নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতা ফুটবল লিগে ডার্বি ম্যাচ বলতেই উত্তেজনায় ভরপুর হয়ে থাকে সারা গ্যালারি৷ হোক না তরুণ ব্রিগেড। দুই দলের হয়ে লড়াই করছে৷ তবুও দুই দলের জার্সির রং লাল-হলুদ ও সবুজ-মেরুন৷ জার্সিতেই বলে দেয় সমর্থকদের উন্মাদনা কোথায় গিয়ে পৌঁছয়৷ শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের লড়াই দেখার জন্য ভিড় উপচে না পড়লেও ডার্বি ম্যাচের রং ফুটে উঠেছে স্টেডিয়াম জুড়ে৷ ইস্টবেঙ্গল ২-১ গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে বাজিমাত করল৷ এবারে কলকাতা ফুটবল লিগে ইস্টবেঙ্গল টানা তিনটি ম্যাচে জয়ের মুখ দেখল৷ আর প্রতিপক্ষ মোহনবাগান টানা তিনটি ম্যাচে জয়ের হাসি দেখতেই পেল না৷ স্বাভাবিকভাবেই খেলার প্রথম থেকেই দুই দলের কোচের মগজাস্ত্র কথা বলবে, এমন ধারণাই স্পষ্ট ছিল৷ কিন্ত্ত ইস্টবেঙ্গলের কাচ বিনো জর্জের কৌশলের কাছে হার মানতে হল মোহনবাগানের বিদেশি কোচ ডেগি কার্ডোজকে৷ ইস্টবেঙ্গলের কোচ টেক্কা দিলেন মোহনবাগানের কোচকে৷ প্রথমার্ধে প্রায় টানা ৩৫ মিনিট দাপট দেখিয়ে খেলেছে ইস্টবেঙ্গল৷ গোল করার মতো সুযোগও তৈরি করে ফেলেছিল, কিন্ত্ত সেই সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারেনি৷
মাঝেমধ্যেই মোহনবাগানের ফুটবলাররা ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে হানা দেওয়ার চেষ্টাও করে৷ কিন্ত্ত সেই চেষ্টা কখনওই ফলশ্রুতি হতে পারেনি৷ খেলার ২০ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে বল টেনে নিয়ে ডেভিড বলটি নিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পি ভি বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে৷ চলতি বলে বিষ্ণু শট নিলে তা পোস্টে গিয়ে আঘাত করে৷ আবার মোহনবাগানের অভিষেক সূর্যবংশী ও সুহেল ভাট সম্মিলিতভাবে আক্রমণে উঠে এসেও ইস্টবেঙ্গলকে ভাট দেখাতে পারেননি৷ তবে, দুই বড় দলের মধ্যে যে ধরনের খেলা আশা করা গিয়েছিল, সেই ছবি কখনওই স্পষ্ট হয়নি৷ ইস্টবেঙ্গলের গোলে দেবজিৎ মজুমদারকে খেলানো হয়েছিল৷ এই দেবজিৎকে বলা হত সেভজিত৷ এদিনও মোহনবাগানের ফারদিন আলি গোল করার মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন কিন্ত্ত দেবজিৎ এগিয়ে এসে তা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন৷ খেলার প্রথমার্ধে কোনও পক্ষই গোল করতে পারেনি৷
খেলার দ্বিতীয় পর্বে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগে গতি বাড়াতে তিনজনের পরিবর্তে চারজনকে ফরওয়ার্ডে নিয়ে আসা হয়৷ আবার মোহনবাগান প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য রক্ষণে খেলোয়াড় বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্ত্ত ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে আক্রমণ গড়ে তোলেন৷ ৫০ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গল গোল পেয়ে যায়৷ ডেভিডের বাড়ানো বল থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন পিভি বিষ্ণু৷ বিষ্ণু বক্সের মধ্যে প্রবেশ করেই দু’জন খেলোয়াড়কে ফাঁকি দিয়ে গোলের উদ্দেশ্যে দৌড়তে থাকেন৷ সেই সময় গোলরক্ষক রাজা বর্মণ একটু এগিয়ে এসেছিলেন৷ আর তখনই রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের পিছন থেকে বিষ্ণু শট নেন গোলে৷ গোলরক্ষক নিজের জায়গায় না থাকায় বল গোরে জালে জড়িয়ে যায়৷ বিষ্ণুর গোলে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে যায়৷ গোল হওয়ার পরেই আবার ইস্টবেঙ্গল সহজ সুযোগ পেয়েছিল৷ মোহনবাগানের গোলরক্ষককে একা পেয়েও লাল-হলুদের সায়ন গোল করতে ব্যর্থ হন৷ ৬৪ মিনিটের মাথায় আবার গোল পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল৷
মোহনবাগান যেভাবে খেলছিল, তাতে মনে হয়েছে, তারা ডার্বি ম্যাচ খেলতে নামেনি৷ হয়তো পাড়ার কোনও আমন্ত্রণী ফুটবল খেলতে এসেছে৷ রক্ষণভাগের ভুল বোঝাবুঝিতে গোল পেয়ে ৬৪ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে গিয়েছিলেন জেসিন টিকে৷ জেসিন গোল করতে ভুল করেননি৷ ইস্টবেঙ্গল ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে আরও বেশি আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিতে থাকে৷ তারই মাঝে দ্বিতীয় বার হলুদ কার্ড (লাল কার্ড) দেখে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় জোসেফকে৷ খেলার শেষ ১৫ মিনিট ইস্টবেঙ্গলকে ১০ জনে খেলতে হয়৷ দ্বিতীয় পর্বের সংযুক্তির সময় একটি গোল পেয়ে যায় মোহনবাগান৷ অবশ্য এই গোল হওয়ার ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগের ভুল ছিল৷ হঠাৎই মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা আক্রমণ শানাতে থাকেন৷ গ্লেন মার্টিনস ও সুহেল নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগে তাঁরা প্রবেশ করেন৷ সুহেল ভাট দুর্দান্ত হেডে গোল করে ব্যবধান কমান৷ লিগের ডার্বি ম্যাচের চরিত্র দেখে কখনওই মনে হয়নি, দুই প্রধান মাঠে খেলতে নেমেছে৷ অনেকেই ভেবেছিলেন, ডার্বি ম্যাচ থেকে কোনও একজন তারকা ফুটবলারের উদয় হবে৷ কিন্ত্ত তার কোনও ছবি কোনও মুহূর্তের জন্যই দেখতে পাওয়া যায়নি৷