দি মারিয়াকে নিয়ে ডকু-ছবি

কোপা আমেরিকায় গত জুলাইয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দিয়েছেন আনহেল দি মারিয়া। তবে আর্জেন্টাইন ফুটবলে দি মারিয়ার প্রভাব শিগগিরই বোধ হয় শেষ হওয়ার নয়। সম্প্রতি দি মারিয়াকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ব্রেক দ্য ওয়াল’ যেন তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

আর্জেন্টাইন শহর রোজারিও থেকে উঠে আসা দি মারিয়ার জীবন উত্থান–পতনে ভরপুর। শৈশব থেকেই নানা চড়াই–উতরাই পেরোতে হয়েছে তাঁকে। এমনকি আন্তর্জাতিক ফুটবলেও লম্বা সময় ধরে সাফল্যবঞ্চিত ছিলেন এই উইঙ্গার। ক্যারিয়ারের শেষ ভাগে এসে অবশ্য পাশার দান উল্টে দেন দি মারিয়া নিজেই। আর্জেন্টিনার সাফল্য–খরা দূর করার পথে টানা তিন ফাইনালে গোল করেন। এ যেন নিজের হাতে ভাগ্য লেখা!

এমন পারফরম্যান্স তাঁকে ইতিহাসে জায়গা করে দেওয়ার পাশাপাশি দিয়েছে মহানায়কের মর্যাদাও। শুধু এটুকুই নয়, ঘটনাচক্রে তাঁর নামাঙ্কিত উল্কি জায়গা পেয়েছে একসময়ের সতীর্থ ও পরবর্তী সময়ে কোচ হিসেবে পাওয়া পাবলো আইমারের হাতে। কীভাবে দি মারিয়ার নাম উল্কি আকারে আইমারের বাহুতে জায়গা করে নিয়েছে, ‘ব্রেক দ্য ওয়াল’–এ সেই গল্পই শুনিয়েছেন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের এই সহকারী কোচ।


মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে আইমার তুলে ধরেন দি মারিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বৃত্তান্তও। আর্জেন্টাইন হয়েও তাঁদের সম্পর্কের ভিত তৈরি হয় বেনফিকায়। পর্তুগিজ ক্লাবটিতে তাঁদের সম্পর্ক কেমন ছিল, তা ব্যাখ্যা করে আইমার বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন আমি আসি (বেনফিকায়), সে নিয়মিত একাদশে জায়গা পেত না। পরের বছরই সে নিজেকে মেলে ধরে। এটা অবশ্য হতোই।’
বেনফিকায় নিজেকে মেলে ধরার পুরস্কার হিসেবে ২০১০ সালে দি মারিয়াকে কিনে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। তবে সময়ের পরিক্রমায় আবার দুজনের দেখা হয় আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে। দি মারিয়া তখন দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন এবং আইমার দলের সহকারী কোচ।

লিওনেল স্কালোনির অধীনে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা তখন একটি শিরোপার সন্ধানে তীর্থের কাক হয়ে ছিল। সে ধারাবাহিকতায়ই ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা খেলতে ব্রাজিলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। আর সেখানে আইমার ও দি মারিয়ার মধ্যে ঘটে কাকতালীয় এক ঘটনা। প্রামাণ্যচিত্রটিতেই সেই ঘটনা সামনে আসার পর অনেকে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেছেন। যে গল্পে জড়িয়ে আছে আইমারের ছেলে অগাস্টিনের নামও।

আইমার জানান, ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা চলার সময় ছেলের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো তাঁর। সে সময় খেলা নিয়েই মূলত কথা হতো তাঁদের। অন্তর্দৃষ্টি ও সংবেদনের ওপর ভিত্তি করে ফাইনালে কী হতে পারে, সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিল আইমারের ছেলে। পুরো ঘটনা তুলে ধরে আইমার বলেন, ‘(ফাইনালের) এক দিন আগে আমার ছেলে অগাস্টিন আমাকে লিখেছিল, “আমি ভীত কিন্তু আমার বিশ্বাসও আছে।” অগাস্টিনের সেই বিশ্বাসটা ছিল, ১–০ গোলে আর্জেন্টিনা জিতবে এবং গোলটি করবেন দি মারিয়া। সে যা লিখে পাঠিয়েছিল, তা ছিল, “১–০ দি মারিয়া”।’

ছেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপ্রেক্ষিতে আইমারও পাল্টা একটি প্রতিশ্রুতি দেন। যদি ছেলের কথামতো দি মারিয়ার গোলে আর্জেন্টিনা জেতে, তবে তিনিও তাঁর শরীরে সেই ‘১–০ দি মারিয়া’ লিখে উল্কি করাবেন। ফাইনালে অগাস্টিনের সেই ভবিষ্যদ্বাণী হুবহু মিলে গিয়েছিল এবং ২২ মিনিটে করা দি মারিয়ার একমাত্র গোলেই ২৮ বছরের শিরোপা–খরা ঘুচিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ছেলে অগাস্টিনের এই ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ায় পরে কথা রেখেছিলেন আইমারও। ‘১–০ দি মারিয়া’ লেখা ট্যাটু করান হাতে। ‘ব্রেক দ্য ওয়াল’ নামের প্রামাণ্যচিত্রে আইমার এ তথ্য প্রকাশের পর এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছেন দি মারিয়া।