আবার বৃষ্টি। এবার তৃতীয় দিনে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে ৪০৫ রান নিয়ে খেলতে নেমে ৪৪৫ রান করে ইনিংস শেষ করে। তার জবাবে ভারতীয় ক্রিকেট দল খেলতে নেমে সেই হতাশার ছবি। ভারত ইতিমধ্যেই ৪টি উইকেট হারিয়ে ফেলেছে মাত্র ৫১ রানের মধ্যেই। তারপরেই বৃষ্টি আসে। সেই বৃষ্টিতেই তৃতীয় দিনের খেলা সেখানেই থেমে গেল। তারপরে আর কোনও বল গড়ায়নি গাব্বার উইকেটে। এখন যা পরিস্থিতি, যদি কোনওরকম অঘটন না ঘটে, তাহলে খেলা ড্রয়ের পথে এগিয়ে চলেছে, তা বলতেই হবে। ভারত পিছিয়ে রয়েছে ৩৯৪ রানে। চতুর্থ দিনে যদি বৃষ্টি না হয়, সেক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতে পারে অস্ট্রেলিয়া। উইকেটে সুইং ধরছে। তাই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পক্ষে তা মোকাবিলা করা বেশ কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
সেক্ষেত্রে দেখা যায় বেশকিছু রানে ভারতীয় দল পিছিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া খুব তাড়াতাড়ি কিছু রান তুলে নিয়ে ডিক্লেয়ার করে দিতে পারে। তাহলে লড়াইটা জমে যাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা যদি ঠিকমতো ব্যাট করতে না পারে, তাহলে হারের সম্ভাবনা উঁকি দেবে। অত্যন্ত সাবধানী মনোভাব নিয়ে ব্যাটসম্যানদের খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়া যদি রান তুলতে পারে এই উইকেটে, তাহলে ভারত কেন পিছিয়ে পড়ছে? তখন কি প্রশ্ন উঠতে পারে না, অধিনায়ক রোহিত শর্মা টসে জিতে এই পরিস্থিতিতে কেন প্রথমেই ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন? রোহিতের ভুলে ভারতীয় দল বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে, এটা অনেকেই মতামত প্রকাশ করবেন। সেদিকে তাকিয়ে বলতে পারা যায়, ভারত যদি সাহসী ভূমিকা নিয়ে না খেলতে পারে, তাহলে তৃতীয় টেস্টও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
অস্ট্রেলিয়া দলের গতদিনের অপরাজিত উইকেটরক্ষক ক্যারি ও মিচেল স্টার্ক সোমবার শুরুতেই ব্যাট করতে নেমেছিলেন। ক্যারি অত্যন্ত সচেতনভাবে খেলতে থাকেন। একটা সময় মনে হয়েছিল, হয়তো তিনি শতরানের দিকেই বড় পদক্ষেপ রাখছেন। এবারে এই টেস্টে প্রথম ইনিংসেই জোড়া শতরান করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ও স্টিভ স্মিথ। সেই কারণেই তৃতীয় শতরানের দিকে পা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক ক্যারি। অষ্টম উইকেটটি পড়ে ৪২৩ রানের মাথায়। আউট হন মিচেল স্টার্ক। তিনি যশপ্রীত বুমরার বলে ঋষভ পন্থের বলে ১৮ রানের মাথায় ক্যাচ তুলে দেন। ক্যারির সঙ্গে লিওন জুটি বাঁধেন নবম উইকেটে। নাথান লিওন মাত্র ২ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। এই উইকেটটি নেন সরাসরি বোল্ড আউট করে মহম্মদ সিরাজ। উইকেটরক্ষক ক্যারি ৭০ রানে আউট হন আকাশদীপের বলে। ক্যারির ব্যাটে বল ঘুরে যায় শুভমন গিলের হাতে। ৪৪৫ রানে ইনিংস শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের যশপ্রীত বুমরা ৬টি উইকেট নিয়ে শিরোনামে উঠে আসেন। মহম্মদ সিরাজ দু’টি উইকেট পেয়েছেন। বাংলার আকাশদীপ একটি উইকেট যেমন পেয়েছেন, তেমনই নীতিশ রেড্ডিও একটি উইকেট পান। তবে রবীন্দ্র জাদেজার বলে কেউই আউট হননি।
