আইএসএল ফুটবলে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতা এবং বেতন না পাওয়ার অভিযোগে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ পদত্যাগ করলেন। বুধবার পদত্যাগ করার পরেই কোচ চেরনিশভ তাঁর হোটেল ছেড়ে চলে যান। গত ম্যাচে মুম্বই সিটিএফসি কাছে তিন গোলে হেরে যাবার পরেই কোচ হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি আর দলের দায়িত্বে থাকবেন না। তবে কিছুদিন আগে থেকেই মহমেডান শিবিরে বকেয়া বেতন নিয়ে ফুটবলাররাও বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এমনকি ওই ফুটবলাররা অনুশীলনে নামতেন না। কোচ চেরনিশভের কোনও বক্তব্য ছিল না এ ব্যাপারে। তবে ধারা বাহিক ব্যর্থতার জন্য কোচের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই সময় ক্লাব কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছিলেন কোনওভাবেই কোচকে সরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছেন না তাঁরা। গত তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না কোচ। তিনি বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।
কোচ চেরনিশভ নিজেই সোশ্যাল মিডিয়তে লিখেছেন, আমার কোচিং জীবনে সবচেয়ে কঠিন এবং দুঃখের সিদ্ধান্ত। মহমেডানের সঙ্গে অনেক ব্যাপারে আমার সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়েছে আবার ভালোবাসাও পেয়েছি। এটা মনে রাখতে হবে আমি পেশাদার কোচ। কোনওভাবেই তিন মাসের বেতন বকেয়া নিয়ে কাজ করা যায় না। এই মরশুমে যে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি নই। কখনও সমস্যাকে ভয় করিনি। সব সময় চেষ্টা করেছি যে কোনও পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে। কিন্তু এটা দীর্ঘদিন চলে না। চলতেও পারে না। তাই বাধ্য হয়ে চোখে জল নিয়ে এই কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছি। এই দায় অবশ্যই ক্লাব কর্মকর্তাদের। তাঁরা আমার সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। প্রয়োজনে উচ্চস্তরে এ ব্যাপারে কথা বলব এবং এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় সেটা দেখতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বেশ কিছুদিন ধরেই সাদা কালো শিবিরের আর্থিক অবস্থা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। শুধু কোচের সঙ্গে নয় ফুটবলাররাও একই পথের সঙ্গী। তাদেরও বেতন হচ্ছে না। কলকাতায় মহমেডান স্পোর্টিং যখন কেরল ব্লাস্টার্সের সঙ্গে খেলা ছিল তখন এই ঘটনা বড় আকার নিয়েছিল। সাময়িকভাবে কর্মকর্তারা কথা বলে ওই দিনের ম্যাচে ফুটবলারদের খেলতে অনুরোধ করেছিলেন এবং খেলেও ছিলেন। ম্যাচটা তাদের দখলেই ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় বকেয়া অর্থ মেটানো হয়নি ক্লাবের পক্ষ থেকে। এইভাবে একটা ক্লাব কিভাবে চলবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এদিন যখন প্রধান কোচ পদত্যাগ করেন তখন সাদা কালো শিবিরে এই ব্যাপারটা আরও ঘনীভূত হয়। বিদেশি খেলোয়াড় সহ অন্য ফুটবলাররাও বেতন পাচ্ছেন না বলে বার বার অনুরোধ করেও কোনও সুরাহা হয়নি।
বর্তমান অবস্থায় কিভাবে ক্লাব চলবে তা বিনিয়োগকারী সংস্থারাও সেইভাবে হস্তক্ষেপ করছে না। সেই কারণে সমস্যার সমাধানের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না ফুটবলাররা। যে সব নতুন বিদেশি ফুটবলাররা এসেছেন তাঁদের ক্ষেত্রেও এমনই ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। এদিকে আগামী শনিবার মহমেডান স্পোর্টিংয়ের খেলা রয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে।
ওই ম্যাচে সাদা কালো ব্রিগেড কিভাবে লড়াইয়ে নামবে সেই নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে সমর্থকদের মধ্যে। যেভাবে ক্লাব অভ্যন্তরে ডামাডোল তৈরি হয়েছে তাতে কোথাকার জল কোথায় যায় সেটাই দেখবার বিষয়। মনে রাখতে হবে চলতি মরশুমে আইএসএল ফুটবলে খেলবার ছাড়পত্র পায় মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব। প্রথম লিগে একটু নজর কাড়লেও পরবর্তী সময় হার আর ড্রয়ের খেলা খেলেছে মহমেডান স্পোর্টিং। তবে কোচ চেরনিশভ ক্লাব কর্মকর্তাদের দিকেই অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন এই মুহূর্তে আর কোনওভাবেই রাশিয়ান কোচ চেরনিশভের আবার ফিরে আসার জায়গা নেই। তাই হয়তো ক্লাবের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু বলা না হলেও, মনে করা হচ্ছে শনিবারের ম্যাচে সাদা কালো শিবিরের কোচের দায়িত্ব বর্তাবে মেহরাজের উপর।