কোচ কুয়াদ্রাতকে না সরিয়ে আগ্রাসী ভূমিকায় খেলোয়াড়দের মাঠে নামার অঙ্গীকার নিতে হবে

কলকাতা ময়দানে তিন প্রধানের শিবিরে যখনই হারের লজ্জায় দল পিছিয়ে যায়, তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে কোচের উপরে। আর তখন থেকেই কর্মকর্তাদের মধ্যে কথা চালাচালি শুরু হয়ে যায়, এই কোচকে সরিয়ে দিতে হবে। আর তাঁদের সঙ্গে বেশকিছু ফুটবলার গলা মিলিয়ে নিজেদের দুর্বলতাকে ঢেকে রাখতে চান। ব্যর্থতার জন্য সব দোষ গিয়ে পড়ে কোচের উপরে। এই ঘটনা কোনও নতুন নয়। যাত্রাপালায় যেমন নায়ক পরিবর্তন হয়, ঠিক সেইভাবেই দলের কোচ বদলের একটা নাটক শুরু হয়ে যায় টানা হারের কারণে। আমরা হয়তো ভাবি, কোচ ফুটবলারদের সেইভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, কোচ প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি এই কথাটা বাস্তবে কি ঠাঁই পায়। কর্মকর্তারাও তাঁদের নির্বাচন পদ্ধতিকে ঢাকা দেওয়ার জন্য কোচের উপরেই দোষারোপ করে নিজেদের দায় সরিয়ে রাখতে চান।

গত শুক্রবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে ইস্টবেঙ্গল ২-৩ গোলে এফসি গোয়ার কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভাবতেও অবাক লাগে, রক্ষণভাগের ভুলে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যেই লাল-হলুদ শিবিরকে দুই-দুটো গোল হজম করতে হয়। তখন কি কেউ চিৎকার করে বলেছেন, রক্ষণভাগের ভুলে গোয়ার ফুটবলাররা কোনওরকমভাবেই বাধা না পেয়ে গোল করে এলেন? এখানে কোচ কী করবেন? আর পিছিয়ে থাকার পরেও ইস্টবেঙ্গল কেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে ব্যর্থ হল? এক্ষেত্রে কিছুটা দোষ দেওয়া যেতে পারে কোচকে। খেলোয়াড়দের জন্য যে অঙ্কে খেলতে বলা হয়েছিল, সেখানে অঙ্কটা অন্যরকম কেন উপস্থাপনা করতে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বললেন না? অবশ্যই কোচ দলের হারের জন্য দায়ী হবেন না, এমন নয়। কিন্তু খেলোয়াড়দের দায়িত্ব অনেক বেশি। মাঠে নেমে তাঁরাই লড়াই করেন। একজন অবশ্যই সেনাপতি থাকেন যুদ্ধে। সেই যুদ্ধের কৌশলটা কীরকম হবে, তা তো অধিনায়ক সতীর্থ খেলোয়াড়দেরও পরামর্শ দিতে পারতেন কোচের নির্দেশে। প্রথম পর্বের শেষের দিকে পেনাল্টি থেকে একটা গোল শোধ করলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। আর সেখানে ইস্টবেঙ্গল থেকে বিতারিত বোরহা পেরেরা তিনটি গোল করে হ্যাটট্রিক করে বুঝিয়ে দিলেন, ‘তোমরা আমাকে চিনতে পারোনি।’ সেই কারণেই গ্যালারির দর্শকরা বোরহাকে অভিনন্দন জানাতেও ভুল করেননি। খেলার শেষের দিকে বোরহাও যেমন একটা ভুল করেছিলেন, তেমনই ইস্টবেঙ্গল আরও একটি গোল করলেও হারের লজ্জা থেকে সরে আসতে পারেনি। এমনকি, ১০ জনে খেলা গোয়াকে পেয়েও ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বরঞ্চ গোয়া যদি আরও বেশি গোলে জিতত, তাতেও কিছু বলার ছিল না।

খেলা শেষ হতেই লাল-হলুদ কোচ কার্লোস কুয়াদ্রাতের উদ্দেশে সমর্থকরা ‘গো ব্যাক’ বলে চিৎকার শুরু করলেন। মাথা নীচু করে কুয়াদ্রাত ওই স্লোগান শুনতে শুনতে ড্রেসিংরুমের দিকে পা বাড়ান। জানি না, সেই মুহূর্তে ফুটবল কর্মকর্তারা কোচ কুয়াদ্রাতকে কোনও সান্ত্বনা দিয়েছিলে কিনা। আইএসএল ফুটবলে দুটো ম্যাচ পরপর হেরে যাওয়ার পরে কর্মকর্তারা নতুন কোচের সন্ধানে নেমে পড়েছিলেন। অবশ্য এর সত্যতা কতটা ঠিক ছিল, জানা না থাকলেও তৃতীয় ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরে সেই সন্দেহটা সত্যি হলেও বলার কিছু থাকবে না। অভিমানী কোচ কুয়াদ্রাত বলেছেন, চোট-আঘাত ও অন্যান্য কারণে দল গঠনে কিছু সমস্যা তৈরি হয়ে থাকলেও এখন থেকে রিজার্ভ বেঞ্চে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের নিয়ে দল গঠনের একটা ভাবনা রয়েছে। সবসময়ই যে ফুটবলাররা ভালো খেলবেন, তা নয়। কিন্তু খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা জেদ থাকা প্রয়োজন রয়েছে। মাঠে নামার আগেই যদি মানসিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়লে সেই ম্যাচে ভয় পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। সবই খেলার একটা অঙ্গ। তবুও মনে রাখতে হবে, যুদ্ধে নামলে কেউই হারতে চায় না। কোচের অভিমত, আরও পরিশ্রম করতে হবে খেলোয়াড়দের। ভবিষ্যতের জন্য ভাবতে হবে। তরুণ খেলোয়াড়রা অনেক বেশি আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামতে ভালোবাসেন। সমর্থকরা আবেগে হয়তো অনেক কিছুই বলতে পারেন, কিন্তু ক্লাবকে ভালোবেসে এবং সমর্থকদের অনুপ্রেরণায় এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নিতে হবে লাল-হলুদ ব্রিগেডকে।