রিঙ্কুকে নিয়ে মুখ খুললেন প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর ও রোহিত শর্মা

নিজস্ব প্রতিনিধি— টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে রিঙ্কু সিংয়ের জায়গা না হওয়ায় ক্রিকেটপ্রেমীরা দারুণভাবে হতাশ৷ এমনকী, ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন করেছেন, কেন প্রথম ১৫ জনের দলে রিঙ্কুর জায়গা হল না? সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকেই৷ বার্তা পৌঁছতেই নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগরকর স্পষ্ট জানিয়েছেন কেন রিঙ্কু সিংকে রাখা সম্ভব হল না৷ তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন৷ তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, আলোচনায় সমস্ত বিষয়গুলি উঠে এসেছিল৷ রিঙ্কুর কোনও দোষ নেই৷ সবটাই দলের ভারসাম্যের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছে৷ ওই বৈঠকে অধিনায়ক রোহিত শর্মাও ছিলেন৷ রোহিত শর্মার বিকল্প দিতে গিয়ে রিঙ্কুকে দলে রাখা সম্ভব হয়নি, এমনই কথা জানতে পারা গিয়েছে৷ আগরকর বলেন, দু’জন রিস্ট স্পিনার রয়েছেন৷ এতে রোহিদের হাতে আরও বিকল্প তুলে দিতে হবে৷ তাই এই ব্যাপারটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ সবদিক দিয়ে বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় রিঙ্কুর ব্যাপারে৷ শেষ পর্যন্ত রিঙ্কুকে রাখা হয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চে৷ এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় ১৫ জনের দলে রিঙ্কুর নামটা অবশ্যই ভাবা হয়েছিল৷ তাই শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তাভাবনা করে রিঙ্কুকে প্রথম দলে রাখা সম্ভব হয়নি৷ একই কারণে বাদের তালিকায় থাকতে হয়েছে শুভমন গিলকে৷ দু’জনেই অত্যন্ত দক্ষ খেলোয়াড়৷ দলের প্রয়োজনে দু’জনেই ভালো ব্যাট করেন৷ যেখানে রোহিত শর্মার সঙ্গে যশস্বী জয়সওয়াল, বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদবকে যদি দলে রাখতে হয়, সেক্ষেত্রে এই দুই খেলোয়াড়ের নামটা তো পরে আসবেই৷ প্রথম তিনজন যখন জায়গা পেয়ে গিয়েছেন, তখন নতুন করে আর ভাবার দরকার হয় না৷ আবার এটাও ঠিল, আইপিএল ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের দিকে যদি তাকানো যায়, সেক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত রিঙ্কু সেইভাবে সফল হননি৷ একই কথা প্রযোজ্য শুভমন গিলের ক্ষেত্রেও৷ এই দুই খেলোয়াড় অনেক সময় যে কোনও ম্যাচে ফিনিশার হতে পারেন৷ এই ভাবনা নিয়ে কখনওই দল গঠন করা যায় না৷ দু’জনেই তো আইপিএল ক্রিকেটে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলে ফেলেছেন৷ তাঁদের খেলা দেখেছেন নির্বাচক কমিটির সদস্যরা এবং প্রাক্তন ক্রিকেটাররা৷ প্রাক্তন ক্রিকেটার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত থেকে শুরু করে আকাশ চোপরা ও ইরফান পাঠানরা মনে করেছেন, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রিঙ্কু সিং থাকবেন৷ কিন্ত্ত সেই ভাবনা সত্যি না হওয়া তাঁরা প্রত্যেকে অবাক হয়েছেন৷

প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকর আরও বলেছেন, ভারতীয় দল গঠন করা হয়ে গিয়েছিল প্রায় ৮০ শতাংশ আইপিএল ক্রিকেটের আগেই৷ বাকি ২০ শতাংশ খেলোয়াড়দের বাছাই করা হয়েছে আইপিএল ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে৷ ১৫ জনের দল বাছাই করতে গিয়ে আইপিএল ক্রিকেটে কতটা ভূমিকা ছিল? এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচক বলেন, এই টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে থেকেই বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে৷ আমাদের মাথায় বেশ কয়েকজন উঠতি খেলোয়াড়ের নাম উঠে এসেছিল৷ তাঁদের পারফরম্যান্স ও ফিটনেসের উপরে নজর ছিল৷ আমরা এটাও দেখছিলাম, কারও যদি চোট লাগে, তাহলে তাঁদের বিকল্প হিসেবে কাকে নেওয়া হবে৷ তাহলে কি আইপিএল ক্রিকেটের কোনও গুরুত্ব ছিল না দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্নের উত্তরে অজিত আগরকর বলেন, সেই বাছাই তালিকায় শিবম দুবের নামটা এসে গেছে৷ রোহিত বলেন, আইপিএল ক্রিকেট ভালো খেলেছে শিবম দুবে৷ ওঁর ব্যাটে ভালো শট আছে৷ ওঁর দক্ষতা দেখেই দলে নেওয়া হয়েছে৷ আশা করা যায়, বিশ্বকাপে শিবম ভালো খেলবে৷ রোহিত এবার বলেন, একটা পরিকল্পনা নিয়ে দল গঠন করা হয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, কোথায় খেলা হচ্ছে, সেখানকার উইকেটের চরিত্র কেমন এবং পরিবেশকেও ভালো করে জানতে হবে৷ এর থেকে আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন আছে কিনা, আমার জানা নেই৷ তবে প্রতিপক্ষ দলকে জানতে হবে৷ আসলে, সীমিত সংখ্যক ওভারের ক্রিকেট একটু অন্য রকমের হয়৷ মাথায় রাখতে হবে, ব্যাটসম্যানদের ভূমিকার চেয়েও বোলারদের একটা গুরুত্ব বেশি থাকে৷ সেই কারণেই চারজন স্পিনারকে নেওয়া হয়েছে ভারতীয় দলে৷ আর তিনজন আছেন পেসার৷ আবার এটাও দেখা হয়েছে, বোলারদের মধ্যে কে ভালো রান করতে পারেন৷ চতুর্থ স্পিনার হিসেবে হার্দিক পাণ্ডিয়াকে নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর ব্যাটে রান আছে৷ দু’জন স্পিনারও ভালো ব্যাট করে থাকেন৷ তাই বিকল্প হিসেবে খেলোয়াড়দের ভিড় বাড়ানো হয়নি৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে এবিষয়ে আরও বেশি কথা বলা সম্ভব হবে৷ শিবমের প্রশ্নে রোহিত বলেন, আইপিএল ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত শিবম বল করতে পারেননি কিন্ত্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে সে দারুণ বল করেছে৷ এটাও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২ জুন থেকে শুরু হচ্ছে৷ ভারতের প্রথম খেলা ৫ জুন৷ প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড৷ দ্বিতীয় খেলায় রোহিতরা মাঠে নামবেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে৷