দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাওয়ার পরে ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে ক্রিকেট মহলে অনেক চর্চা শুরু হয়। এমনকি প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও থেমে থাকেননি। তবে, গৌতম গম্ভীর নিজে কখনওই ভারতীয় দলের ব্যর্থতার জন্য ক্রিকেটারদের কোনও দোষ দিতে চাননি। আসলে তিনি মনে করছেন, ভারতীয় দলের এই অবস্থার জন্য ভাগ্য অনেকটা খেলা করেছিল। যার ফলে জয়ের কাছাকাছি এসেও হার স্বীকার করতে হয়েছে। এমনকি অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, গৌতম গম্ভীরের জায়গায় নতুন কোচকে আনা হোক বর্ডার-গাভাসকার ট্রফির আগেই। কিন্তু ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড এ ব্যাপারে এখনই কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। কর্মকর্তারা এখনও বিশ্বাস করেন গৌতম গম্ভীরের উপরেই। অনেক সময় নানা কারণে ক্রিকেট শিবির বিধ্বস্ত হয়ে যায়। তাই এককভাবে কারও উপরে দোষারোপ দেওয়া ঠিক কাজ হবে না। তাই অপেক্ষা করতে হবে আগামী দিনে কোচ ও ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের উপরে।
প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় মঞ্জেরকর ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের ব্যবহার এবং আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, গম্ভীরকে কখনওই সাংবাদিক বৈঠকে পাঠানো উচিত নয়। তিনি যেভাবে কথাবার্তা বলেন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন, সেটা ঠিক পথ নয়। কখনও তিনি সোজাসাপটা কথা বলেন, আবার কখনও পছন্দমতো কথা বলতে ভালোবাসেন। এটা মনে রাখতে হবে, কোচ গম্ভীর যখন দলের হয়ে কথা বলবেন, তখন অন্যরকম ভূমিকা নিতে হয়। সবসময় চাঁচাছোলা ভাষায় কথা বলা ঠিক নয়। অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে গৌতম গম্ভীর সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিলেন। একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রিকি পন্টিং অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ভাবুন। ভারতীয় দলকে নিয়ে ভাবতে হবে না। এই ধরনের কথার মধ্যে দিয়ে কোচের উন্মাসিক মনোভাব প্রকাশ পায়। এটা ঠিক নয়। তাই বলতে হবে, কোচ নিজের জায়গায় থেকে দলের জন্য কাজ করুন। আর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠানো হোক অজিত আগরকর বা অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। আসলে বিতর্কিত মন্তব্য থেকে অন্য ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই অবশ্যই সতর্ক হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে এখনই গৌতম গম্ভীর কোনওরকম প্রতিক্রিয়া জানাননি।
কোচ গৌতম গম্ভীরের প্রশিক্ষণে অস্ট্রেলিয়া সফরে উড়ে যাবে ভারতীয় দল। সেখানে পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলবে ভারত। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মা যদি প্রথম ম্যাচে না থাকেন, তাহলে কে অধিনায়ক হবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কোচ গম্ভীর সরাসরি বললেন, তখন অধিনায়কের দায়িত্ব নেবেন যশপ্রীত বুমরা। প্রথম টেস্ট ম্যাচ হবে ২২ নভেম্বর থেকে পার্থে। তারপরেই কোচ বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে ভাবার কোনও কারণ নেই। তার বদলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রতিটি ম্যাচের দিকে আলাদা ভাবে নজর রাখতে হবে। প্রতিটি টেস্ট ম্যাচই দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভালো খেলতে হবে এবং জয় তুলে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে রোহিতের বদলে ওপেনার হিসেবে কাকে পছন্দের তালিকায় রাখবেন কোচ? এই প্রশ্নের উত্তরে অভিমত জানিয়ে বলেন, রোহিতের বদলি হিসেবে দলের সঙ্গে রয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ ও কে এল রাহুল। তাই মাঠে নামার আগে সেরা একাদশ গঠন করা হবে। তাই কে খেলবেন, বা কে খেলবেন না, তখন চিন্তা করা যাবে। এমনিতেই যশপ্রীত বুমরা সহঅধিনায়ক হিসেবে দলের সঙ্গে রয়েছেন। এই মুহূর্তে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার জন্য প্রথম স্থান থেকে ছিটকে গিয়েছে ভারত। এই প্রসঙ্গে কোচ বলেছেন, পয়েন্টের টেবলের দিকে তাকানোর কোনও দরকার নেই। অস্ট্রেলিয়া সফরে মনোনিবেশ করাটাই আসল লক্ষ্য। আশা করছি, জিততে পারব।
কোচ গৌতম গম্ভীর সবসময়ই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। তাই তিনি বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, জানতাম এটা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এমনকি কঠিনও। তাই কীভাবে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়, তা জানা আছে। আমি কখনওই নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচ হেরে যাওয়ায় কোনও ক্ষোভের মুখে পড়িনি। যে ভুলগুলো হয়েছে, সেই ভুলগুলো এখন শোধরানোর দিকে চেষ্টা করে চলেছি।
আবার শার্দুল ঠাকুরকে নিয়ে অবস্থান জানিয়ে কোচ বলেন, শার্দুল ঠাকুর অলরাউন্ডার হলেও ভারতীয় দলে খেলা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই শার্দুলের জায়গায় নীতীশ রেড্ডিকে জায়গা দেওয়া উচিত। কিন্তু গত অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলের হয়ে গাব্বায় দারুণ বল করেছিলেন। উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রানও করেছিলেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে অর্ধশতরানও। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। সবসময় চেষ্টা করা হবে সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গঠন করা। সেই দলের ক্রিকেটাররাও ভালো খেলার জন্য চেষ্টা করবেন।
এদিকে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছেন নীতীশ রেড্ডি। নীতীশ অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে দুটো ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু হর্ষিত রানাকে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের বিরুদ্ধে কোনও ম্যাচেই খেলানো হয়নি। এ ব্যাপারে গৌতম গম্ভীর বলেন, রানা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলছে। ওকে এখনই বেশি চাপ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অসমের বিরুদ্ধে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলায় অর্ধশতরান করেন। এবং পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন। খুবই ভালো খেলার নজির রেখেছে। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্তে উপনীত হই, ওকে আরও একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলানোর প্রয়োজন নেই। একজন পেসার যদি তরতাজা থাকে, সেক্ষেত্রে তার মানসিক দৃঢ়তা এবং আত্মবিশ্বাস বড় করে দেখা দেয়। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ বেশ কিছুদিন ধরেই চলবে। তাই বোলিং কোচ, ফিজিও ও অন্যান্যরা রানাকে এখনই ভারতীয় দলে না রাখাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। তবুও গৌতম গম্ভীর কোচ হিসেবে তরুণ ক্রিকেটারদের দিকে নজর রাখছেন।