• facebook
  • twitter
Friday, 18 October, 2024

নতুন ছন্দে কলকাতা লিগে গোলের ছড়াছড়ি

রনজিৎ দাস কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে ইতিমধ্যে ৬৭ম‍্যাচে ১৯৯টা গোল হয়ে গেছে।২৫দিনে আপাতত এই ৬৭টা ম‍্যাচ হলো।আরও অর্ধেক ম‍্যাচে এই গোল সংখ্যা গতমরশুমের স‌ংখ‍্যাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।আধুনিক ফুটবলের ধারার সাথে কলকাতা ফুটবল ক্রমশঃ নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে।নিজেদের অনুকূলে বলের দখল রেখে খেলাকে নিয়ন্ত্রণ এনে অধিকাংশ টিম জয় ছিনিয়ে নিতে চাইছে।বলের দখল নিতে প্লেয়ারদের এখন আর অহেতুক ট‍্যাকেলও

রনজিৎ দাস

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে ইতিমধ্যে ৬৭ম‍্যাচে ১৯৯টা গোল হয়ে গেছে।২৫দিনে আপাতত এই ৬৭টা ম‍্যাচ হলো।আরও অর্ধেক ম‍্যাচে এই গোল সংখ্যা গতমরশুমের স‌ংখ‍্যাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।আধুনিক ফুটবলের ধারার সাথে কলকাতা ফুটবল ক্রমশঃ নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে।নিজেদের অনুকূলে বলের দখল রেখে খেলাকে নিয়ন্ত্রণ এনে অধিকাংশ টিম জয় ছিনিয়ে নিতে চাইছে।বলের দখল নিতে প্লেয়ারদের এখন আর অহেতুক ট‍্যাকেলও করতে দেখা যাচ্ছেনা। ফলে,ম‍্যাচে উভয়দলের গোল করার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে।

মানসিকতার পরিবর্তনের সাথে সাথে খেলার ছন্দে নতুনত্ব এসেছে।প্রতি ম‍্যাচেই প্লেয়াররা অনেক পাস খেলছে।শুধু তাই নয়,ভালো মানের পাস খেলার প্রবনতাও বেড়েছে।যদিওবা বিভিন্ন সময়ে অফসাইড নিয়মের পরিবর্তনের ফলে গোল করার সুযোগ বেড়েছে।কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের অধিকাংশ ম‍্যাচ এখন ঘেরা মাঠে ও স্টেডিয়ামে হয়।এবং আধুনিক ফুটবলের নিয়মের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতি ম‍্যাচেই মাঠের ধারে বলবয়েরা থাকে।এতে করে প্রতি ম‍্যাচেই খেলার সময় কম নষ্ট হচ্ছে।এখন প্রতি ম‍্যাচে ৫জন করে ফুটবলার পরিবর্তন করার সুযোগ আছে।

দুই দলের এইভাবে সবোর্চ্চ ১০জন ফুটবলার মাঠে নামার সুযোগ দেওয়ার সাথে সংগতি রেখে প্রতি ম‍্যাচের উভয়অর্ধেই খেলার সংযোযিত সময়ও রেড়েছে। মোদ্দাকথা প্রতি ম‍্যাচে খেলার সময় কম নষ্ট হচ্ছে।পাশাপাশি প্রত‍্যেক দলে এখন আক্রমণভাবে দক্ষ ফুটবলার থাকছে।বিপক্ষের রক্ষনভাগে একাধিক পাস খেলে গোলমুখ খুলে নিতে পারছে।সেক্ষেত্রে গোল করার প্রতি নিজেদের একাগ্রতা প্রমাণ হয়।কলকাতা লিগে এই মরশুমে অন্তত ৪জন ভূমিপুত্রদের খেলানোর নিয়ম করা হয়েছে।ভূমিপুত্ররাও তাদের গোল করার দক্ষতা প্রমাণ করে চলেছে।ইতিমধ্যে লিগের ১৯৯টা গোলের মধ্যে ১২৩টা গোল বাংলার ছেলেরাই করেছে।

অপরদিকে বলা যায়, এবারের কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে ২৬টা দল খেলছে।তিনপ্রধান ছাড়াও অন‍্যদলগুলোর মধ্যে একাধিক দল এবার ভালো বাজেটের টিম করেছে।ভালো খেলোয়াড়দের পাশাপাশি তারা অভিজ্ঞ লাইসেন্স প্রাপ্ত কোচ টিমে নিয়েছে।খেলোয়াড়দের ফিটনেস বাড়ানোর ক্ষেত্রে দক্ষ ট্রেনার টিমের সাথে থাকছে।

এবারের যে ৪টে নতুন দল লিগে প্রমোশন পেয়ে এসেছে,তাদের মধ্যে নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘ গ্রুপ-এ থেকে চ‍্যাম্পিয়নশীপের সুপার সিক্সের লড়াইয়ে আছে।নতুন দল হলেও ডায়মন্ড হারবার এফসি এবারও তাদের অধিকাংশ পুরানো ফুটবলার রেখে দেওয়ার পাশাপাশি ভালোমানের নতুন ফুটবলার সংযোজন করে শক্তিশালী দল গড়েছে।গ্রুপ-এতে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কলকাতা লিগের দল শক্তিশালী হয়নি।তাদের গতমরশুমের সবোর্চ্চ গোলদাতা দল ছেড়ে ইষ্টবেঙ্গল এফসিতে যোগদান করেছে।

