আইপিএলে আজ মরুশহর কাঁপবে অভিজ্ঞ ও তরুণ সেনাপতির যুদ্ধে

বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার (Photo: AFP & Twitter/@IPL)

মেজাজটা আসল কথা। তা এখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও দিল্লি ক্যাপিটালসের তরুণ সেনাপতি শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটই পরিচয়। তাই সােমবার দুই নেতার চ্যালেঞ্জটা অন্যভাবে প্রকাশ পাবে বলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ভাবতে শুরু করেছেন।

বেঙ্গালুরু আর দিল্লির লড়াইটা হতে পারে এবারের আইপিএল ক্রিকেটের অবিশ্বাস্য। অভিজ্ঞতা দাপট দেখাবে না তারুণ্যের সংগ্রামী ভূমিকা প্রকাশ পাবে? তবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও দিল্লি ক্যাপিটালসের ক্রিকেট যুদ্ধটা উচ্চমার্গে পৌঁছে যাবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। দুই দলই তিনটে করে ম্যাচ জিতে রয়েছে। আর একটা করে হার। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে খেলােয়াড়রা বেশ টেনশানে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।

টসটা একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। গরম একটা অন্তরায়। প্রথমে যারা ব্যাট করার সুযােগ থাকবে, তারা বড় অঙ্কের রান তুলতে চাইবেন। আবার রান তাড়া করে জেতার মানসিকতা অন্য দলকে কীভাবে এগিয়ে রাখবে তার ভাবনাটা অঙ্ক কষে হবে। দুই দলের খেলােয়াড়রা এখন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।


তার প্রধান কারণ শ্রেয়াসের দিল্লি যেভাবে নাইট রাইডার্স কলকাতাকে পিছনে ফেলে আবার জয়ের সরণিতে ফিরে এলাে, সেটা এসেছে প্লাস পয়েন্ট। বিশেষ করে এবারের প্রতিযােগিতার সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক দিল্লির শ্রেয়াস আইয়ারের আগ্রাসী ভূমিকাকে তারিফ করতেই হবে। তার লড়াকু চরিত্র সতীর্থ খেলোয়াড়দের অনেকটা এগিয়ে রাখে।

আবার সেই বাবদ বাক্যটা কোহলির জন্যে প্রযােজ্য। সােনায় মরচে পড়ে না। সত্যি তাই। ঝলসে ওঠা কোহলির ব্যাট দুচোখ ভরে দেখা গেল রাজস্থান রয়্যালসের বিশেষ । রাজস্থানের বােলাররা হকচকিয়ে যান কোহলির রনংদেহি ব্যাট দেখে। ৫৩ বলে ৭২ রানের এক ইনিংস তিনি উপহার দিলেন। এই রান তােলার ফাঁকে সাতবার মাঠের বাইরে বল পাঠিয়েছেন।

তেমনি দুটো ছক্কা মারতে ভুল করেননি। থেকেছেন নট আউট, যা জয় তুলে আনতে কোহলির দুরন্ত ব্যাটিংয়ের পাশে দেবদত্ত পাড়িকলের দাপটে বেঙ্গালুরুকে কোনও কিছুই ভাবতে হয়নি। আবার যদি দিল্লি ক্যাপিটালসকে দেখতে হয়, সেখানে তখন ক্রিকেটের আগ্রাসী চরিত্র খেলার চেহারা বদলে দিয়েছে।

নাইট রাইডার্স কলকাতার মতােন দলকে কোনঠাসা করে দিতে অধিনায়ক শ্রেয়াসের বুদ্ধিমত্তাকে তারিফ করতে হবে। মাত্র ৩৮ বলে শ্রেয়াস ৮৮ রান করে বুঝিয়ে দিলেন চাপের কাছে হারিয়ে যাওয়া নয়। চ্যালেঞ্জকে মােকাবিলা করে জয়কে কীভাবে ছিনিয়ে আনতে হবে। তার ব্যাট থেকে ৬ টা ছক্কা আর ৭ টা চার এসেছে। শ্রেয়াসের পাশে পৃথ্বিশের ৬৬ রান দলের কাছে বড় মূলধন। সব মিলিয়ে বলা যায় মরু শহরের উত্তাপকে হয়তাে ছাপিয়ে যাবে ব্যাঙ্গালুরু ও দিল্লির অধিনায়কদের রাজকীয় মেজাজ।

বিরাট কোহলির কাছে জয়ের হ্যাটট্রিক করার সুযােগ। রােহিত শর্মার মুম্বই দলকে যেভাবে হারিয়েছে তা অভুতপূর্ব। সেই রুদ্ধশ্বাসের ম্যাচের পরে রাজস্থানের বিবাদের জয়টা কোহলিদের বড় প্রেরণা। এই দলে দেবদত্ত পাড়িকন, ডিভিলিয়ার্স, ফিঞ্চ ও ওয়াশিংটন সুন্দরের মতােন মারমুখী খেলােয়াড়রা রয়েছেন। ম্যাচের সেরা বােলার সুজবেন্দ্র চাহাল দিল্লির বিপক্ষে কীভাবে হাত ঘােরালেন, সেটা দেখবার বিষয়। চাহালের সঙ্গে বিপক্ষ শিবিরে আঘাত হানবার জন্যে তৈরি থাকবেন নবদ্বীপ সাইনি, শিবম দুবে, ইসুরা উদানা ও অ্যাডাম জ্যম্পা

কিন্তু ম্যাচটা খুব কঠিন জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। সেরা লাইন আপ বলতেই দিল্লি ক্যাপিটালস । তরুণ ক্রিকেটার পাশে অভিজ্ঞ খেলােয়াড়দের আন্তরিকতা সংগ্রামী হাতিয়ার বলে দিল্লি মনে করে। প্রথম দুটো ম্যাচে জেতার পরে আচমকা ধাক্কা খেতে হয় হায়দরাবাদের কাছে। সেদিন শ্রেয়াসরা হয়তাে বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে হালকা চালে খেলবার চেষ্টা করেছিল।

সেই অতি আত্মশ্বিাসী হওয়ার কারণে ওই হার দিল্লিকে অন্য শিক্ষা দিয়েছে। তাইতা নাইট রাইডার্স কলকাতার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে শ্রেয়াসরা বুঝে ছিলেন, জয়ের পথে ফিরতে হলে পরিকল্পনা মাফিক যুদ্ধ ক্ষেত্রে নামতে হবে। সেই ভাবনাই জয় হল। আর এই জয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে কোহলি বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে সেরা ম্যাচ উপহার দেওয়ার জন্যে অপেক্ষা।

দলে দাপুটে ব্যাটসম্যানের তালিকা বেশ বড়। শ্রেয়াস তাে আছে। পাশে উজ্জ্বল মুখ পৃথ্বিশ, শিখর ধাওয়ান, ঋষভ পন্থ ও হেটমায়ার। বলের জাদু দেখাতে কামিঙ্গো, রাবাডা, অ্যানরিখ নরখিয়া, মাকার্স স্টোয়নিস, অমিত মিশ্র বা অশ্বিনরা নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন। তাই কোহলি ও শ্রেয়াসদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কী রূপকথার কাহিনি হবে, না যুদ্ধংদেহি মনােভাবে মাঠ কেঁপে উঠবে।