চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে আত্মবিশ্বাসী ভারত। প্রথম ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার খেলতে নামছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। রোহিত শর্মা ব্রিগেড এই মুহূর্তে যে কোনও প্রতিপক্ষ দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। আবার বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে জেতার জন্য মরিয়া। যতই বাংলাদেশ হুঙ্কার ছুড়ুক না কেন, সেই হুঙ্কারকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ভারতীয় দলও প্রস্তুত। সেই কারণেই ভারত ও বাংলাদেশের রণংদেহী মনোভাব মাঠে দেখা যাবে। হয়তো এই খেলার চরিত্র এমন জায়গায় পৌঁছতে পারে, যা নিয়ে রহস্য উপন্যাস লেখা যেতে পারে। অধীর আগ্রহে ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় রয়েছেন এই খেলার ফলাফলের দিকে। ভারতীয় দল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে সাফল্য পেয়েছে, তা যদি ধরে রাখতে পারে, তাহলে জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে ভারতীয় দল গঠন করা হয়েছে। যে দলে বিরাট কোহলির মতো বড় মাপের ক্রিকেটার থাকেন, সেই দলের ভরসাই শেষ কথা বলে। আবার হিটম্যান রোহিত শর্মাকে দুরন্ত ফর্মে দেখার আশায় দর্শকরা মাঠে আসবে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ একদিনের ম্যাচে দারুণ শতরান উপহার দিয়েছেন রোহিত শর্মা।
রোহিত সেকথা মনে করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেরা খেলা উপহার দেওয়ার জন্য তৈরি রয়েছেন। রোহিত ও কোহলির পাশে শ্রেয়স আইয়ার, লোকেশ রাহুলের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছেন। শ্রেয়স মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে খেলার ধরনই বদলে দিতে জানেন। তাই শ্রেয়সকে নিয়ে অবশ্যই বড় ভাবনা থাকবে। লোকেশ রাহুল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খুব যে নজরে এসেছেন, তা নয়, কিন্তু উইকেটরক্ষক হিসেবে অনেককেই ছাপিয়ে গেছেন এই বয়সেই। হয়তো এমন হতে পারে, ভারতীয় দলে ব্যাটসম্যান হিসেবে ঋষভকে খেলানো হতে পারে। ঋষভ দীর্ঘদিন উইকেটরক্ষক হিসেবে হাতে গ্লাভস পরছেন না। কিন্তু কোচ গৌতম গম্ভীর ও প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বিনিময় হয় দু’জনের মধ্যে। আগরকর ঋষভ পন্থকে উইকেট রক্ষক হিসেবে দেখতে চাইলেও কোচ গৌতম গম্ভীর মেনে নিতে পারেননি। হয়তো ঋষভ পন্থকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে উইকেটরক্ষক হিসেবে দেখতে পাওয়া যাবে না। লোকেশের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।
আসলে অভিজ্ঞতা রাহুলের বড় হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, শুভমন গিল ও ওয়াশিংটন সুন্দর যদি উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ চাপে পড়ে যাবে। শুভমনের ব্যাটে রান আছে এবং ওয়াশিংটনকে অলরাউন্ডার হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তবুও প্রত্যাশা অনুযায়ী হার্দিক পাণ্ডিয়াকে ব্যবহার করা হবে বাংলাদেশের উইকেট ভাঙার জন্য। আবার অক্ষর প্যাটেলও রয়েছেন। সঙ্গে মহম্মদ শামি নিজেদের প্রকাশ করতে পারবেন কিনা, সেটাও দেখার বিষয়। মহম্মদ শামি কিছুদিন আগে চোট থেকে মুক্তি পেয়ে মাঠে ফিরেছেন। তবে এখনও শামি নিজেকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না। তবে তাঁর চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই। শামি যদি ঠিকমতো লেনথে বল করতে পারেন, তাহলে বেশি উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলে নতুন সংযোজন বরুণ চক্রবর্তী। বরুণ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত বোলিং করেছেন। কিন্তু দুবাইয়ের মাঠে বরুণ কী করবেন, সেটাও দেখার বিষয়। মনে রাখতে হবে, বরুণ যদি সফল হন, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরবর্তী খেলাগুলিতে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। ভারতীয় দলে রয়েছেন হর্ষিত রানা ও আর্শদীপ সিংয়ের মতো বোলাররা। তাঁরা কীভাবে দলকে এগিয়ে রাখবেন, তার জন্য আরও ভালো খেলা খেলতে হবে। কিছুদিন চোটের কারণে কুলদীপ যাদব মাঠের বাইরে ছিলেন। কুলদীপ আবার দলে ফিরেছেন। সেই কারণে বলতে দ্বিধা নেই, কুলদীপ নিজের আধিপত্যকে প্রকাশ করার জন্য বড় ভূমিকা নেবেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশের শক্তির থেকে ভারতীয় দল অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।
অপরদিকে ভারতের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে বাংলাদেশ তৈরি রয়েছে। বিশেষ করে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত থেকে শুরু করে তানজিদ হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তাসকিন আহমেদরা লড়াইয়ে প্রধান অস্ত্র হতে পারেন বলে অনেকেই বলছেন। দলে জায়গা পেয়েছেন বেশ কিছুদিন বাদে সৌম্য সরকার। একটা সময় এই সৌম্য বাংলাদেশের হয়ে দারুণ ব্যাট করতেন। এখন কী অবস্থায় রয়েছেন, সেটাই দেখার বিষয়। মেহেদি হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমান ও তৌহিদ হৃদয়রা জয়ের মানসিকতা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন।
ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা যে ধরনের ব্যাট করেন এবং আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামেন, সেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা লড়াইয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারবেন কিনা, সন্দেহ আছে। তবে, মুস্তাফিজুর রহমানের ব্যাটে ভালো রান আছে। তিনি সবসময় আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে থাকেন। আবার বোলিংয়েও নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ভালোবাসেন। সেই কারণেই রোহিত বনাম মুস্তাফিজুরের একটা লড়াই থাকবে ক্রিকেটে। তেমনই আবার কোহলিকে চাপে রাখার জন্য তাসকিন আহমেদকে বল তুলে দেবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। ডানহাতি এই পেসার অনেক ক্ষেত্রেই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে জানেন। হার্দিক পাণ্ডিয়ার সঙ্গে সমান পাল্লা দিয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ নায়ক হতে পারেন কিনা, সেটা দেখার বিষয়। আবার শামি বনাম সৌম্যর লড়াই থাকবে। বাংলাদেশের ওপেনার হিসেবে সৌম্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে শামির সামনে। সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, ভারত-বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
তবে এই ম্যাচে ভিলেন হতে পারে বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে ভালো বৃষ্টি হচ্ছে এই শহরে। রোদের দেখা নেই। মেঘলা আকাশে ভরা সারাদিন। বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে আবহাওয়া অফিস থেকে। বৃষ্টি হলে এই ম্যাচের ফলাফল কোনদিকে যাবে, তা স্পষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনও হতে পারে, সময় কমে গেলে ওভারও কমে যাবে। এমনও হতে পারে, কমপক্ষে ২০ ওভারে খেলে দুই দলকে লড়াই করতে হবে।