• facebook
  • twitter
Wednesday, 1 January, 2025

বুমরার বোলিংয়ে ভারতীয় শিবিরে আশার আলো, অস্ট্রেলিয়া ৩৩৩ রানে এগিয়ে

অধিনায়ক কামিন্স ৪১ রান করার ফাঁকে ৯০টি বল খেলেছেন তার মধ্যে চার চারটি বাউন্ডারি। নাথানের সঙ্গে নৈশপ্রহরীর হিসেবে ব্যাট হাতে খেলতে নামেন স্কট বোল্যান্ড।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মেলবোর্ন— একেই বলে ক্রিকেট। বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ দিনে যশপ্রীত বুমরার অসাধারণ বোলিংয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছে ভারত। বুমরা তাঁর দুরন্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া দল বেশ বেকায়দায় পড়ে গেছে। জয়ের লক্ষ্যে ভারতীয় শিবিরে রোদের হাতছানি। তবে রোহিত ব্রিগেডকে এখন সাহসী ক্রিকেট খেলতে হবে। দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৩ রানে এগিয়ে রয়েছে। এখনও তাদের একটি উইকেট হাতে রয়েছে।

রবিবার ভারতীয় দলের নীতিশ কুমার রেড্ডি ও মহম্মদ সিরাজ ৩৫৮ রান নিয়ে খেলতে নামেন। শনিবারই নীতিশ ঝকঝকে একটা শতরান উপহার দিয়েছেন। নীতিশ ১১৪ রানের মাথায় নাথান লিয়নের বলে মিচেল স্টার্কের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভেলিয়নে ফেরত যান। মহম্মদ সিরাজ ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৬৯ রানে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ৪৭৪ রানের জবাবে ভারত ৩৬৯ রান তুলে ১০৫ রানে পিছিয়ে পড়ে। তবে ভারতীয় দলের লড়াকু মনোভাব নতুন বার্তা দেয়।

এদিকে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে আক্রমনাত্মক খেলা খেলতে গিয়ে বেশ কিছুটা চাপে পড়ে যায়। বিশেষ করে জশপ্রীত বুমরার বিধ্বংসী বোলিংয়ে মোকাবিলা করতে গিয়ে অস্ট্রেলিায় শিবিরের উইকেট পড়তে থাকে। বুমরার পাশে মহম্মদ সিরাজও বড় ভূমিকা নেন। অভিষেক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার স্যাম কনস্টাস ব্যাটিংয়ে সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ব্যর্থ। দলের ২০ রানের মাথায় বুমরার স্পেনে কনস্টাস সরাসরি বোল্ড আউট ড্রেসিং রুমের দিকে পা বাড়িয়ে দেন। তাঁর ব্যাটে এসেছে মাত্র ৮ রান। উসমান খাওজার সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে লাবুসেন খেলতে আসেন। ভালই খেলছিলেন খাওজা ও লাবুসেন। এবারে ভারতের মহম্মদ সিরাজ আঘাত হানে অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। ৪৩ রানের মাথায় খাওজা ব্যক্তিগত ২১ রানে সিরাজের বলে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভেলিয়নের পথে এগিয়ে দেন।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে লাবুসেনের সঙ্গে হাত মেলান স্টিভ স্মিথ। কিন্তু বেশক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি স্মিথ। স্মিথ ১৩ রান করে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মহম্মদ সিরাজের বলে উইকেট রক্ষক ঋষভ পন্থের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তখন অস্ট্রেলিয়ার স্কোর বোর্ডে ছিল ৮০ রান। লাবুসেনের সঙ্গে খেলতে আসেন ট্র্যাভিস হেড। তিনি মাত্র ১ রান করে যশপ্রীত বুমরার বলে নীতিশ রেড্ডির হাতে তুলে দিয়ে উইকেট ছেড়ে যান। মাঠে আসেন মিচেল মার্শ। তিনি কোনও রান না করেই প্যাভেলিয়নে ফিরে যান। বুমরার বলে তিনি ঋষভের হাতে ধরা পড়েন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে লাবুসেনের সঙ্গে সঙ্গী হন অ্যালেক্স ক্যারি। ক্যারির উইকেটটি ভেঙে দেন বুমরা। তাঁর ব্যাট থেকে আসে মাত্র ২ রান। ৯১ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৬টি উইকেট পড়ে যায়। এবারে সপ্তম উইকেট জুটিতে সঙ্গ দিতে মাঠে আসেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। অলরাউন্ডার প্যাট কামিন্স বেশ গুছিয়ে খেলবার চেষ্টা করতে থাকেন। ভারতীয় বোলারদের মোকাবিলা করবার জন্যে দেখে শুনে খেলতে থাকেন কামিন্স।