বড় রানের সামনে পড়ে যায় ভারতীয় দল। ভারতীয় দলে গোড়াপত্তন করতে আসেন যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে লোকেশ রাহুল। যশস্বী খুব তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান। তিনি করেন মাত্র ৪ রান। মিচেল স্টার্কের বলে মিচেল মার্শের হাতে তিনি ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। তৃতীয় উইকেটের জুটিতে রাহুলের সঙ্গে মাঠে খেলতে নামেন শুভমন গিল। শুভমন গিল ব্যর্থ। তাঁর ব্যাট থেকে মাত্র একটি রান এসেছে। এই উইকেটটিও পান মিচেল স্টার্ক। সেই মিচেল মার্শের হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন শুভমন। ভারতের সবেচয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান তৃতীয় উইকেটে খেলতে আসেন বিরাট কোহলি। অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে লোকেশ রাহুল। বিরাট এবারেও সেই অর্থে কোনও রানই পেলেন না।
বিরাটের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৩ রান। হেজেলউডের বলে কোহলি ক্যাচ তুলে দেন অ্যালেক্স ক্যারির হাতে। চতুর্থ উইকেটে খেলতে নামেন ঋষভ পন্থ। ঋষভ সুবিধা করতে পারলেন না উইকেটে। ঋষভ প্যাট কামিন্সের বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা শুরু করেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৯ রান। এবারে পঞ্চম উইকেট জুটিতে রাহুলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে অঝোরে বৃষ্টি নামে। তারপরই খেলা বন্ধ হয়ে যায়। সেই মুহূর্তে রাহুল ৩৩ রানে ও রোহিত শর্মা শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন। পরবর্তী সময়ে আম্পায়াররা মাঠ প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে দেখেন আউটফিল্ড খেলার উপযোগী নয়। বেশ কয়েকবার মাঠে গিয়ে উইকেট প্রত্যক্ষ করার পর কোনও সিদ্ধান্তই তাঁরা নিতে পারেননি। যার ফলে খেলা চালু করা সম্ভব হয়নি। গাব্বার মাঠে প্রথমদিনের খেলা বৃষ্টির জন্য যেমন থমকে গিয়েছিল, তেমনই তৃতীয় দিনেও বৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করল। এককথায় বলা যায়, ভারতীয় দল ধুঁকছে। বৃষ্টি ভারতকে হারের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। অর্থাৎ ভারতীয় দলের কাছে বৃষ্টি ত্রাতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এবারে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বোলার হিসেবে সবার উপরে ভারতের যশপ্রীত বুমরা জায়গা করে নিয়েছেন। ১৮টি উইকেট দখল করেছেন ভারতের সহঅধিনায়ক যশপ্রীত বুমরা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রথম টেডস্টে বুমরার নেতৃত্বে ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিল। বুমরার এই সাফল্যের বিষয়ে অনেকেই বলছেন, তাঁর একাগ্রতা এবং মনোসংযোগ বড় হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছে। বুমরার মতে, ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা যদি সাহসী ভূমিকা না নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়তে যায়, তাহলে অসুবিধা হবেই। সেখানে জয়ের আলো দেখা কঠিন হয়ে যাবে। এটা ঠিক প্রতিটি টেস্টে একজনই ভালো খেলবেন, তাই নয়। এটাও মনে রাখতে হবে ক্রিকেট সম্মিলিত প্রয়াস। প্রত্যেকেরই একটা ভূমিকা থাকে। সেই ভূমিকা ঠিকমতো পালন করতে পারলে ভারত ভালো জায়গায় পৌঁছবে বলে বিশ্বাস।
যশপ্রীত বুমরা যদি প্রতিপক্ষ শিবিরে আঘাত হানতে পারেন, তাহলে কেন মহম্মদ সিরাজ, রবীন্দ্র জাদেজা, আকাশদীপ ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা সেই জায়গায় পৌঁছতে পারছেন না? এটাও কিন্তু সমীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে, ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তার প্রভাব পড়ছে মাঠে খেলতে নেমে।