টেনিস জগতের কিংবদন্তী খেলোয়াড় রাফায়েল নাদাল এবারে খেলাকে বিদায় জানাতে চলেছেন। এবারে ডেভিস কাপ ফাইনালের পরেই তিনি টেনিস কোর্টকে বিদায় জানাবেন। পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে রাফায়েল শেষবারের মতো র্যা কেট হাতে বেশ কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে গেলেন। তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীরা রাফায়েলের এই অবসরের কথা জানতে পেরে ভেঙে পড়েছেন। টেনিস কোর্টে সবসময় রজার ফেডেরারের সঙ্গে তাঁর চ্যালেঞ্জ থাকত। একসময় একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য দুই তারকা টেনিস খেলোয়াড় দুরন্ত ভূমিকা নিতেন। তাই যখনই এই দুই খেলোয়াড় মুখোমুখি হয়েছেন, তখনই তাঁরা অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে যেতেন। কিন্তু লড়াইয়ে আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে খেলতে দেখা গিয়েছে কোর্টে একে অপরের বিরুদ্ধে। কোর্টের বাইরে কখনওই বন্ধু হিসেবে কেউ কাউকে অন্যভাবে দেখতে চাইছেন না। এটাই হল বড় মাপের খেলোয়াড়দের পরিচয়। টেনিস কেরিয়ারে একে অপরের বিরুদ্ধে ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছেন রজার ফেডেরার ও রাফায়েল নাদাল। ফেডেরার জীবনের শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচটি খেলেছিলেন নাদালকে সঙ্গী করেই। মঙ্গলবার নাদালকে শুভেচ্ছা জানালেন ফেডেরার।
ফেডেরারের কথায়, ‘আবেগে ভেসে যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু বলার আছে। তুমি আমাকে অনেক ম্যাচে হারিয়েছো। আমি তোমাকে অত হারাতে পারিনি। তোমার মতো কেউ আমাকে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে ফেলেনি। সুরকির কোর্টে খেলতে নেমে বার বার মনে হয়েছে, আমি তোমার ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছি। আমার খেলা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছ তুমি। তোমার বিরুদ্ধে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার জন্য আমি বড় র্যা কেট নিয়েও খেলতে নামতে বাধ্য হয়েছি। তুমি যে ভাবে বোতল সাজিয়ে রাখতে মনে হত ছোট ছোট সৈন্য, তোমার চুল ঠিক করা, অন্তর্বাস ঠিক করা, সব কিছুই তোমার খেলাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেত। চুপি চুপি জানিয়ে রাখি, আমি এই সব কিছুর ভক্ত ছিলাম। এগুলো সবই আমার কাছে খুব অনন্য ছিল। তোমার জন্য আমি টেনিসকে আরও বেশি করে ভালবেসে ফেলেছি।’
৪০ বারের মধ্যে ২৪ বার হেরেছেন ফেডেরার। জিতেছেন ১৬ বার। ফেডেরার বলেন, ‘২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর আমি বিশ্বের এক নম্বর হয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আমি পৃথিবীর মাথায় বসে আছি। পরের দু’মাস তেমনই মনে হচ্ছিল। তারপর তুমি মায়ামিতে কোর্টে ঢুকলে লাল রঙের হাতকাটা জামা পরে, তোমার পেশিবহুল হাত দেখাতে দেখাতে। খুব সহজে হারিয়ে দিয়েছিলে আমাকে।’ সেই ম্যাচে হার্ড কোর্টে নাদাল তৎকালীন এক নম্বর ফেডেরারকে ৬-৩, ৬-৩ গেমে হারিয়ে দিয়েছিলেন।
২০ বছর টেনিস খেলার পর অবসর নিচ্ছেন নাদাল। তাঁর প্রাক্তন প্রতিদ্বন্দ্বী লিখেছেন, “আমরা প্রায় একসঙ্গে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। শেষও করছি প্রায় একসঙ্গে। ২০ বছর পর আমি বলতে চাই, তুমি কী অসাধারণ খেলোয়াড়। ১৪ বার ফরাসি ওপেন জিতেছ। ঐতিহাসিক! তোমার জন্য স্পেন গর্বিত। গোটা টেনিস বিশ্বকে গর্বিত করেছ তুমি। এখনও আমাদের একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা ভাবি। সেই অর্ধেক ঘাস এবং অর্ধেক সুরকির কোর্টে খেলা ম্যাচ, কেপটাউনে ৫০ হাজার দর্শকের সামনে খেলা। টেনিসের প্রসারে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। ম্যাচে আমরা একে অপরকে জমি ছাড়িনি, আবার কোর্টের বাইরে বন্ধুর মতো মিশেছি। আমি কৃতজ্ঞ, ২০১৬ সালে রাফা নাদাল অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে তুমি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলে।’
ফেডেরারের সন্তানরা নাদালের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করে। সুইস তারকা মনে করেন, নাদাল তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণা। মজা করে ফেডেরার মজা করে বলেছেন, ‘আমি চিন্তায় থাকি, আমার সন্তানেরা না বাঁহাতি হয়ে যায় তোমায় দেখে।‘ ফেডেরার জীবনের শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন নাদালকে সঙ্গে নিয়ে। সেই অভিজ্ঞতার কথাও ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে নাদালের উদ্দেশে ফেডেরার কথায়, ‘তুমি সব সময় জানবে, তোমার জন্য চিৎকার করার জন্য আমি আছি। টেনিস থেকে অবসর নেওয়ার পর তুমি যা করবে, আমি তাতেও তোমার পাশে থাকব। আমি তোমার সব সময়ের ভক্ত। আমাদের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সম্পর্ক কোনওভাবেই ভেঙে পড়বে না বলে বিশ্বাস।’
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০২২ সালে যখন টেনিস থেকে অবসর নিয়েছিলেন রজার ফেডেরার, তখন রাফায়েল নাদালের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলেছিলেন লেভার কাপে। রাফায়েল নাদাল আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, নভেম্বর মাসে শেষবার ডেভিড কাপ খেলে এই বর্ণময় টেনিস জীবনের ইতি টানবেন। একটা সময় তিনি সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক ছিলেন।