প্রথম টেস্টে বেঙ্গালুরুর মাঠ লজ্জার হারে রোহিত ব্রিগেড মুখ লুকিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর শপথে নিউজিল্যান্ডের কাছে দ্বিতীয় দিনের শেষে ব্যাকফুটে চলে গেল ভারতীয় ক্রিকেট দল। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের স্পিনারদের সঙ্গেও মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হল অধিনায়ক রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে শুভমন গিল, সরফরাজ খান ও ঋষভ পন্থরা। সেইভাবে কেউই মুখ তুলে দাঁড়াতে পারলেন না নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সামনে। দ্বিতীয় দিনের খেলার শেষে ভারতীয় দলকে প্রায় কোণঠাসা করে দিয়ে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান তুলে নিয়েছে। আর নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের ২৫৯ রানের জবাবে ভারতীয় দল গুটিয়ে গেল মাত্র ১৫৬ রানে। ভারতের দুর্বল ব্যাটিং আবার প্রমাণ করল নিউজিল্যান্ডের সাহসের সামনে কিছুতেই বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারছে না। বর্ডার ও গাভাসকার ট্রফির আগে ভারতের এই খেলা নিশ্চয়ই ভাবাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কী খেলা খেলবে, তা নিয়ে ভারতের নির্বাচকরা সমস্যায় পড়ে গেছেন। এমনকি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে দলের দায়িত্বে রাখা হবে কিনা, আবার এও ভাবা হচ্ছে, বিরাট কোহলিদের ব্যর্থতা তাঁদেরও প্রথম একাদশে নাম বাছাই করা হবে কিনা, সন্দেহ ক্রমেই বড় করে দেখা দিচ্ছে।
ঘরের মাঠে টম লাথামের কৌশলের কাছে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা যেভাবে পরাস্ত হচ্ছেন, তাতে বলা যায়, কোচ গৌতম গম্ভীরকে নিয়েও প্রশ্ন উঠবে? ভারতের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা যে খেলা খেলছেন, তাতে আগামী দিনে ভারতের দুর্দশারই কথা বলবে। তাই দেখা গেল, শুক্রবার খেলার দ্বিতীয় দিনে ভারত খেলা শুরু করতেই একের পর এক উইকেট নষ্ট করেছে। প্রথমেই উইকেট হারাতে হয় শুভমন গিলের। যে শুভমনকে নিয়ে অনেকে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, তাঁরাও কিন্তু হতাশ। শুভমনের ব্যাট থেকে ৩০ রান এলেও সেই ছন্দে তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়নি। প্রথম টেস্টে সরফরাজ খান দুরন্ত ব্যাটিং করেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ১৫০ রান। তবুও তাঁকে দ্বিতীয় টেস্টে সেইভাবে দেখতে পাওয়া গেল না। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১১ রান। তাই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কাছে অন্য বার্তা পৌঁছেছে। ৭০ রানের মাথায় ভারতের চতুর্থ উইকেট হারাতে হয়। আউট হন যশস্বী জয়সওয়াল। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৩০ রান। যখন এই অবস্থায় ভারত দাঁড়িয়ে আছে, তখনও কিন্তু সতর্ক হননি পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা।
ঋষভ পন্থ মাঠে এলেও এই ব্যর্থতা ছুটি নেয়নি। ঋষভ পন্থ ধীর গতিতে ব্যাট করেন। তিনি ১৮ রান করে আউট হয়ে যান। শেষের দিকে রবীন্দ্র জাদেজা কিছুটা হাল ধরেছিলেন। তিনি দলের সবচেয়ে বেশি রান উপহার দিয়েছেন। রবীন্দ্র জাদেজার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ রান। তার মধ্যে রয়েছে তিনটি বাউন্ডারি ও দু’টি ছক্কা। আকাশদীপকে দলে আনা হলেও কিন্তু সেইভাবে তাঁকে দেখতে পাওয়া যায়নি। তিনি মাত্র ৬ রান করেন। সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, ভারতের ক্রিকেটাররা কখনওই সতর্ক হয়ে খেলার চেষ্টা করেননি। যার ফলে নিউজিল্যান্ডের বোলার মিচেল স্যান্টনার দাপট দেখিয়ে ভারতের দুর্গে যেভাবে হানা দিয়েছেন, তাতে একের পর এক উইকেট ভেঙে পড়েছে। তিনিও সাতটি উইকেট নিজের হাতে মুঠোয় নিয়ে বলে দিতে পারলেন, এই মাটিতে ওয়াশিংটন সুন্দর যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, তা থেকে আমিও দূরে নই। মাত্র ৫৩ রান দিয়ে ভারতের বাঘা বাঘা ক্রিকেটারদের প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে দিয়েছেন স্যান্টনার। ভারত ১৫৬ রানে প্রথম ইনিংসের স্কোরবোর্ড থমকে যায়। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে এগিয়ে থাকে। অর্থাৎ নিউজিল্যান্ড এগিয়ে থেকেই দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে।
নিউজিল্যান্ড এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে চড়া মেজাজে। টম লাথাম ও ডেভন কনওয়ে ওপেন করতে আসেন। কনওয়ে ১৭ রান করে আউট হয়ে যান। ওয়াশিংটন সুন্দর এলবিডব্লু কনওয়েকে ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দেন। লাথামের ব্যাট ভারতের বোলারদের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে, লাথামের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে উইল ইয়ং বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। তিনি করেছেন ২৩ রান। লাথামের সঙ্গে যোগ দেন রাচিন রবীন্দ্র। তবে রাচিন প্রথম ইনিংসের মতো নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। রাচিন ৯ রান করে আউট হয়ে যান। ড্যারি মিচেল ১৮ রান করে আউট হয়ে যান। অধিনায়ক লাথাম ৮৬ রানে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে বোল্ড আউট হয়ে যান। তিনি ১৩৩টি বল খেলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ১০টি বাউন্ডারি। স্বাভাবিকভাবেই লাথামের আগ্রাসী ভূমিকাকে প্রশংসা করতেই হবে। তিনি যেভাবে একের পর এক রান তুলেছেন তাঁর সতীর্থদের নিয়ে, তা ভাবা যায় না। শেষ পর্যন্ত দিনের শেষে ৫ উইকেটে ১৯৮ রান করে নিউিজল্যান্ড। ব্যাট করছেন গ্লেন ফিলিপস ৯ রানে এবং উইকেটরক্ষক ব্লান ডেল ৩০ রানে। এখন দেখার বিষয়, তৃতীয় দিনে নিউজিল্যান্ড কত বেশি রান করতে পারে। তার উপরই নির্ভর করবে ভারতের ভাগ্য।