গোয়ালিয়রে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ করে উড়িয়ে দিয়েছে সূর্যকুমার যাদবের ব্রিগেড। অর্থাৎ ভারতীয় দলকে কোনও বেগ পেতেই হয়নি এই জয়ের জন্য। আসলে প্রথম দু’টি টেস্টে ভারতীয় দল যেমন দাপটের সঙ্গে খেলেছে, তেমনই টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তরুণ ব্রিগেডকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে ভারতীয় দল গঠন করা হয়। তার প্রধান কারণ আগামী অস্ট্রেলিয়া সফরে তরুণ ক্রিকেটারদের দেখে নেওয়ার একটা তাগিদ ছিল নির্বাচকদের। এই দলে ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে বিরাট কোহলিকেও বিশ্রাম দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই এই দুই ক্রিকেটার টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলবেন না বলে ঘোষণা করেছিলেন। সেই কারণেই ভারতীয় দলে তাঁদের যেমন রাখা হয়নি, তেমনই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে বাছাই করে নেওয়া হয় সূর্যকুমার যাদবকে।
অবশ্য এর আগে সূর্যকুমার অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নিয়েছেন। একঝাঁক উদীয়মান ক্রিকেটারকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন কোচ গৌতম গম্ভীর। অবশ্য এই দলে হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো অলরাউন্ডার রেখে দলের শক্তি বাড়ানোর একটা কৌশল বলে মনে করা হয়েছে। তাই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দিল্লির মাঠে হয়তো আরও কয়েকজনকে প্রথম একাদশে দেখা যেতে পারে। খেলতে পারেন অভিষেক শর্মা। অভিষেকের ব্যাটে ভালো রান আছে। কিন্তু প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হতে হয় তাঁকে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অভিষেকের ব্যাট থেকে বড় রান আসতে পারে।
সঞ্জু স্যামসন ভারতীয় দলের হয়ে আগেও খেলেছেন, তাঁর উপরে নির্ভর করা যেতেই পারে। পাশাপাশি, অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে প্রচুর রান আছে। দিল্লির মাঠেও তাঁর ব্যাট থেকে বড় রান আসতে পারে বলে অনেকেই আশা প্রকাশ করছেন। হার্দিক পাণ্ডিয়াকে নতুন কিছু বলার নেই। অনেক সময় হার্দিক পাণ্ডিয়ার বল ম্যাচের চরিত্র বদল করে দিতে পারে। তেমনই আবার ব্যাটেও তাঁর দাপট দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
অন্যদিকে তিলক বর্মাকে হয়তো দিল্লির মাঠে দেখতে পাওয়া যেতে পারে ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে। তাঁর কাছে অভিষেক ম্যাচ। গোয়ালিয়রে নীতীশ রেড্ডির অভিষেক হয়েছিল। কোচ ও টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকে জায়গা করে দিতে। আর এটাই হল একেবারে উপযুক্ত সময়। তাই নীতীশের বদলে তিলককে মাঠে দেখলে অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। এদিকে রিয়ান পরাগের বল অনেক সময় প্রতিপক্ষ দলের কাছে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর ব্যাটও অনেক সময় গর্জে ওঠে। তাই রিয়ান চাইবে দিল্লির মাঠে দাপটের সঙ্গে ব্যাট করতে। রিঙ্কু সিংকে নিয়ে নতুন করে বলার কোনও প্রয়োজন হয় না। সবাই জানে রিঙ্কু বলতে দলের কাছে ফিনিশার। তাই সূর্যকূমার যাদব অবশ্যই নির্ভর করবেন রিঙ্কু সিংয়ের উপরে। রিঙ্কুর মারকুটে ব্যাটিং দর্শকদের মন ভরিয়ে দেয়। কোচ গৌতম গম্ভীর চাইছেন হর্ষিত রানাকে এই ম্যাচে রাখতে। হয়তো ওয়াশিংটন সুন্দরের পরিবর্তে তাঁকে দলে রাখা হতে পরে। দিল্লির ছেলে হর্ষিত সেখানকার উইকেটটা ভালো করে চেনেন। তাই ওয়াশিংটনের বিকল্প হিসেবে হর্ষিত রানাকে ভাবা হয়েছে। ভারতীয় দলে বেশ কিছুদিন বাদে আবার জায়গা পেয়েছেন বোলার বরুণ চক্রবর্তী।
গোয়ালিয়রে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দাঁড়াতেই পারেননি উইকেটে। যার ফলে বাংলাদেশের ইনিংস কম রানে শেষ হয়ে যায়। তিনি তিনটি উইকেট পেয়েছিলেন। তাতেই স্পষ্ট বলা যায়, ভারতীয় দলে বরুণকে ফিরিয়ে আনাটা কাজের কাজ হয়েছে। আর্শদীপ সিং এখন ভারতীয় দলের অন্যতম সেরা বোলারদের মধ্যে একজন। নতুন বলের পাশাপাশি পুরনো বলেও তাঁর দখলটা দেখতে পাওয়া গিয়েছে। মায়াঙ্ক যাদবকে রঞ্জি ট্রফিতে দুরন্ত ভূমিকায় দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। তারই সুবাদে ভারতীয় দলে জায়গা পেয়েই নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি প্রতিপক্ষ দলকে চাপের মধ্যে রাখতে জানেন। গোয়ালিয়রের মাঠে মায়াঙ্ক প্রথম ম্যাচেই নজর কেড়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, ঘরের মাঠে তরুণ ব্রিগেডরা যেভাবে লড়াই করছেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে আগামী দিনে তাঁরা সিনিয়র দলে জায়গা করে নেবেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারর মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, শক্তিশালী ভারতীয় দলের কাছে কোনওভাবেই রুখে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। ভারতের বোলিং ও ব্যাটিংয়ে যে দাপট, তার সঙ্গে মোকাবিলা করা বেশ কঠিন। তাই তো বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজিমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, যে দলের ব্যাটসম্যানরা ১৮০-র লক্ষ্যমাত্রা রাখে না, সেখানে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন আছে কিনা, জানি না। তবে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য দিল্লির মাঠে লড়াইয়ে কোনও অভাব থাকবে না।