শেষ পর্যন্ত ফলো-অন থেকে বেঁচে গেল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স যেভাবে একের পর এক উইকেট ফেলে দিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছিলেন ভারতীয় শিবিরে, তা থেকে মুক্তি দিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা ও বাংলার আকাশদীপ। দিনের শেষে ভারতীয় দল ৯ উইকেটে ২৫২ রান করে। এখনও পর্যন্ত ভারতীয় দল ১৯৩ রানে পিছিয়ে রয়েছে চতুর্থ দিনের শেষে। ফল-অন বাঁচলেও ভারতীয় দল তৃতীয় টেস্টের শেষ দিনে খেলতে নেমে কী অবস্থায় পৌঁছয়, তার উপরেই নির্ভর করছে খেলার ফলাফলে। তবে ধরে নেওয়া যেতেই পারে এবারের টেস্টটি ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছে। তার প্রধান কারণ, যত তাড়াতাড়ি ভারতীয় শিবিরে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা আঘাত হানুক না কেন, দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের খেলতে নামতে হবে। সেখানে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ ওভার না খেলতে পারলে অস্ট্রেলিয়া দান ছাড়তে পারবে না। তারপরে ভারতীয় দল খেলতে নেমে কী ভূমিকা নেয়, সেটাও দেখার বিষয়। তাই সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, এই টেস্ট ম্যাচ কোনও ভাবেই ফয়সালা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ড্র হলে ভারতীয় দলে অবশ্যই চিন্তা হবে। আগামী দুটো টেস্টে জিততে না পারলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার কোনও সুযোগ থাকবে না রোহিত ব্রিগেডের।
অস্ট্রেলিয়ার ৪৪৫ রানকে তাড়া করে ভারতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যানরা খুব তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। কোনওভাবেই বড় অঙ্কের রান করার ক্ষেত্রে লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজাকে ছাড়া আরও কারও নাম উল্লেখ করার মতো জায়গা নেই। রাহুল যখন শতরানের দিকে এগিয়ে চলেছেন, ঠিক সেই সময় নাথান লিয়নের একটা বাইরের বলে হুক করতে গিয়ে স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দেন রাহুল। ৮৪ রানের একটা ঝকঝকে ইনিংস উপহার দেন তিনি। তিনি ১৩৯টি বল খেলেছেন এই রান সংগ্রহের জন্য। আটটি বাউন্ডারি এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। আবার রবীন্দ্র জাদেজা যদি শক্ত হাতে ব্যাট করতে না পারতেন, তাহলে ভারতের করুণ অবস্থা হত। রবীন্দ্র জাদেজা একটা ভুল পদক্ষেপ নেওয়াতে ৭৭ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। মিচেল মার্সের হাতে ক্যাচ তুলে দেন প্যাট কামিন্সের বলে। তিনি ১২৩টি বল খেলেছেন এই রান করতে গিয়ে। সাতটি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা মেরেছেন।
রবীন্দ্র জাদেজা আউট হয়ে যাওয়ার পরে ভারতীয় শিবিরে খেলোয়াড়দের হৃদয় ঢিপঢিপ করছিল। হয়তো ফল-অনের মুখে পড়তে হবে ভারতীয় দলকে। শেষ পর্যন্ত কোনওক্রমে সেই জায়গা থেকে ভারতীয় শিবিরকে বাঁচালেন যশপ্রীত বুমরা ও আকাশদীপ। দু’জনেই এখন অপরাজিত রয়েছেন। প্যাট কামিন্সের বলে বাউন্ডারি মেরে আকাশদীপ ফল-অন বাঁচান। ভারতীয় দলের স্কোর বোর্ডে দিনের শেষে ৯ উইকেটে ২৫২ রান শোভা পাচ্ছে। আকাশদীপ ২৭ রানে ও যশপ্রীত বুমরা ১০ রানে অপরাজিত রয়েছেন। ভারতীয় শিবিরে সবচেয়ে বড় আঘাত হানেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তিনি চারজন খেলোয়াড়কে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। মিচেল স্টার্কও ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের ভয় দেখিয়েছেন। তিনি ৩টি উইকেট দখল করেছেন। আর একটি করে উইকেট পেয়েছেন হ্যাজেলউড ও নাথান লিয়ন। এই মুহূর্তে ভারতীয় শিবির এখনও ১৯৩ রানে পিছিয়ে রয়েছে। তাই পঞ্চম দিনে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে খেলতে হবে ভারতীয় দলকে। যদি এমন হয়, প্রথম ওভারেই ভারতীয় দলের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু অস্ট্রেলিয়া জেতার লক্ষ্যে একটা সুযোগ নিতে চাইবে। ভারতীয় দলের বোলারদেরও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কয়েক ওভার খেলা শেষে যদি ২৫০ রানের ব্যবধান তৈরি করে, তার জবাব দিতে ভারতীয় দল কঠিন জায়গায় পৌঁছে যাবে।
