নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে ভারতের কাছে অবশ্যই মর্যাদার লড়াই। কিন্তু প্রথম দিনেই দুই দলের ১৪ জন খেলোয়াড় আউট হয়ে গেলেন। প্রত্যাশামতো ওয়াংখেড়ের উইকেটে বল ঘুরবে, এটা জানাই ছিল। কিন্তু ওয়াশিংটন সুন্দর ও রবীন্দ্র জাদেজা যে কাজটা করেছিলেন ভারতের হয়ে, তা শুক্রবার প্রথম দিনে ব্যাটসম্যানরা সেইভাবে সফল হতে পারলেন না। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে ২৩৫ রানে। বেশ কিছুটা সুবিধাজনক পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে রোহিত শর্মা ব্রিগেড। অন্যান্য ম্যাচের সঙ্গে প্রথম দিনের এই খেলাকে কোনওভাবেই তুলনা করা যাবে না। তার প্রধান কারণ, রোহিত শর্মারা যখন নিউজিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রথম ইনিংসে খেলতে নামে, তখন অনেক আশাই সবার মনে কথা বলছিল। হয়তো এই ম্যাচটা ভারতের জন্য তোলা থাকবে। কিন্তু সেই ভাবনায় প্রথম দিনেই হতাশার ছবিটা দেখা দিয়েছে। তা না হলে ভারতের চারটি উইকেট পড়ে যায় দিনের শেষে মাত্র ৮৪ রানে। এককথায় বলা যায় চাপে পড়ে গেল ভারতীয় দল।
ভারতের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে ব্যাট করে ভারতকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এবারের সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই দুই ব্যাটসম্যান কোনওভাবেই শিরোনামে উঠে আসতে পারছেন না। আর এই না পারাটাই হয়তো অস্ট্রেলিয়া সফরে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। ধারাবাহিকভাবে তাঁদের ব্যর্থতা চোখে পড়ছে। যদি রোহিত শর্মা অধিনায়কের মেজাজটাকে ঠিকমতো মাঠে উপস্থাপনা করতে না পারেন, তাহলে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে ভারতকে প্রতিটি মুহূর্তে। হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন, ভারতীয় খেলোয়াড়রা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন একের পর এক ম্যাচ খেলে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, বোর্ড কর্মকর্তা ও নির্বাচকরা কেন রোহিত ও কোহলিকে বিশ্রাম দিলেন না। যখন ভারতীয় দলের এই দুই ব্যাটসম্যান অত্যন্ত ভরসা, তখন তাঁদের ব্যর্থতা অবশ্যই ভারতীয় দলের মনোবলকে দুর্বল করে দিতে পারে। তাই এখন থেকেই চিন্তা করতে হবে অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে দল গঠনে তাঁদের কীভাবে ব্যবহার করা যায়।
এদিন টসে জিতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম লাথাম ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভারতীয় বোলাররা প্রথম থেকেই আঘাত আনতে থাকে নিউজিল্যান্ড শিবিরে। যদি দরে হয়ে উইল ইয়ং ও ড্যারিল মিচেল শক্ত হাতে ব্যাট করতে না পারতেন, তাহলে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৩৫ রান করতেই পারত না। ইয়ং ও ড্যারিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৭১ ও ৮২ রান। আর অধিনায়ক লাথামের ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। নিউজিল্যান্ডকে কম রানের মধ্যে আটকিয়ে দেন ভারতের দুই স্পিনার ও রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর। তাঁদের ঘূর্ণি বলে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা খুব একটা আদায় করে উঠতে পারেননি। এমনকি দেখা গিয়েছে এই দুই বোলার স্ট্রাইক পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের চাপের মধ্যে রেখে দিয়েছেন। এমনকি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন কোনও উইকেট না পেলেও এদিন দারুণ বল করেছেন। জাদেজা, ওয়াশিংটন মিলে ৯টি উইকেট তুলে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের শিবির থেকে। ৬৫ রানে পাঁচটি উইকেট পেয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা আর ৮১ রানে চারটি উইকেট তুলে নিয়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তবে আটটি নো বল করেছেন এই দুই বোলার। ওপেনার ডেভন কনওয়েকে মাত্র চার রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান আকাশদীপ। বলতে দ্বিধা নেই, ধারাবাহিকভাবে একের পর এক উইকেট হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
প্রয়োজনীয় শক্ত জুটি তৈরি করতে পারেনি সফরকারী দলটি। কোনও সময়ের জন্যই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতীয় বোলাররা হালকা চালে খেলার কোনও চেষ্টাই করেননি। নিউজিল্যান্ড ২৩৫ রানে আটকে গেলেও, সেই সুবিধাটা তুলে নিতে পারল না রোহিত ব্রিগেড। ভারত চার উইকেট হারিয়ে দিনের শেষে ৮৪ রান করেছে। খুব তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফেরত গিয়েছেন রোহিত শর্মা। তিনি ১৮ রান করেছেন। যশস্বী জয়সওয়াল যেভাবে ব্যাট শুরু করেছিলেন, তাতে আশা করা গিয়েছিল হয়তো তাঁর কাছ থেকে ৫০ রান আসবেই। কিন্তু তা হল না। যশস্বী ৩০ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। যশস্বীকে আউট করেন আজাদ প্যাটেল। তিনি খেলেছেন ৫২টি বল, মেরেছেন চারটি চার। নৈশ প্রহরী হিসেবে মাঠে নামেন মহম্মদ সিরাজ। তিনি শূন্য রান করেই আউট হয়ে যান। আউট করেন আজাদ প্যাটেল। বিরাট কোহলি রান আউট হয়ে যান মাত্র চার রানে।
আসলে বিরাট কোহলি মানসিক দিক দিয়ে হয়তো পিছিয়ে রয়েছেন। তার ফলে প্রয়োজনীয় সময় তিনি কোনওভাবেই ঝলসে উঠতে পারছেন না। উইকেটে রয়েছেন শুভমন গিল ৩১ রানে আর উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থ ১ রানে ব্যাট করছেন। তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে ম্যাট হেনরির হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। সেই সময় তাড়াতাড়ি করে রান নিতে গিয়ে কোহলি আউট হয়ে যান। হেনরির শর্ট অন থেকে বল ছুড়ে দিয়ে উইকেট ভেঙে দেন। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দিনে এইভাবে ঝুঁকি নিয়ে খুচরো রান নেওয়ার কোনও প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সেটাই করলেন বিরাট কোহলি। প্রথম দিনে ভারতের বেহাল অবস্থাকে সামনে রেখে নিউজিল্যান্ডের বোলাররা অনেক বেশি কৌশলগতভাবে খেলার চেষ্টা করবেন। ৩৩ রানে দু’টি উইকেট নেন আজাদ প্যাটেল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, নিউজিল্যান্ড তাদের সবচেয়ে দুরন্ত বোলার স্যান্টনারকে বাদ দিয়েই দল গঠন করেছে। সেই সুযোগটাও ভারতীয় দল নিতে পারেনি। এখন ভারতকে একটা টেস্ট বাঁচানোর লড়াইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়েছে।