• facebook
  • twitter
Thursday, 19 December, 2024

গোলাপি বলে ভারত নিজেদের প্রকাশ করতে ব্যর্থ

প্রথম দিনে ১১টি উইকেট পড়ল অ্যাডিলেডের মাঠে

এডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলার একটি বিশেষ মুহূর্তে ভারতীয় দল।

অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচে সবসময়ই নানা ঘটনা ঘটে থাকে। তবে, পরিসংখ্যানের বিচারে বেশ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাই ভারত-অস্ট্রেলিয়ার লড়াই বলতেই মাঠের বাইরেও বাগযুদ্ধ। প্রথম টেস্ট ম্যাচে পার্থে মাঠে যেমন ভারতের যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্কের লড়াই দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার পেসারকে মন্থর বলে অভিভূত করেছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল। সেই মিচেল স্টার্কের বলেই দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল আউট হলেন। আর তখনই মিচেল স্টার্ক মনে মনে বলেছিলেন, সত্যিই কি আমি সেই মন্থর পেসার? তাই শুক্রবার দিন-রাতে দ্বিতীয় টেস্টম্যাচে শুরুতে ভারতের অঘটন দেখতে পাওয়া গেল। টসে জিতে ভারত ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর যশস্বী জয়সওয়াল ভারতের হয়ে খেলতে নেমেছিলেন অপর ওপেনার লোকেশ রাহুলকে নিয়ে। সেই মিচেল স্টার্ক আউট করে দিলেন যশস্বীকে শূন্য রানে।

স্টার্কের ১৪০.৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে আসা বল উইকেটের সামনে তাঁর পা খুঁজে নেয়। এলবিডব্লিউ হন যশস্বী। বলের সুইং বুঝতে পারেননি ভারতীয় ওপেনার। লেগ স্ট্যাম্পে ছিল বলটি। সেখান থেকে বলটি বাইরে না গিয়ে সোজা উইকেটের দিকে ঢোকে। সেটাই বুঝতে পারেননি যশস্বী। ভেবেছিলেন বলটি বাইরে যাবে। লাইন ফস্কে এলবিডব্লিউ হন তিনি। মাথা নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে যান মাঠ ছেড়ে। রিভিউও নেননি। অন্য দিকে, প্রথম বলে উইকেট পেয়ে উজ্জীবিত হন মিচেল স্টার্ক। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে প্রথম টেস্টে যশস্বীর ব্যাট থেকে ১৬১ রান এসেছিল। যখন তিনি ব্যাট করছিলেন, তখন বেশ কয়েকবার স্টার্কের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে কী যেন বলছিলেন। হয়তো তিনি বলতে চেষ্টা করেছিলেন, ‘এত আস্তে তুমি বল করছ কেন?’ তখন অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি মিচেল স্টার্ক। কিন্তু শুক্রবার প্রমাণ করে দিলেন মিচেল স্টার্ক যদি মন্থর গতিতেই বল করে থাকেন, তাহলে তাঁর বলেই প্যাভিলিয়নে ফেরত যেতে হল যশস্বী জয়সওয়ালকে। কিন্তু জানা যায়, স্টার্কের প্রথম বলে গতি ছিল ১৪০.৪ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।