নিঃসন্দেহে বলা যায়, চতুর্থ দিনের প্রথম থেকেই দর্শকরা ঘুমপাড়ানি ক্রিকেট দেখেছেন। সেইভাবে রান করার মতো ভারতীয় ক্রিকেটাররা বিশেষ ভূমিকা নিতে পারেননি। বরঞ্চ অস্ট্রেলিার বোলাররা প্রথম থেকেই আক্রমণমুখী হয়ে বল করতে থাকেন। দিনের প্রথম বলটি করতে আসেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কামিন্সের বল খেলতে গিয়ে রাহুল সেকেন্ড স্লিপে স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্মিথ ওই ক্যাচটি নিজের দখলে রাখতে পারেননি। অর্থাৎ লোকেশ রাহুল জীবন পেয়ে যান। তখন লোকেশ ৩৩ রানে ব্যাট করছিলেন। প্রথম ক্যাচটি ফেলে দেওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে অস্বস্তি তৈরি হয়। অনেকেই ভাবতে পারেননি স্মিথ এইভাবে ক্যাচটি ফেলে দেবেন। আসলে সারা বিশ্বে বর্তমানে সেরা ফিল্ডারদের মধ্যে অন্যতম স্টিভ স্মিথ। তিনিই যদি এই ধরনের ক্যাচ মিস করেন, তাহলে খেলার ফলাফলের উপরে তার প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়। এখনও পর্যন্ত লোকেশ ৮টি শতরান করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তার মধ্যে একটি শতরান এসেছে ঘরের মাঠে। আর অন্য শতরানগুলি বিদেশের মাঠেই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৮৪ রানের মাথায় রাহুল সেই স্মিথের হাতেই ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। রাহুলের ক্যাচটি ধরে স্মিথ বুঝিয়ে দিলেন ভারতীয় দলের থেকে ফিল্ডিংয়ে অস্ট্রেলিয়া দল এগিয়ে রয়েছে।
অনেকে মনে করছেন রোহিত ব্রিগেডে ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সমস্যা রয়েছে। যার ফলে তারকা ব্যাটসম্যানরা সেইভাবে রান পাচ্ছেন না। হঠাৎই অধিনায়ক নিজেই তাঁর জায়গা পরিবর্তন করে খেলতে গিয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন। ব্যাটে তো রান আসছেই না, তার পরেও তিনি কেন ওপেনার হিসেবে মাঠে নামছেন না, সেই ব্যাখ্যও দিতে পারছেন না। তাহলে কি অন্য কোনও ধারাপাত তৈরি করতে চাইছেন তিনি? অনেকে ভাবছেন, অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে ভারতীয় দলের অধিনায়ক পরিবর্তন হবে।
সেক্ষেত্রে প্রথম নামটি উচ্চারিত হচ্ছে যশপ্রীত বুমরার। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ সফরে রোহিত শর্মা ব্যর্থ হয়েছেন। বাংলাদেশ সিরিজে চার ইনিংসে রোহিতের ব্যাট থেকে এসেছে মোট ৪২ রান। আর নিউজিল্যান্ডের সফরে ৬ ইনিংসে রোহিত করেছেন মোট ৯১ রান। অর্থাৎ তিনি কি আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছেন, এই প্রশ্নটা উঁকি দিচ্ছে। তিনি কেন ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নামছেন, তা নিজেও জানেন না। এখনও পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, ছ’নম্বরে ব্যাট করতে এসে তিনি কখনও ৩ বা ৬ রান করেছেন আর ব্রিসবেনের মাঠে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১০ রান। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে কোনওভাবেই রোহিত ওপেন করতে আসবেন না, তা ধরে নেওয়া যেতেই পারে।
ক্রিকেট সবসময় অনিশ্চয়তার খেলা। তা বুঝতে পারা গেল মঙ্গলবার ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার খেলার মধ্যে দিয়ে। যখন ভারতীয় দলকে হারানোর জন্য অস্ট্রেলিয়া দল আশায় এগিয়েছিলেন, তখনই ফল-অন বাঁচিয়ে দিয়েছেন যশপ্রীত বুমরা ও আকাশদীপ। কোনওক্রমে ভারতের মুখরক্ষা হল।