সঙ্গ দিতে থাকেন লাবুসেন। লাবুসেনের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল হয়তো তিনি শতরানের দিকে ছুঁটতে চলেছেন। কিন্তু মহম্মদ সিরাজের একটি বল খেলতে গিহয়ে এলবিডবলিউ হয়ে যান। তখন তাঁর ব্যাটে ৭০ রান। অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডে তখন ১৪৮ রান। লাবুসেন আউট হওয়ার পরেই ভারতীয় শিবিরে উচ্ছ্বাস দেখতে পাওয়া যায়। বুমরা ও সিরাজ যেভাবে আশার দীপ জ্বালাতে থকেন তাতে খুশির হাওয়া ভারতের শিবিরে খেলা করবে তা স্বাভাবিক। প্যাট কামিন্সের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে খেলতে আসেন মিচেল স্টার্ক। দলের স্কোর বোর্ডে যখন ১৫৬ রান, সেই সময় স্টার্ক ৫ রানে নীতিশ রেড্ডির ছোড়া বলে আউট হয়ে হতাশ মনে ব্যাট হাতে প্যাভেলিয়নে ফেরত যান। এবারে প্যাট কামিন্সের সঙ্গে জুটি বাঁধে নাথাম লিওন। নাথামের হাতে বেশ জোর আছে। কামিন্সও বেশ জমে গিয়েছিলেন উইকেটে। অধিনায়ক রোহিত বোলার বদলে কামিন্সকে চাপে রাখার চেষ্টা করেন। সেই অঙ্কে সফল হন রোহিত। রবীন্দ্র জাদেজার বলে ঋষভ পন্থের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।

অধিনায়ক কামিন্স ৪১ রান করার ফাঁকে ৯০টি বল খেলেছেন তার মধ্যে চার চারটি বাউন্ডারি। নাথানের সঙ্গে নৈশপ্রহরীর হিসেবে ব্যাট হাতে খেলতে নামেন স্কট বোল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত নাথান ৪১ এবং বোল্যান্ড ১০ রানে অপরাজিত থেকে যান চতুর্থ দিনের খেলার শেষে। অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ২২৮ রান তুলে ৩৩৩ রানে এগিয়ে রয়েছে। হাতে তাদের একটা উইকেট থাকলে সোমবার শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়া কী করবে তারপরেই ভারতীয় দলের কৌশল তৈরি করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভারতীয় বোলাররা যেভাবে অস্ট্রেলিয়ার শিবিরে আঘাত হেনেছেন তা তারিফ করার মতন। বিশেষ করে বুমরার অসাধারণ ভূমিকাকে প্রশংসা করতেই হবে। বুমরার জন্যে বারতীয় শিবিরে আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ভারতীয়দের কাছে ম্যাচ জেতাটা হয়তো কঠিন হতে পারে, কিন্তু ক্রিকেটারদের লড়াকু মনোভাবকে কদর করতেই হবে। ভারত যে লড়াই করে ম্যাচের রঙ বদল করতে পারে তা প্রমাণ রেখে দিয়েছে মেলবোর্ন মাঠে। খেলার ফলাফলে হয়তো জয় শব্দটা দু’দলের কাছে কঠিন হবে। খেলা ড্র হয়ে গেলেও ক্রিকেটের রণক্ষেত্রে কেউই কাউকে জায়গা ছাড়ার পক্ষপাতি নন- তা স্পষ্ট বোঝা গেল। আসলে এই ধরনের ক্রিকেট খেলা দেখবার মধ্যে আলাদা একটা মেজাজ আছে। এটা মনে রাখতে হবে ক্রিকেট সবসময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেই ছবিটা দেখতে পাওয়া গেল বক্সিং টেস্ট ম্যাচে চতুর্থ দিনের শেষে। সেই কারণে সোমবার পঞ্চম দিনে রুদ্ধশ্বাস লড়াই দেখবার জন্য দর্শকদের মন ছটফট করবে। তাই আশা করা যায় একটা চ্যালেঞ্জিং ক্রিকেট দেখা যাবে। ভারত ও আস্ট্রেলিয়া দল তাই স্বপ্নের দৌড়ের দিকে চোখ রাখবে।