বাংলার ফুটবলে ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে আইএফএর অভ্যন্তরে টানাপোড়েন চলছে।কলকাতা ফুটবল লিগে ম্যাচ ফিক্সিং বন্ধে কোন প্রকার সিদ্ধান্তে আইএফএ উপনীত হতে পারছেনা। ফুটবলে ম্যাচ ফিক্সিং আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত আছে। ফিফা ও এএফসি থেকে এই ম্যাচ ফিক্সিং বিষয়ে নানা গাইডলাইন দেওয়া আছে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন থেকে সে গাইডলাইন আইএফএ দপ্তরেও আছে।বিগত দু’বছর ধরে কলকাতা ফুটবলের ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। আইএফএ সেসব অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে দরবার পর্যন্ত করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনও ফলাফল পাওয়া যায়নি। আগামী তিনমাসের মধ্যে কলকাতা ফুটবলের নতুন মরশুম শুরু হতে চলেছে।
আইএফএ ম্যাচ ফিক্সিং থেকে সর্তক থাকতে খেলোয়াড়, রেফারি ও ক্লাব অফিসিয়ালদের কোন নির্দেশনামা এখন পর্যন্ত দেয়নি। ম্যাচ ফিক্সিং কেবলমাত্র কলকাতা লিগের নির্দিষ্ট কোন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত এমনটা নয়। জুনিয়র পর্যায় থেকে সিনিয়র পর্যায় পর্যন্ত ম্যাচ ফিক্সিং এখন থাবা বসাচ্ছে। কলকাতা লিগের এক মরশুমে আইএফএকে কয়েক হাজার ম্যাচ সংগঠিত করতে হয়। এত ম্যাচের প্রতি নজরদারি করার মতন পরিকাঠামো আইএফএফের নেই। কলকাতা লিগের বিভিন্ন বিভাগ নিয়ে আইএফএর নানাবিধ কমিটি আছে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতন গুরুতর সমস্যা নিয়ে তাদেরকে কিভাবে ব্যবহার করা যায়, এমন কোনও সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি। ম্যাচের ফলাফল ম্যাচ শুরুর আগেই যেখানে নির্ধারিত হয়ে থাকছে–এমন ম্যাচের জন্য নানা সর্তকতা অবলম্বন প্রয়োজন।
এই সমস্ত ম্যাচের আগাম খবর না থাকলেও বিভিন্ন ডাটা পর্যবেক্ষণ করে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আন্দাজ করা যায়। ফলত: পূর্ব পরিকল্পনায় কর্মপদ্ধতি নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন।
ম্যাচ ফিক্সিংয়ের পরিধি এখন আরো বেড়েছে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সাথে সাথে স্পট ফিক্সিংও এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।প্রথমহাফের শেষে খেলার ফলাফল কি থাকবে, কিংবা শেষ ১৫মিনিটে খেলার ফলাফল কি হবে তা নিয়ে স্পট ফিক্সিং হয়। কিংবা ম্যাচের হলুদ কার্ড থেকে লাল কার্ড ও গোলকিক্ থেকে কর্নারকিক্–নানা বিষয় স্পট ফিক্সিংয়ের মাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ হয়। এমন বিশাল সংঘটিত শক্তির সাথে লড়াই করার মতন প্রশাসনে একতা আইএফএতে এখনো নেই। ম্যাচ ফিক্সিং কিংবা স্পট ফিক্সিং এর সঙ্গে যারা জড়িত, তারা নিজেরাই এখন বিভিন্ন ক্লাব কিনে নিচ্ছে বা বিভিন্ন ক্লাবের দলগঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে। এছাড়াও লোকাল বডির বিভিন্ন ম্যাচেও তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। প্রয়োজনে লোকাল বডিকে সাহায্য করতে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিচ্ছে।
গুরুতর ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মত সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে তাই,নিয়ামক সংস্থায় সত্বর শক্তিশালী প্রশাসনের প্রয়োজন হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে এ সমস্যা আরো গুরুতর আকার ধারণ করে। গত মরশুমে বারাকপুর স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার ডিভিশনের এক ম্যাচে খেলোয়াড়দের ভূমিকা নিয়ে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব ভাইরাল হয়েছিল। আইএফএ কিন্তু ওই ভিডিওর প্রেক্ষিতে ঐ সমস্ত ফুটবলারদের ডেকে ন্যূনতম জিজ্ঞাসাবাদও করেছে কিনা সন্দেহ?
আইএফএর এক আধিকারিক তার নিজের ক্লাবেরই ম্যাচ সম্পর্ক এমন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আইএফএর পরিচালনায় লিগের খেলা হয়। সেই লিগের খেলা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সম্পূর্ণ দায় ও দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে আইএফএর উপর বর্তায়। আইএফএ তার পরিকাঠামাগত অভাবের জন্য যদি এই শক্তির মোকাবিলা করতে না পারে,তবে সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মাধ্যমে সহজে অর্থ উপার্জন করা যায়।
ফলত: এমন শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করা এককভাবে লোকাল ফুটবল নিয়মক সংস্থার পক্ষে খুবই কঠিন। বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে নিয়ামক সংস্থা কিছু সতর্কীকরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।এমন ম্যাচে রেফারিরা যেহেতু খেলোয়াড়দের খুব কাছাকাছি থাকে, অতএব মাঠের ভিতরের প্রতিক্রিয়া সহজেই তারা অনুমান করতে পারেন।ফলে ম্যাচে রেফারি পোস্টিং এর ক্ষেত্রে আইএফএর সাথে রেফারি এসোসিয়েশনের নিবিড় যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন ম্যাচ সম্পর্কে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের অভাব অভিযোগ লিপিবদ্ধ করার জন্য আইএফএ গোপনীয়তায় তাদের ওয়েবসাইট ও নির্দিষ্ট ফোন নাম্বার জনসাধরনকে ব্যবহার করতে দিতে পারে। আর্থিক অসঙ্গতির জন্য আইএফএ’র পক্ষে এককভাবে এমন শক্তিশালী সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন।ফলে বাংলার ফুটবলের স্বার্থে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।