাতে চেষ্টা করতে পারেন গম্ভীর।
২২ নভেম্বর থেকে পার্থে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠতে হলে পাঁচ টেস্টের এই সিরিজ় জিততে হবে ভারতকে। তবে এ বার ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ কঠিন। ঘরের মাঠে নিউজ়িল্যান্ডের কাছে চুনকাম হওয়ার ধাক্কা সামলে নামবেন কোহলিরা। ভারতীয় দলের কাছে অস্ট্রেলিয়া সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে গেলে সিরিজে চারটি ম্যাচ ভারতকে জেতা ছাড়া আর অন্য কোনও ভাবনা নেই।