• facebook
  • twitter
Thursday, 27 March, 2025

দারুণ খেলেও ইস্টবেঙ্গলের স্বপ্নভঙ্গ এএফসি কাপে

কোচ অস্কার ব্রুজো যে কৌশলে খেলা শুরু করতে খেলোয়াড়দের নির্দেশ দিয়েছেন, ঠিক সেইভাবে আক্রমণ শানিয়েছিলেন লাল-হলুদ ব্রিগেডের ফুটবলাররা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

না হল না। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের স্বপ্ন শেষ। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ ফুটবলে শেষ চারে খেলার সুযোগ হাতছাড়া করল কোচ অস্কার ব্রুজোর ইস্টবেঙ্গল। অবশ্য শুরুতেই লাল-হলুদ ব্রিগেড মেসির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই আশা করা গিয়েছিল, হয়তো ইস্টবেঙ্গল যে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়ে খেলা শুরু করেছিল, তা দেখে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন, ইস্টবেঙ্গল এই ম্যাচ জিতে শেষ চারের পথে পা রাখবে। কিন্তু সেই ভাবনা নস্যাৎ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আর্কাদাগ ফুটবল ক্লাব সব মিলিয়ে ৩-১ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে শেষ চারে পৌঁছে গেল। প্রথম লেগের খেলায় ইস্টবেঙ্গল ০-১ গোলে হেরে গিয়েছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে।

স্বাভাবিকভাবে দ্বিতীয় লেগের খেলায় ইস্টবেঙ্গল সংগ্রামী ভূমিকা নিয়ে খেলবে, এমন ধারণা নিয়ে তুর্কমেনিস্তানের পৌঁছে গিয়েছিল। খেলার ১০ মিনিটের মাথায় গোলও পেয়েছিল। গোলদাতা ছিলেন বাউলি মেসি। এমনকি ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গল এগিয়েছিল। কিন্তু ৩৩ মিনিটের মাথায় নুঙ্গা দু’বার হলুদ কার্ড (লাল কার্ড) দেখায় মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হয়। তারপরেই ইস্টবেঙ্গলকে ১০ জনে খেলতে হয়। তবুও বিদেশি দলের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই করেছিল, তা অবশ্যই মনে রাখার মতো। খেলার প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে থাকার পরেও, দ্বিতীয় পর্বে লাল-হলুদ ব্রিগেড কোনও সময়ের জন্যেই আক্রমণ থেকে সরে আসেনি। কিন্তু মাঝেমধ্যেই রেফারির বদান্যতায় আর্কাদাগ ক্লাব বেশকিছু সুবিধা আদায় করে নেয়। তবুও তারা গোল করতে পারেনি। বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তাতে প্রতিপক্ষ দলের গোল করা কঠিন হয়ে গিয়েছিল।

ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ঝড়ের গতিতে বইতে থাকে। এমনকি রিচার্ড সেলিস যে সুযোগটি নষ্ট করেছেন, তার জন্য কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে না। তিনি একাই হ্যাটট্রিক করতে পারতেন। তিনি কখনও গোলের সামনে গিয়ে মাঠের বাইরে বল পাঠিয়ে দিয়েছেন। আবার কখনও গোলমুখে এসেও বল উড়িয়ে দিয়েছেন গোলপোস্টের উপর দিয়ে। আবার কখনও বল পেয়ে এমন দৌড় শুরু করেন, যা গতি হারিয়ে নিজেই বল নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। অবশ্যই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই দোষটা দীর্ঘদিন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যখন ১১ বনাম ১০-এর খেলা চলছে, তারই মধ্যে আবার সেলিস গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে আর্কাদাগ ক্লাব গোল করার সুযোগ তৈরি করতে থাকে।

সাউল ক্রেসপো ও দিমিত্রিয়াস সারা মাঠ জুড়ে খেলেছেন। কিন্তু তারই মধ্যে আর্কাদাগের একটি আক্রমণ রুখে দিতে গিয়ে বক্সের মধ্যে শৌভিক চক্রবর্তী ট্যাকেল করে বসেন। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। পেনাল্টি থেকে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন আন্নাদুর্দিয়েভ। সংযুক্ত সময়ে রেফারি ৬ মিনিট ধার্য করেন। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা চেষ্টা করেছিলেন খেলায় সমতা এলেও এই ফলাফলই থাক। তাহলে টাইব্রেকারে খেলার ভাগ্য নির্ধারণ হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল গোলরক্ষক প্রভসুখনের একটি ভুলে। সামনে এগিয়ে এসেছিলেন প্রভসুখন। সেই সুযোগে হাইডিরো গোল করে আর্কাদাগ দলকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন। ইস্টবেঙ্গল এদিন আগ্রাসী ফুটবল খেললেও শেষ রক্ষা করতে পারল না। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে শেষ হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের দৌড়।

কোচ অস্কার ব্রুজো যে কৌশলে খেলা শুরু করতে খেলোয়াড়দের নির্দেশ দিয়েছেন, ঠিক সেইভাবে আক্রমণ শানিয়েছিলেন লাল-হলুদ ব্রিগেডের ফুটবলাররা। নিঃসন্দেহে বলা যায় ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে সবাই তারিফ করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারলেন না ফুটবলাররা।

গোলের সুযোগ হাতছাড়া করলে এমনই ঘটনা ঘটে থাকে। ফুটবলের সংজ্ঞা হল গোল। সেই গোল যদি ধারাবাহিকভাবে নষ্ট হয়ে যায়, সেখানে জয়ের মুখ দেখা কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে হতাশায় সবাই নীরবতা পালন করেন। ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে লাল-হলুদ শিবিরের ফুটবলারদের।