পাহাড় জয়ের শপথে ইস্টবেঙ্গল এবার আইএসএল ফুটবলেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে চায়

আইএসএল ফুটবলে এখনও পর্যন্ত কোনও জয় আসেনি লাল-হলুদ শিবিরে। তারই মধ্যে কোচ বদল হয়েছে। এসেছেন নতুন কোচ অস্কার ব্রুজো। তিনি বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস দলের কোচ ছিলেন। আইএসএল খেলা চলাকালীন এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ-থ্রি’তে খেলার সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। অবশ্য তার আগে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ-টু’তে হেরে যাওয়ার পরেই লিগ-থ্রি’তে খেলে আবার উপরে উঠতে আসতে হবে। অর্থাৎ যদি কলকাতা ময়দানে খেলা করা হয়, সেক্ষেত্রে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে এই খেলাটি তৃতীয় ডিভিশনের খেলা বলেই চিহ্নিত হবে।

তবে, কলকাতার অপর প্রধান মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ-টু’তে খেলছে। স্বাভাবিকভাবে মোহনবাগান এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের থেকে। ইস্টবেঙ্গলের দৈন্যদশা দেখে অনেকেই হা-হুতাশ শুরু করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি, প্রাক্তন কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাতকে দোষারোপ করে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। আর এই ছাঁটাই হওয়ার পরে কর্মকর্তারা আসল জায়গা থেকে সরে এসে অন্য কথা বলতে শুরু করলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই কর্মকর্তারাই চলতি বছরের শুরুতে কেন কার্লোস কুয়াদ্রাতের উপরে ভরসা রেখেছিলেন? নিশ্চয়ই কোচ কখনও মাঠে নেমে খেলার চরিত্র বদল করতে পারেন না। তিনি হয়তো পরিকল্পনা তৈরি করে দিতে পারেন, কিন্তু সেই পরিকল্পনার সার্থক রূপ দেওয়ার জন্য ফুটবলারদেরই এগিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে ফুটবলাররা যদি সফল না হতে পারেন, তাহলে খেলার ফলাফল যা হওয়া দরকার তাই হয়ে থাকে। আর সেটাই দেখতে পাওয়া গিয়েছে আইএসএল ফুটবলে।

এএফসি ফুটবল চ্যালেঞ্জ লিগ-থ্রি’তে ইস্টবেঙ্গল খেলতে শুরু করেছে নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোর তত্ত্বাবধানে। ভুটানের মাঠে ওই দেশের চ্যাম্পিয়ন দল পারো এফসি’র সঙ্গে লড়াই করে প্রথম ম্যাচে কোনওক্রমে ১ পয়েন্ট পায়। আর তখনই সবাই হইহই করে বলতে শুরু করলেন, ইস্টবেঙ্গলের চেহারা বদলে গিয়েছে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন খেলোয়াড়রা। তাহলে আর তো কোনও সমালোচনার জায়গা নেই। খুবই ভালো কথা। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই প্রতিযোগিতায় যাদের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল খেলছে, তাদেরও অবস্থা একই জায়গায়। মনে রাখতে হবে, এই প্রতিযোগিতা বড় আখ্যা দেওয়া যাবে না।


শুধু তাই নয়, গ্রুপ পর্যায়ে যে দল শীর্ষস্থান পাবে, তারাই কিন্তু নকআউট পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাবে। ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয় ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স করে ৪-০ গোলে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসকে হারিয়ে দিয়েছে। খেলা দেখে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের এই ক্লাবের রক্ষণভাগ বলতে যা বোঝায়, তা একেবারে নড়বড়ে ছিল। একটা শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই করতে হয়, তার কোনও প্রয়াস দেখতে পাওয়া যায়নি। তাই খুব সহজেই ইস্টবেঙ্গল জয় তুলে নিতে পেরেছে। তবে, এই জয়ের ফলে লাল-হলুদ শিবিরে কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ পেয়েছে। কিছুটা খোলামেলা পরিবেশের মধ্যে দিয়ে নিজেদের তৈরি করার মতো সাহসও পাওয়া গেছে। এতদিন ধরে যে ধোঁয়াশার মধ্যে ইস্টবেঙ্গলকে দিন কাটাতে হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এই বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। এখন আকাশে বাতাসে যে আনন্দ, এই ভাবনাতে সমর্থকরাও ছোটাছুটি শুরু করে দেবেন। তারপরে দীপাবলির আগে ইস্টবেঙ্গলের মশালের আলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এটাও একটা প্রাপ্তি।

এইভাবে ফিরে আসতে হয়, এই ভাবনাতে আগামী ম্যাচগুলোতেও ইস্টবেঙ্গল যদি তাদের দাপট দেখাতে পারে, তাহলে বলতে হবে, ইস্টবেঙ্গল শিবিরে সত্যিই নতুন আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যেই লেবাননের ক্লাবটি প্রথম ম্যাচটি বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলকে এবারে খেলতে হবে লেবাননের ওই ক্লাবটির সঙ্গে। সেই কারণে অত্যন্ত সাবধানী ভূমিকা নিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে মাঠে নামতে হবে। এই জয়ের জন্য অত্যন্ত সাবধানী হতে হবে। শুধু সাবধানী নয়, সাহসী ও আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে পরবর্তী ধাপে পৌঁছনোর জন্য। স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজো নিশ্চয়ই প্রতিটি পদক্ষেপ কীভাবে ফুটবলারদের নিতে হবে, সে বিষয়ে ক্লাস করাবেন এবং জেতার মানসিকতাকে বড় করবেন। তাহলেই গোলদাতা দিয়ামানতাকোস, আনোয়ার আলি, শৌভিক চক্রবর্তী ও নন্দকুমাররা আরও উজ্জীবিত ফুটবল উপহার দিতে পারবেন লেবাননের ক্লাবের বিরুদ্ধে। এখন অপেক্ষা ইস্টবেঙ্গল লড়াই করে পাহাড়ের মাঠে জয়ের আলোয় আলোকিত হতে পারে কিনা।