ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল একটা ঐতিহ্যের নাম। শুধু ভারতে কেন, আন্তর্জাতিক স্তরেও লাল-হলুদ শিবিরের গুরুত্ব একেবারে আলাদা। এ বছরই ইস্টবেঙ্গল ক্লাব শতবর্ষে পা দিচ্ছে। যারফলে সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়ােজন করছে। পাশাপাশি প্রাক্তন সচিব পন্টু দাসের জন্মদিনে আলাদা করে অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হচ্ছে আর প্রতিষ্ঠা দিবসে অর্থাৎ ১ আগস্ট দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্যে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
শতবর্ষে এমন দু’জন ফুটবলারকে জীবনকৃতি সম্মানে সম্মানিত করা হবে। ওই দুই ফুটবলার হলেন দীর্ঘদিন লাল-হলুদ শিবিরে নির্ভরযােগ্য ফুটবলার হিসাবে শিবিরে বিরাট দায়িত্ব পালন করেছে। দু’জনেই ক্লাবকে নেতৃত্বও দিয়েছে। একজন হলেন গােলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলি আর রক্ষণভাগের ফুটবলার মনােরঞ্জন ভট্টাচার্য। কথা ছিল বিদেশি ফুটবলার ইরানের মজিদ বাকসারকে বিশেষ সম্মান জানানাে হবে, কিন্তু তাঁর সঙ্গে যােগাযােগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হতে হয়েছে। তাই কোনওভাবেই মজিদ বাকসারকে শতবর্ষের অনুষ্ঠানে পাওয়া যাচ্ছে না।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মােহনবাগানের প্রথমে গােলরক্ষক হিসাবে ভাস্কর গাঙ্গুলি কলকাতা ময়দানে খেলতে এসেছিলেন। ওই সময় ডার্বি ম্যাচে ৫-১ গােলের ব্যবধানে মােহনবাগানকে হারিয়ে দিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আর মােহনবাগানের গােলরক্ষক হিসাবে ভাস্কর গাঙ্গুলি খেলেছিলেন, কিন্তু সেদিন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তারা অনুভব করতে পেরেছিলেন ভাস্কর গাঙ্গুলির মতাে গােলরক্ষক দলের প্রয়ােজন আছে। সেই কারণেই পরের বছর ইস্টবেঙ্গলে নিয়ে আসা হয়েছিল ভাস্কর গাঙ্গুলিকে। ভাস্কর ইস্টবেঙ্গলে থাকাকালীন ভারতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। এমনকি ১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমসে ভারতীয় ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি খেলা থেকে অবসর নেয়ার পরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হন।
অত্যন্ত ভদ্র ফুটবলার হিসাবে মনােরঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম সবার কাছে দারুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল। দলের যেকোনও বিপদের মুখ থেকে রক্ষা করেছে মনােরঞ্জন ভট্টাচার্য। ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি দুরন্ত ফুটবল খেলেছেন। খেলােয়াড়ি জীবনে একেবারে শেষ মুহূর্তে একবারের জন্যে তিনি মােহনবাগানের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন। খেলা ছেড়ে দেবার পরে ইস্টবেঙ্গলের কোচের ভূমিকায় মনােরঞ্জন ভট্টাচার্যকে দেখা গিয়েছিল। উপদেষ্টা কমিটিতেও তিনি একজন সদস্য ছিলেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের যেকোনও কর্মসূচিতে ভাস্কর এবং মনােরঞ্জনকে সবসময়ই পাওয়া যেত। তবে এখনও পর্যন্ত বর্ষসেরা খেলােয়াড় হিসাবে এগিয়ে রয়েছে দুই পাহাড়ি ফুটবলার চুলােভা ও লালদানমাউয়া লালতে।
১ আগস্ট প্রতিষ্ঠা দিবসে সম্মান জানানাে হবে ক্লাবের জীবিত সব অধিনায়ক ও তাঁদের স্ত্রীদের। সাংবাদিক হিসাবে সম্মানিত করা হবে গৌতম ভট্টাচার্য ও নবি কাবাডিয়াকে। সব মিলিয়েই জমকালাে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শতবর্ষ শুরু হবে। কুমােরটুলির যে জায়গা থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, সেই জায়গা থেকে পদযাত্রা বের হবে এবং সেই পদযাত্রা শেষ হবে কলকাতা ময়দানের ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে।