• facebook
  • twitter
Thursday, 13 March, 2025

গোলরক্ষক ডোনারুমা সব সময় কখনও নায়ক আবার কখনও ভিলেন

কোন মন্ত্রে পেনাল্টি শুট আউটে এতখানি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন ইতালীয় কিপার? ৬ ফুট ৫ ইঞ্চির উচ্চতা একটা কারণ, একমাত্র নয়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

নব্বই মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ে সেভাবে সমস্যার মুখে না পড়লেও আসল পরীক্ষা ছিল তারপর— পেনাল্টি শুট আউটে। ডোনারুমা দ্বিতীয় রাউন্ডে পিএসজির পরিত্রাতা হয়ে উঠলেন। ডোনারুমা কিংবদন্তি জিয়ানলুইজি বুফনের উত্তরসূরী। টাকার মোহে ছেলেবেলার ক্লাব এসি মিলান ছেড়ে পিএসজি চলে যান— এই অভিযোগে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে সান সিরো স্টেডিয়ামে পা রাখা গোলরক্ষককে মিলান সমর্থকেরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন ‘ফেক ডলার’ ছুড়ে। নোটের গায়ে লেখা ছিল ‘ডলারুমা’।

জিয়ানলুইজি ডোনারুমা কেরিয়ারে ফুটবল আর জীবনের সবকিছুর সাক্ষী থেকেছেন। দেখেছেন চড়াই— ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংরেজদের হারিয়ে ইউরো সেরা হয়ে। দেখেছেন উতরাইও। যার সাম্প্রতিকতম নজির গত সপ্তাহের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম লেগ। ৮৮তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল। প্রথম সুযোগ। প্রথম শট। একমাত্র শট। আর তাতেই গোল।

ফার্স্ট লেগ জিতে ইংল্যান্ডগামী বিমানে উঠে প্যারিস ছেড়েছিল আর্নে স্লটের টিম। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে গেলে জিততে হত লিভারপুলে গিয়ে। উত্তপ্ত, উদ্দীপ্ত অ্যানফিল্ডে হারাতে হত মো সালাহদের। একটি রেকর্ড আজ পর্যন্ত কোনও টিম ভাঙতে পারেনি—কোনও ইউরোপীয় টুর্নামেন্টের নক আউটের প্রথম লেগে এগিয়ে থাকার পর লিভারপুল ছিটকে যায়নি এর আগে। কোনও দিন না। ৩০ বারে ৩০ বারই দুই লেগ মিলিয়ে জিতেছে ইংল্যান্ডের ক্লাব। তাই গতকাল সেকেন্ড লেগে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে হলে এক অর্থে অসাধ্যসাধন করতে হত পিএসজিকে। প্রথম ম্যাচে লিভারপুলের কাণ্ডারী হয়ে ওঠেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন। ২৭ খানা গোলমুখী শট বাঁচিয়েছিলেন তিনি। ঠেকিয়েছিলেন নিশ্চিত পরাজয়।

দ্বিতীয় রাউন্ডে পিএসজির পরিত্রাতা হয়ে উঠলেন ডোনারুমা। নব্বই মিনিট এবং অতিরিক্ত সময়ে সেভাবে সমস্যার মুখে না পড়লেও আসল পরীক্ষা ছিল তারপর—পেনাল্টি শুট আউটে। লাল জার্সিতে স্টেডিয়াম ছেয়ে। তেকাঠির পিছন থেকে মুহূর্মুহু উড়ে আসছে বিদ্রুপ, কটূক্তি। সবকিছু দূরে সরিয়ে ইস্পাতকঠিন স্নায়ুর পরিচয় দেন ইতালীয় গোলরক্ষক। তিনটে পেনল্টি মেরেছিল লিভারপুল। তার মধ্যে দুটি স্পট কিক সেভ করেন ডোনারুমা। ম্যাচ জিতে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট পাকা করে পিএসজি। কামব্যাক কমপ্লিট!

যদিও ইতিহাস বলছে, পেনাল্টিতে ডোনারুমার এহেন বীরত্ব নতুন কিছু নয়। ইউরো কাপে ঘরের মাঠ ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের স্বপ্নভঙ্গ করেন ইতালির এই দানবীয় গোলরক্ষক। সেযাত্রা বাঁচিয়েছিলেন বুকায়ো সাকা, জেডন স্যাঞ্চোর পেনাল্টি।

পাশাপাশি হিসেব বলছে, ১৬ বছর বয়সে এসি মিলারের জার্সি গায়ে ক্লাব ফুটবলে অভিষেক হওয়া ডোনারুমা তাঁর কেরিয়ারে ইতিমধ্যে ৬০ খানা পেনাল্টির মধ্যে সেভ করেছেন ১৪ খানা শট। শতাংশে ২৩.৩। আবার শুধুমাত্র শুট আউটে বাঁচানো শটের হারও একই—২৩.৩%! ৪৩টি স্পটকিকের মধ্যে সেভ করেছেন ১০টি। সব মিলিয়ে ১০৩ বার পেনাল্টির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ২৪ বার শট বাঁচিয়েছেন ডোনারুমা।

কিন্তু কোন মন্ত্রে পেনাল্টি শুট আউটে এতখানি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন ইতালীয় কিপার? ৬ ফুট ৫ ইঞ্চির উচ্চতা একটা কারণ, একমাত্র নয়। লিভারপুল ডিফেন্ডার স্টিফেন ওয়ার্নকের ব্যাখ্যা: বারের নীচে দাঁড়ানোর ভঙ্গিমা থেকেই তাঁর রণকৌশল শুরু। বাকি অধিকাংশ কিপার গোললাইন বরাবর দাঁড়িয়ে হরেক রকম অঙ্গভঙ্গি করতে থাকেন যাতে পেনাল্টি শুটারের মনঃসংযোগ বিক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু ডোনারুমা শান্ত থাকেন। তারপর দু’হাত মেলে ধরেন আস্তে। এর ফলে শট নিতে চলা খেলোয়াড়ের চোখে গোলপোস্ট অনেকটা ছোট বলে মনে হতে থাকে। পাশাপাশি জমতে থাকে সংশয়। গোল ছোট, গোলরক্ষক বড় ঠেকে। ফলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে ব্যাকফুটে চলে যান শুটার। আর মিস করেন পেনাল্টি।
কাল ভিলেন, আজ নায়ক। গোলরক্ষকদের জীবনে এই ভবিতব্য। আর সেই লিখনকে ফের একবার সত্য বলে প্রমাণিত করেছেন জিয়ানলুইজি ডোনারুমা।