ভারত এদিন প্রথম ইনিংসে সেইভাবে নজর কাড়তে পারেনি। ভারতের ইনিংস শেষ হয়ে যায় মাত্র ১৮০ রানে। তার জবাবে অস্ট্রেলিয়া দিনের শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান করেছে। অর্থাৎ তারা এখনও পর্যন্ত ৯৪ রানে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের হাতে এখনও ৯টি উইকেট রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তারা ভালো জায়গায় রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। যশস্বী আউট হয়ে যাওয়ার পরে লোকেশ রাহুলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শুভমন গিল। অধিনায়ক রোহিত শর্মা ওপেনার হিসেবে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সেই জায়গায় লোকেশ রাহুলকেই পাঠান। তার প্রধান কারণ হল পার্থের প্রথম টেস্টে ওপেনার জুটি যশস্বী ও রাহুল ভালো খেলার নিদর্শন রেখেছিলেন। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রাহুল ও শুভমন গিল ধীরে ধীরে ভালো জায়গায় এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু দলের রান যখন ৬৯, তখন রাহুল আউট হয়ে যান। রাহুল ৩৭ রান করেছেন ৬৪টি বল খেলে। তিনি মিচেল স্টার্কের বলে নাথানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। দ্বিতীয় উইকেটে শুভমন গিল ও বিরাট কোহলি খেলতে থাকেন। সবাই আশা করেছিলেন, বিরাট কোহলির কাছ থেকে একটা বড় অঙ্কের রান দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হল না। বিরাট ৭ রান করেই আউট হয়ে যান। কোহলির উইকেটটাও নেন মিচেল স্টার্ক। কোহলির যখন ৭ রান, তখন তিনি স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। দলের তখন মাত্র ৭৭ রান। শুভমনের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে আসেন ঋষভ পন্থ। শুভমন ধরেই খেলছিলেন, কিন্তু স্কট বোল্যান্ডের একটি বল বুঝতে না পেরে সরাসরি তাঁর পায়ে আঘাত করে। শুভমন এলবিডব্লু হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। শুভমন করেন ৩১ রান। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ঋষভের সঙ্গে ব্যাট করতে আসেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।

রোহিতও এদিন খেলতে পারলেন না। মাত্র ৩ রান করে তিনি স্কট ব্যাল্যান্ডের বলেই এলবিডব্লু হন। কিছুটা হতাশ মনেই মাঠ ছেড়ে চলে যান অধিনায়ক রোহিত। বেশ কিছুটা ভারতীয় শিবিরে ব্যাটিং বিপর্যয় দেখা যায়। এবার মাঠে আসেন নীতিশ রেড্ডি। নীতিশ ভারতীয় দলের স্কোরবোর্ডকে উজ্জ্বল করতে থাকেন। তারই মাঝে আউট হয়ে যান ঋষভ। ঋষভ ২১ রান করে প্যাট কামিন্সের বলে লাবু সেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান। নীতিশের ঙ্9গ সপ্ত উইকটে এবারে জুটি বাঁধেন রবিচন্দ্রহন অশ্বিন। অশ্বিন বেশ ভালোই খেলছিলেন। J এই জুটি ৩২ রান করে স্কোরবোর্ডের্। অশ্বিনের ব্যাট থেকেআসে ২২ রান। স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন নীতিশ রেড্ডি। অষ্টম উইকেটে নীতিশকে সহয়যাগিতা করার জন্যমাঠে আসেন হর্ষিত রানা। হর্ষিতের ব্যাট থেকে একটিও রান আসেনি। এই উইকেটটি তুলে নেন সেই মিচেল স্টার্ক। নবম উইকেটে জুটি বাঁধার জন্য মাঠে আসেন যশপ্রীত বুমরা। কিন্তু যশপ্রীতও কোনও রান করতে পারেননি। নীতিশ রেড্ডি ৪২ রান করে আউট হয়ে যান। মিচেল স্টার্কের বলে নীতিশ ট্রাভিস হেডের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। মহম্মদ সিরাজ ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ৮০ রানে। মিচেল স্টার্ক একাই আধ ডজন তুলে নেন ভারতীয় শিবির থেকে। তিনি ১৪.১ ওভার বল করে মাত্র ৪৮ রান দিয়েছেন। আর দু’টি করে উইকেট পেয়েছেন প্যাট কমিন্স ও স্কট বোল্যান্ড। ১৮০ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া খেলতে নেমে দিনের শেষে ১ উইকেটে ৮৬ রান করে। আউট হয়েছেন উসমান খাওজা। যশপ্রীত বুমরার বলে তিনি রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ তুলে দেন ১৩ রানের মাথায়। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে নাথান সুইনে ও লাবুশেন সচেতন ভূমিকা নিয়ে খেলতে থাকেন।

নাথান ৩৮ রানে ও লাবুশেন ২০ রানে আপরাজিত থাকেন। এখন দেখার বিষয় দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া দল বড় রানের অঙ্ক করতে পারে কিনা। এখনও তাঁরা ৯৪ রানে পিছিয়ে রয়েছে।সেই রানকে কীভাবেটপকে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে বড় রানের স্কোরবোর্ড করতে পারে কিনা, তার জন্যই মাঠে দর্শক ছুটে আসবেন।