অস্ট্রেলিয়ার কাছে দ্বিতীয় দিনে ব্যাকফুটে চলে গেল ভারত

দ্বিতীয় দিনে ভারতের বিরুদ্ধে সাফল্যের মুহূর্তে প্যাট কামিন্স।

বর্ডার-গাভাসকার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাকফুটে রোহিত ব্রিগেড। দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত ২৯ রানে পিছিয়ে আছে। ভারত প্রথম ইনিংসে ১৮০ রান করেছিল। তার জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৭ রানে সবাই আউট হয়ে যান। অর্থাৎ ১৫৭ রানে এগিয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় দল দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে দ্বিতীয় দিনে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান করেছে। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় দলকে যেভাবে একের পর এক উইকেট খোয়াতে হয়েছে, ঠিক দ্বিতীয় ইনিংসেও একইভাবে ভারতকে চাপে রেখে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা উইকেট তুলে নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার টিম হেড দুরন্ত ব্যাট করলেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৪০ রান। তিনি ঝড়ের গতিতে রান করেছেন। ১৪১ বলে ১৪০ রান করেন তিনি। তার মধ্যে ১৭টি চার ও চারটি ছক্কাও রয়েছে। লাবুসেন অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডকে উজ্জ্বল করেন। তিনি ৬৪ রান করেন। অবশ্য তিনি খেলেছেন ১২৬টি বল। সেই হিসেবে অবশ্যই এই দুই ব্যাটসম্যান যেভাবে ভারতীয় বোলারদের মোকাবিলা করেছে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ট্র্যাভিস হেড যখনই উইকেটে এসেছেন, তখনই বুঝতে পেরেছেন, কী ছন্দে খেলতে পারলে ভারতীয় দলকে কোণঠাসা করা যেতে পারে। তাই ভারতীয় বোলারদের শুধু মোকাবিলা করেছেন, তাই নয়, সারা মাঠ জুড়ে বল পাঠিয়েছেন সীমানার বাইরে।

যদি হেডকে প্রথম থেকেই চাপের মধ্যে ভারতীয় বোলাররা রাখতে পারতেন, তাহলে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যেতে পারত না। পঞ্চম উইকেট জুটিতে লাবুসেন ও মিচেল মার্শ জুটি যেভাবে একের পর এক রান করে গেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই জুটিতে তাঁরা ৮০ রান যোগ করেন। নাথান ম্যাক্স সুইনে ৩৯ রান যোগ করেছেন স্কোরবোর্ডে। তিনি ১০৯টি বল খেলেছেন। প্রথম ইনিংসের মতো ভারতীয় বোলারদের মধ্যে যশপ্রীত বুমরা বিশেষ নজর কেড়েছেন। তিনি চারটি উইকেট পেয়েছেন ৬১ রানের বিনিময়ে। পাশাপাশি, মহম্মদ সিরাজ এদিন ভালোই বল করলেন। তিনিও চারটি উইকেট পেয়েছেন। রান দিয়েছেন ৯৮। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন নীতিশ রেড্ডি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কাছ থেকে আরও ভালো বল আশা করা গিয়েছিল। কিন্তু তিনি সেইভাবে দাপট দেখাতে পারলেন না। হর্ষিত রানা ১৬ ওভার বল করেছেন কিন্তু একটি উইকেটও পাননি।

শনিবার অস্ট্রেলিয়া দল প্রথম থেকেই ঝোড়ো ইনিংস খেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভারতীয় বোলারদের নিখুঁত বোলিংয়ের কাছে লাবুসেন ও ট্রাভিস হেড ছাড়া সেইভাবে দাঁত ফোটাতে পারেননি অন্য কেউ। দলের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স মাত্র ১২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত গেছেন। আবার মিচেল স্টার্কের ব্যাট থেকেএসেছে মাত্র ১৮ রান। স্টিভ স্মিথ মাত্র ২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া দলের প্রথম ইনিংস শেষ হয় মাত্র ৩৩৭ রানে। এই রানের অঙ্ক দেখলে ভারতীয় দলকে অবশ্যই সচেতন হওয়া উচিত ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নামার আগে। কিন্তু সেই জায়গায় পৌঁছতে পারল না ভারতীয় দল।


ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও গোড়াপত্তন করতে আসেন যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। ভারতের প্রথম উইকেটটি পড়ে মাত্র ১২ রানের মাথায়। লোকেশ রাহুল মাত্র ৭ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে ক্যাচ তুলে দেন অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। দ্বিতীয় উইকেটে জয়সওয়ালের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শুভমন গিল। দ্বিতীয় জুটি ভালোই খেলছিল, কিন্তু উইকেটের বাইরে একটি বল মারতে গিয়ে যশস্বী স্কট বোলান্ডের বলে সেই ক্যারির হাতে বল তুলে দেন। যশস্বী ১৪ রান করে ড্রেসিংরুমের দিকে পা বাড়ান। অবশ্য ১৪ রানের মধ্যে তাঁর চারটি বাউন্ডারি রয়েছে। আশা করা গিয়েছিল, হয়তো দ্বিতীয় ইনিংসে বিরাট কোহলির কাছ থেকে বড় রানের ব্যাট দেখতে পাওয়া যাবে। কোহলি এবারও হতাশ করলেন। মাত্র ১১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। স্কট বোলান্ডের বলে সেই ক্যারির হাতেই ক্যাচ তুলে দেন কোহলি। ভারতীয় দলে তখন মাত্র তিন উইকেট হারিয়ে ৬৬ রান। চতুর্থ উইকেটের জুটিতে শুভমনের সঙ্গে ব্যাট করতে আসেন ঋষভ পন্থ।

ঋষভ ধীরেসুস্থে ব্যাট করতে থাকেন। এমনকি দিনের শেষে তিনি ২৮ রান করে নট আউট রয়েছেন। শুভমন ২৮ রানে মিচেল স্টার্কের বলে সরাসরি বোল্ড আউট হয়ে যান। শুভমন ৩০টি বল খেলেছেন এই রান সংগ্রহ করতে গিয়ে। মেরেছেন তিনটি বাউন্ডারি। ঋষভ পন্থের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে অধিনায়ক রোহিত শর্মা যোগ দেন। সবাই ভেবেছিলেন, রোহিত শর্মার ব্যাট এবার কথা বলবে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা বড় হতেই পারে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা সার্থক রূপ পেল না। বেশ কিছুদিন ধরেই রোহিত শর্মা রানের মধ্যেই নেই। মানসিক দিক দিয়ে তিনি কিছুটা হতাশ। অধিনায়কের উইকেটটা তুলে নিলেন প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক সেই প্যাট কামিন্স। রোহিতকে বোল্ড আউট করলেন কামিন্স। রোহিতের ব্যাটে তখন মাত্র ৬ রান। ১০৫ রানে ভারতীয় দলের পঞ্চম উইকেটটি পড়ে। নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে নামেন নীতিশ রেড্ডি। অপর প্রান্তে ঋষভ পন্থ। রেড্ডি ১৫ রানে ক্রিজে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও বোলান্ড দু’টি করে উইকেট পেয়েছেন। আর একটি উইকেট পান মিচেল স্টার্ক।

এখন দেখার বিষয় রবিবার দ্বিতীয় দিনে ভারতীয় দল বড় রানের অঙ্কের স্কোর বোর্ড তৈরি করতে পারেন কিনা। যদি ঋষভ ও নীতিশ রেড্ডিরা মুন্সিয়ানার পরিচয় দেন, সেক্ষেত্রে ভারতীয় দল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারবে অস্ট্রেলিয়া দলকে। তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় দল বেশ কোণঠাসা। এখনও তিনদিন খেলা বাকি। সেই কারণে ভারতীয় দলকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি, অস্ট্রেলিয়া দলের বোলারদের সমীহ করে খেলতে হবে। তা না হলে, বিপদ ঘনীভূত হবে ভারতীয় দলে। দিন-রাতের ম্যাচে সবসময়ই চাপের মধ্যে থাকে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। পরিসংখ্যানে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্সরা নিশ্চয়ই পরিকল্পনামাফিক খেলবেন ভারতের বিরুদ্ধে, তা নতুন করে বলার কোনও কারণ নেই। প্রথম টেস্টে ভারতীয় দল যেভাবে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে, তার মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করবে কামিন্স ব্রিগেড। এখন দেখার বিষয় খেলার মোড় কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায় অ্যাডিলেডের মাঠে।