• facebook
  • twitter
Saturday, 22 March, 2025

বিনোদনের ক্রিকেটে আজ মুখর হবে ইডেন

কলকাতা দলে আন্দ্রে রাসেল রয়েছেন। রয়েছেন নারাইনের মতো ক্রিকেটাররা। আর উইনার্স স্ট্রোক দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন রিঙ্কু সিং।

নিজস্ব চিত্র

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী

সকাল থেকেই আকাশটা গোমড়া মুখে ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা নামতেই ক্রিকেট ভক্তদের মুখটা গোমড়া দেখা গেল। বৃষ্টি ঝিরঝির থেকে বেশ ভালোই মাঠ ভিজিয়ে দিল। আবহাওয়া অফিস থেকে আগেই বলা হয়েছিল, এদিন থেকে টানা চারদিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আভাস পাওয়া গেল। শনিবার থেকে মেগা আইপিএল ক্রিকেট শুরু হচ্ছে। প্রথম দিনেই বিরাট কোহলির ব্যাট দেখার জন্য অনেকের আগ্রহ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের অন্যতম কর্ণধার শাহরুখ খানকে দেখতে যেমন ভিড় করবেন দর্শকরা, ঠিক সেইভাবেই রিঙ্কু সিংয়ের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে চিৎকার করে গ্যালারি মেতে উঠবে ‘খেলব জিতব’ শ্লোগানে। কলকাতা দলের অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে যেমন চ্যালেঞ্জ নিতে বিরাট কোহলিদের চাপে রাখেন, আবার বিরাট কোহলিরাও বরুণ চক্রবর্তীকে মোকাবিলা করার জন্য কোনওরকম কার্পণ্য করবেন না। এটাই বিনোদন ক্রিকেটে আসল সংজ্ঞা। কিন্তু এই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দুই দলের কোচরা নীরাবতা পালন করছেন না।

যদি শনিবার সকালে বৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে স্পিনারদের দিয়ে কীভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, তার একটা অঙ্ক করেন কেচেরা। আবার সূর্যদেব যদি ঠিকমতো রোদ্দুর ছড়িয়ে দেন, সেক্ষেত্রে পেসারদের দিয়ে কীভাবে নিজেদের দখলে ম্যাচটা রাখতে হবে, তারও একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন। আর এবারে কলকাতা শহরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম বরুণ চক্রবর্তী। আসলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের জয়ের পিছনে বিশ্বকর্মা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বরুণ চক্রবর্তী। বরুণ অবশ্য গতবছর কলকাতা দলের হয়ে খেলেছেন। বরুণ উইকেট পেলেও সেইভাবে নজর কাড়তে পারেননি। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে জাতীয় দলের হয়ে বরুণ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। আর সেই সুবাদে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁর ডাক আসে। অবশ্য প্রথম দু’টি ম্যাচে তিনি ছিলেন না। কিন্তু তিনি নিজেকে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অপরিহার্য বরুণ বলে। সেই কারণেই বরুণ এখন কেকেআর দলের হার্ট থ্রব।

বরুণ এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এসে জানিয়ে দিলেন, আবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। দলের সমস্ত খেলোয়াড়রা শুধু ঐক্যবদ্ধ নয়, প্রত্যেকের পাখির চোখ খেতাব। তারপরে কলকাতা দলের নতুন অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। তাঁর হাতে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা তুলে দেওয়ার জন্য আমরা প্রত্যেকেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে চাই। বরুণ মনে করেন কলকাতা দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার রয়েছেন, যাঁরা যে কোনও সময়ে খেলার চরিত্রকে একেবারে বদলে দিতে পারেন। অবশ্য প্রতিপক্ষ দল বেঙ্গালুরুকে সমীহ করে খেলতে হবে। যে দলের কোহলির মতো ক্রিকেটার থাকেন, সেই দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামাটা বেশ কঠিন। মনে রাখতে হবে, তাঁর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা যে কোনও একটা দলকে উৎসাহিত করে। আর তখনই অন্যান্য খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয়ে লড়াকু মনোভাব প্রকাশ করেন। এমনকি যে কোনও প্রতিযোগিতায়, প্রথম ম্যাচটা অত্যন্ত ভাইটাল। এই ম্যাচের ফলাফল সেই দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়। তাই সতর্ক থাকতে হয়।

কলকাতা দলে আন্দ্রে রাসেল রয়েছেন। রয়েছেন নারাইনের মতো ক্রিকেটাররা। আর উইনার্স স্ট্রোক দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন রিঙ্কু সিং। সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, কলকাতা দল কয়েক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে। বেঙ্গালুরু দলের অধিনায়কের ব্যাটনটা বিরাট কোহলির হাতে না থাকলেও তিনি কিন্তু মাঠে নেমে পুরো খেলাটা পরিচালনা করবেন।

তাই অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে কলকাতাকে খেলতে হবে। অনেকেই বলছেন, এখনও পর্যন্ত বেঙ্গালুরু দল আইপিএল ক্রিকেটে খেতাব জয়ের আনন্দে নিজেদের মাতিয়ে রাখতে পারেননি। সেই কারণে এবারে প্রথম থেকেই একটা আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে খেলার চেষ্টায় কোহলিরা মেতে থাকবেন। এই দলের অধিনায়ক রজত পাটিদার। তিনি অত্যন্ত সচেতন এবারের লড়াই নিয়ে। কোহলি, পাটিদারের পাশে ভালো খেলার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন যশ ডয়্যাল, ভুবনেশ্বর কুমার ও বিদেশি খেলোয়াড় ফিল সল্ট। ফিল সল্ট ভালো ফর্মেই রয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই দুই দলের লড়াইটা অবশ্যই উপভোগ্য হবে।

কলকাতা সবসময়ই একটু হুজুগে চলে। আইপিএল ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতিতে কলকাতা শহর মেতে ওঠে। কিন্তু এবারে সিএবি’র পক্ষ থেকে টিকিটের দাম যা করা হয়েছে, তাতে হতবাক হতে হয়। ৯০০ টাকা সবচেয়ে কম দামের টিকিট। সেই টিকিটও নেই। ২০০০ টাকার টিকিটও বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আর ৩০০০ হাজার টাকা দামের টিকিট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে। বেশিদামের টিকিট বিক্রি করার জন্য ব্ল্যাকাররা আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সাধারণ দর্শকরা যদি এই টিকিট না পান, তাহলে এই ক্রিকেট দেখার কী মূল্য আছে? যদি এত দামের টিকিট কেটে শুধু বিনোদন উপভোগ করা যায়, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু খেলার খেলা দেখা যাবে না। তবুও কল্লোলিনী কলকাতা শনিবারের রাতে ক্রিকেট শহরে পরিণত হবে। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে আইপিএল ক্রিকেটে অভিযান শুরু হবে ইডেন উদ্যানে। তার জন্য সবরকম প্রস্তুতি করা হয়ে গিয়েছে। আলোয় সেজে উঠেছে ইডেন উদ্যান। তৎপরতা ক্লাবহাউসে। সিএবি’র কর্মকর্তারা ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। একটাই লক্ষ্য সুষ্ঠুভাবে যাতে খেলাটা পরিচালনা করা যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান-বাজনায় মেতে উঠবেন শিল্পীদের সঙ্গে ক্রিকেট বন্ধুরা। – ছবি: মউল মণ্ডল