তাছাড়া, মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এই মরশুমে আইএসএলে খেলবে,ফলে তারা কলকাতা লিগে তাদের রির্জাভ টিম খেলাচ্ছে।এই গ্রুপে সুপার সিক্সের জন‍্য ইউনাইটেড স্পোর্টস ও খিদিরপুর ক্লাবও লড়াই করছে।গতমরশুমে ভালো দল গড়ে কালিঘাট মিলন সংঘ লিগে ভালো খেললেও, এবার তারা এখনও প্রত‍্যাশাপূরণ করতে পারছেনা।সন্তোষ ট্রফিতে চ‍্যাম্পিয়ন আর্মি দল তাদের সেই দলের অধিকাংশ ফুটবলার নিয়ে খেললেও গ্রুপ-এতে তারা সঠিক টিম নামাতে পারছেনা।বিভিন্ন টুর্নামেন্টের সাথে কলকাতা লিগের খেলাতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড় খেলাতে হচ্ছে।ফলে কোনও ম‍্যাচে তার শক্তিশালী টিম নামাচ্ছে,আবার কোনও ম‍্যাচে খুবই দুর্বল টিম নামাতে বাধ‍্য হচ্ছে।প্রথমম‍্যাচে তারা মাত্র ১০জন ফুটবলার নিয়ে খেলতে নেমেছিল।এরিয়ান ও বিএসএস ক্লাব ভূমিপুত্রদের উপর নির্ভর করে টিম করেছে।সার্দান সমিতি টিমকেও সংগঠিত মনে হচ্ছেনা।গ্রুপ-এতে সুপার সিক্সে যাওয়ার লড়াইয়ের তুলনায় অধিকাংশ দলকে অবনমন বাঁচানোর লড়াই বেশি করতে হচ্ছে।এই গ্রুপে ৩৬ম‍্যাচে ১০১টা গোল হয়েছে।এরমধ্যে ভূমিপুত্রদের ৬৪টা গোল আছে।

পক্ষান্তরে গ্রুপ-বি থেকে চ‍্যাম্পিয়নশীপের সুপার সিক্সের যাওয়ার তীব্রলড়াই হচ্ছে।মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের মত নামী টিমকে প্রথম তিনম‍্যাচেই ৭পয়েন্ট নষ্ট করতে হয়েছে।মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস ভূমিপুত্রদের ঠিকমত ব‍্যবহার করতে পারছেনা।ইমামি ইষ্টবেঙ্গল এফসি ভূমিপুত্রদের নিয়ে এই গ্রুপে ভালো ফুটবল খেলছে।ভবানীপুর, পিয়ারলেস,কাষ্টমস, এসোস রেনবো ক্লাব এই গ্রুপে আপতত সুপার সিক্সের লড়াইয়ের পাশাপাশি বড়দলগুলোর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই গড়ে তুলছে।প্রমোশন পেয়ে প্রথমবার প্রিমিয়ারে খেলার সুযোগ পেয়ে কালিঘাট স্পোর্টস লাভার্স ভালো দল গড়েও সুপার সিক্সের যাওয়ার লড়াই থেকে পিছিয়ে পড়ছে।৫ম রাউন্ডের শেষে অবশ‍্য কলকাতা পুলিশ দল ১২পয়েন্ট পেয়ে লিগ টেবিলে প্রথম ৪দলের মধ্যে থেকে সবাইকে চমকে দিয়েছে।এবারই তারা প্রমোশন পেয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলছে।কিন্তু ইর্ষ্টান রেলওয়ে ও পুলিশ এসি দল এখন পর্যন্ত একটা জয় যেমন পায়নি,তেমনি একটা গোলও তারা বিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে করতে পারেনি।জর্জ টেলিগ্রাফ টিমের খেলায় ধারাবাহিকতা নেই।এই গ্রুপে আপাতত ৩১টা ম‍্যাচে ৯৮টা গোল হয়েছে।এরমধ্যে ভূমিপুত্রদের ৬০টা গোল আছে।

কলকাতা প্রিমিয়াম লিগে এত গোলের পাশাপাশি অধিকাংশ ম‍্যাচে কোনও না কোনও দলের জয় হয়েছে।এখন পর্যন্ত ৬৭টা ম‍্যাচের মধ্যে ৫৩টা ম‍্যাচের ফয়সালা হয়েছে।১৪টা ম‍্যাচ ড্র হয়েছে।এবং মাত্র ৭টা ম‍্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছে।

লিগে গ্রুপ-এতে ডায়মন্ড হারবার ও খিদিরপুর ক্লাব এবং গ্রুপ-বিতে ইমামি ইষ্টবেঙ্গল এফসি,ভবানীপুর স্পোর্টিং ক্লাব ও কলকাতা কাষ্টমস ক্লাব এখনও অপরাজিত আছে।অর্থাৎ ২৬দলের মধ্যে ২১দলকে কোনও না কোনও ম‍্যাচে পরাজিত হতে হয়েছে।কিন্তু ৬৭টা ম‍্যাচের মধ্যে ৫৩টা ম‍্যাচের জয় হলেও তারমধ্যে ২৫টা ম‍্যাচেরই নামমাত্র ১গোলের ব‍্যবধানে জয় এসেছে।অর্থাৎ প্রতি ম‍্যাচেই কঠিন লড়াই হচ্ছে।বড়দলকে নিজেদের মাঠে হারতে হয়েছে।

মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ঘরের মাঠে কালিঘাট মিলন সংঘ ও ইউনাইটেড স্পোর্টসের কাছে হেরেছে।এত কঠিন লড়াইয়ের মাঝেও কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের এত গোল হয়েছে।উল্লেখযোগ্যভাবে বাঙালি ছেলেরাই অধিকাংশ গোল করেছে।ভূমিপুত্রদের নূন্যতম ৪জনকে প্রতি ম‍্যাচে শেষমিনিট পর্যন্ত খেলানোর আইএফএর নিয়মের সুফল মিলছে।বাঙালি ছেলেরা দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।নতুন ছন্দে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ এবার জমজমাট।