একেই বলে অবিশ্বাস্য ফুটবল! নাটকীয় ফুটবলের জয়। ইস্টবেঙ্গল বলতেই আলাদা একটা অনুভূতি। সেই জায়গা থেকেই কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, তার ইতিহাস রচনা করতে জানে ইস্টবেঙ্গল। তাই তো এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ-থ্রি’তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লাল-হলুদ ব্রিগেড লড়াই করে লেবাননের নেজমেহ এফসি’কে পরাস্ত করে শেষ আটে পৌঁছে গেল। ইস্টবেঙ্গল জয় তুলে নিল ৩-২ গোলের ব্যবধানে লেবাননেরে নেজমেহ দলকে হারিয়ে।
স্বপ্ন পূরণ হল ইস্টবেঙ্গলের ভুটানের পাহাড়ি মাঠে। শুক্রবার ভুটানের থিম্পুতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ও লেবাননের নেজমেজ দল। আইএসএল ফুটবলে টানা ছ’টা ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরে মুষড়ে পড়েছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। কিন্তু সেখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, তার মন্ত্র ফুটবলারদের দিয়েছিলেন দলের নতুন কোচ অস্কার ব্রুজো। এই প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচে ভুটানের পারো এফসি’র সঙ্গে ২-২ গোলে খেলা শেষ করলেও ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা জানান দিয়েছিলেন ম্যাচ জেতার জন্য তাঁরা অপেক্ষায় রয়েছে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বসুন্ধরা দলকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে এদিন নেজমেহ দলের বিরুদ্ধে খেলার শুরু থেকেই আক্রমণে ঝড় তুলতে থাকে। ইস্টবেঙ্গলের কাছে জয় ছাড়া আর অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। যার ফলে বাঘের মতো গর্জন মাঠে দেখা যায় ইস্টবেঙ্গলের। কথায় আছে আহত বাঘের গর্জন আরও বেশি ভাবে প্রকাশ পায়। সেই ঘটনাই ঘটেছে এদিনের ফুটবল রণক্ষেত্রে। দিমিত্রিয়াস ও মাহিদ তালাল জুটি দুরন্ত ফর্মে খেলেছে। দলের তিনটি গোলের পিছনে সবচেয়ে বেশি বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তালাল। অন্যদিকে দিমিত্রিয়াস দিয়ামানতাকোস এই প্রতিযোগিতার তিনটি ম্যাচেই গোল করে শিরোনামে উঠে এসেছেন।
চোটের কারণে হেক্টর ইয়ুস্তের খেলা নিয়ে জল্পনা ছিল। এ দিন ইয়ুস্তেকে প্রথম একাদশেই রেখেছিলেন ব্রুজো। তবে গোটা ম্যাচেই তাঁর মন্থরতা দেখে মনে হয়েছে চোট পুরোপুরি সারেনি। ইস্টবেঙ্গল দু’টি গোলই খেয়েছে তাঁর ভুলে। আরও একটি খেতে পারত নেজমেহর ফুটবলার ভুল না করলে। খেলার আট মিনিটের মাথায় মাহিদ তালালের নিখুঁত কর্নার থেকে উড়ে আসা বলটি নেজেমজ দলের বাবা মুসাহ ক্লিয়ার করতে গিয়ে তা নিজেদের গোলেই জড়িয়ে দেন। আত্মঘাতী গোলে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যাওয়ার পরেই আক্রমণে গতি বাড়াতে থাকে। ১৫ মিনিটেরম মধ্যেই ইস্টবেঙ্গল আরও একটি গোল পেয়ে যায়। বলটি এবারে বাড়িয়েছিলেন তালাল। উদ্দেশ্য ছিল দিয়ামানতাকোস। বল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দারুণ ফিনিশ করে গোল দেন। ইস্টবেঙ্গল ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। তবে, ৩ মিনিটের মধ্যেই ইস্টবেঙ্গলকে গোল হজম করতে হয়। মাঝমাঠ থেকে ওপারাকে বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আতায়া। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগের ভুলে ওপারে গোল করতে ভুল করেননি।
গোলের ব্যবধান কমতেই ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে ঝড় তোলার চেষ্টা করতে থাকে প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলাররা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগের ব্যারিকেডকে কোনওভাবেই ভাঙতে পারেনি লেবাননের দলটি। তারই মাঝে পাল্টা আক্রমণে ইস্টবেঙ্গলের গোল করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি দিয়ামানতাকোস। তিনি বারের উপর দিয়ে বলটি উড়িয়ে দেন। খেলার বিরতির আগে সমতা ফিরে আসে। ইস্টবেঙ্গল প্রথমার্ধের শেষের দিকে সেইভাবে নিজেদের খেলা উপহার দিতে পারছিল না। সেই সুযোগে লেবাননের দলটি গোল করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনে। গোলটি করেন হুসেন মোনজরে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের গোলের জলে বল জড়িয়ে যেতে পারত। ফ্রিকিক থেকে বল পেয়েছিলেন ইসমাইলি। সেই বল ঠেলে দেন কৌরানিকে। কিন্তু অল্পের জন্য কৌরানি গোলে রাখতে পারেননি বলটি। আবার ইস্টবেঙ্গলের নন্দকুমারও গোল করার জায়গায় গিয়ে ব্যর্থ। তারপরেই দেখা যায় ইস্টবেঙ্গলকে চাপের মধ্যে রেখে দিয়ে লেবাননের দলটি আক্রমণে ঝড় তুলতে থাকে। এরই মধ্যে ঠান্ডা ও পাহাড়ি পরিবেশের কারণে লেবাননের তিনজন খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে পড়েন মাঠে। ৭১ মিনিটের মাথায় এই ঘটনার পরে লেবাননের মনোবল অনেকটাই ভেঙে পড়ে। তার দু’মিনিট বদেই ইস্টবেঙ্গল পেনাল্টি পেয়ে যায়। বাঁদিক থেকে বল নিয়ে ঢোকার সময় বক্সের মধ্যে তালালকে ফাউল করেন ইসমাইল। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সেই পেনাল্টি থেকে দিয়ামানতাকোস দারুণ গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে দেন। ইস্টবেঙ্গল এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্যায়ে সরাসরি পৌঁছে গেল। ইস্টবেঙ্গলের এই জয়টা সমর্থকদের অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে বলে বিশ্বাস।