ভারতীয় ‘এ’ দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুরমুশ

ভারতীয় 'এ' দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার খেলার একটি বিশেষ মূহর্ত।

কী হল ভারতের! দেশের মাটিতে ভারতীয় দল হোয়াইট ওয়াশ হয় নিউজিল্যান্ডের কাছে। আর এবারে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে ভারতীয় ‘এ’ দল বেসরকারি টেস্ট ম্যাচে ০-২ ব্যবধানে সিরিজ হারালো অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের কাছে। আর কয়েকদিন বদেই অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হতে চলেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ। তার আগে এই বিপর্যয় অবশ্যই চিন্তায় ফেলেছে ভারতীয় ক্রিকেটারদের। লাল বলে খেলায় ভারত যে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে, তা খেলার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভারতীয় ‘এ’ দলের দৈন্যদশা দেখতে পাওয়া গেল।

নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের পর রোহিত, বিরাটদের পরিবর্ত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল ক্রিকেট মহলের একাংশে। কিন্তু অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সাই সুদর্শনদের পারফরম্যান্স এমনই যে আপাতত সেই আলোচনা বন্ধ রাখা যেতে পারে। কারা হতে পারেন রোহিত, কোহলিদের যোগ্য পরিবর্ত? ঋতুরাজের দলের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ। দ্বিতীয় বেসরকারি টেস্টেও ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ। বোলারেরা তা-ও কিছুটা লড়াই করলেন। ভারতীয় দলকে হারতে হল ৬ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে।

প্রথম বেসরকারি টেস্টে ৭ উইকেটে হেরেছিলেন ঋতুরাজেরা। পরিস্থিতি সামলাতে এবং আসন্ন বর্ডার-গাভাসর ট্রফির প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয় লোকেশ রাহুল এবং ধ্রুব জুরেলকে। মেলবোর্নের ২২ গজে দুই ব্যাটারের চার ইনিংসে মোট সংগ্রহ ১৬২ রান। যদিও তাতে অভিজ্ঞ রাহুলের অবদান ১৪। তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জুরেল দু’ইনিংসেই অর্ধশতরান করেছেন। তাঁর সংগ্রহ ১৪৮। ভারতের প্রথম একাদশে তাঁর সুযোগ পাওয়া আবার কঠিন। ঋষভ পন্থ ভাল ফর্মে রয়েছেন। তবে শুধু ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলতেই পারেন জুরেল। ভারত ‘এ’ দলের আর কোনও ব্যাটসম্যান ৫০ রানের ইনিংস খেলতে পারেননি। জুরেলের দু’ইনিংসের পর ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় ইনিংসে তনুশ কোটিয়ানের ৪৪। তিনি আবার প্রথম ইনিংসে করেছিলেন শূন্য।


ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২২৯ রান করার পর অস্ট্রেলিয়ার জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৬৮ রান। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করেছে তারা। স্যাম কোনস্টাসের অপরাজিত ৭৩ এবং বিউ ওয়েবস্টেরের অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংস জয় এনে দেয় আয়োজকদের। অথচ ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলীয়েরা। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণের তৈরি করে দেওয়া সুবিধা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ঋতুরাজেরা। বিপজ্জনক মনে হওয়া খলিল আহমেদকে ৪ ওভারের বেশি ব্যবহারই করলেন না অধিনায়ক! অথচ প্রভাব তৈরি করতে না পারা তানুশকে টানা বল করালেন ঋতুরাজ।

লাল বলের ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সমস্যা কী হচ্ছে, তা স্পষ্ট করে কেউই বলতে পারছেন না। ব্যাটসম্যানরা শট নির্বাচনে ভুল করছেন। ধৈর্য ধরে ব্যাট করার মানসিকতা দেখাতে পারছেন না। ভাল বল-রান করার বলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারছেন না। বোলারেরা পিচ কাজে লাগাতে পারছেন না। সঠিক লেংথ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। রোহিতের মতো ঋতুরাজের নেতৃত্বেও বিচক্ষণতার অভাব দেখা যাচ্ছে।
প্রথম বেসরকারি টেস্টের দু’ইনিংসে ভারতীয়েরা করেছিলেন যথাক্রমে ১০৭ এবং ৩১২ রান। দ্বিতীয় ম্যাচের দু’ইনিংসে সংগ্রহ ১৬১ এবং ২২৯। প্রথম ইনিংসের রান তুলে ২০ ওভারের ক্রিকেটও জেতা যায় না। আর মেলবোর্নের দ্বিতীয় ইনিংসের রান করে এক দিনের ক্রিকেট জেতা যায় না। বরং ম্যাকের দ্বিতীয় ইনিংসের রান কিছুটা ভদ্রস্থ। তবু লাল বলের ক্রিকেটের সঙ্গে মানানসই নয়। সেই ইনিংসও তৈরি হয়ে ছিল দুই ব্যাটসম্যানের জন্য সুদর্শনের ১০৩ এবং দেবদত্ত পাড়িক্কলের ৮৮ রানের সুবাদে। দু’টি ম্যাচ মিলিয়ে ভারতের চারটি ইনিংস বলার মতো। বোলারদের ক্ষেত্রেও ছবিটা খুব সুখকর নয়। মুকেশ কুমার এবং কৃষ্ণ ছাড়া কেউ ভরসা দিতে পারেননি সে ভাবে। যে সব তরুণ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ভালো খেলা আশা করা গিয়েছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই সেই অর্থে ব্যর্থ। তাই আগামী দিনে ভারতীয় দলে এঁদের মধ্যে কার জায়গা হবে, সে নিয়ে সন্দেহ আছে।