• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বাক্সবন্দী আইএসএল ফুটবলের শিল্ড তুমি এখন কার?

রনজিৎ দাস: ডুরান্ড কাপ ও আইএসএলের লিগ জেতা হয়ে গেল৷ তবে কি আইএসএলের কাপটা জিতে মোহনবাগান এসজি এই মরশুমে ত্রিমুকুট জয়ের শিরোপা পাবে?লাখ টাকার প্রশ্ন এই প্রশ্ন ময়দানে ঘুরছে৷তবে এরচাইতেও বড় প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে–আইএসএলের শিল্ড জয়ের ট্রফিটা ঐ রাতেই সঞ্জীব গোয়েঙ্কা তার অফিসে কেন নিয়ে গেলেন? সমর্থকদের ক্লাব৷ট্রফি তো প্রথমে ক্লাব ঘরেই সাজানো থাকবে৷ গতমরশুমে আইএসএলের

রনজিৎ দাস: ডুরান্ড কাপ ও আইএসএলের লিগ জেতা হয়ে গেল৷ তবে কি আইএসএলের কাপটা জিতে মোহনবাগান এসজি এই মরশুমে ত্রিমুকুট জয়ের শিরোপা পাবে?লাখ টাকার প্রশ্ন এই প্রশ্ন ময়দানে ঘুরছে৷তবে এরচাইতেও বড় প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে–আইএসএলের শিল্ড জয়ের ট্রফিটা ঐ রাতেই সঞ্জীব গোয়েঙ্কা তার অফিসে কেন নিয়ে গেলেন? সমর্থকদের ক্লাব৷ট্রফি তো প্রথমে ক্লাব ঘরেই সাজানো থাকবে৷

গতমরশুমে আইএসএলের কাপটাও কিন্ত্ত সরাসরি মিষ্টার গোয়েঙ্কার অফিসেই প্রথমে সাজানো হয়েছিল৷ পরে সেই কাপ মোহনবাগান টেন্টে যায়৷ এটাই কি তবে ভবিতব্য? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করলে,সঞ্জীব গোয়েঙ্কাদের এই প্রথাই মানতে হবে৷এটা তো চুক্তির ধরনের উপর নির্ভর করে৷ চুক্তি ও সৌজন্যের মধ্যে পার্থক্য থেকে যায়৷সৌজন্যের বশতঃ উনি যা করবেন সেটা সাময়িক হবে৷ কিন্ত্ত দিনেরশেষে চুক্তি শেষ কথা বলতে চাইবে৷ এখানে অন্য কারুর উদাহরন টানলে চলেনা৷

উদাহরণ দেওয়া যায়৷ যেমন,২০২০/২১ মরশুম থেকে বড় দুই ক্লাব ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান আইএসএলে ৪বছর খেলছে৷ মোহনবাগান এই ৪বছরই লিগ টেবিলের ১ থেকে ৩র মধ্যে থেকেছে৷ ইষ্টবেঙ্গল কিন্ত্ত লিগ টেবিলের শেষের দিকে ৯ থেকে ১১র মধ্যে থেকেছে৷মোহনবাগান গত ৪ বছরে প্লেঅফে খেলছে৷ আগের ৩বছরে ২বার ফাইনালে উঠে ১বার চ্যাম্পিয়ান হয়েছে৷ এবারও সেমিফাইনাল থেকে খেলা শুরু করবে৷ এই পার্থ্যকের নিশ্চয়ই কোন কারন আছে৷মোহনবাগানের ডিফেন্সে ২৪বছরের ভারতীয় দলের ফুটবলার আনোয়ার আলি খেলে৷ আর প্লে অফের লড়াইয়ে ইষ্টবেঙ্গলের ডিফেন্সে অবসরের মুখে থাকা ৩৮ বছরের খাবরা খেলে থাকে৷ বাংলায় প্রবাদ আছে যেমন গুড় তেমন মিষ্টি৷ “গুড়ে”র স্বাদ বুঝতে হবে৷

এর বাইরেও কিছু কথা থেকে যায়৷ সমর্থকদের ইমোশনে এটা কি আঘাত দেওয়া নয়?

মিষ্টার গোয়েঙ্কা হয়তোবা সমর্থকদের ইমোশনকে আঘাত না দিয়ে বোঝাতে চাইছেন–সাফল্য পেতে গেলে,ওনার ‘শেয়ার’টাকে সন্মান দিতে হবে৷ এটা যখন স্বাভাবিক মান্যতায় আসবে,তখন ট্রফি নিশ্চয়ই আগে টেন্টে যাবে৷ সাফল্য পাওয়াটাই প্রধান লক্ষ্য হোক৷

এই চোখে চোখ রেখে সাফল্য পাওয়ার জন্য মোহনবাগানের সভাপতি টুটু বসু ক্লাবের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছেন৷বহুজাতিক সংস্হাকে ক্লাবে জায়গা দিয়েছেন৷ কিন্ত্ত দিনেরশেষে কি সেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য ধরা দিয়েছিল? আইএসএলে মোহনবাগানের এটিকের সাথে মার্জারের আগে ম্যাকডোয়েল মোহনবাগান ও কিংফিশার ইষ্টবেঙ্গলের সাফল্যের পার্থক্য কেমন ছিল? ১৯৯০/৯১ সাল থেকে ২০১৯/২০ মরশুম ধরলে,২৮ বছরে বাংলায় ও সর্বভারতীয় স্তরে–কার কেমন সাফল্য?

২৮ বছরে কলকাতা লিগে ম্যাকডোয়েল মোহনবাগান মাত্র ৯বার চ্যাম্পিয়ান হয়েছে৷ আর, কিংফিশার ইষ্টবেঙ্গল কিন্ত্ত ঐসময়ে ১৯বার কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে৷ জাতীয় লিগ শুরু হতে দেশের অন্যান ট্রফির মত বাংলার আইএফএ শিল্ডেও প্রতিবন্ধকতা এসেছে৷ একসময় আইএফএ শিল্ড অনূর্ধ-১৯-এর টুর্নামেন্ট হয়ে পড়ে৷ সেখানেও কিন্ত্ত কিংফিশার ইষ্টবেঙ্গল সাফল্যের নিরিক্ষে ম্যাকডোয়েল মোহনবাগান থেকে এগিয়ে আছে৷জাতীয় লিগে সাফল্যের ফলাফল একই থাকলেও, আইলিগে ও ফেডকাপে কিংফিশার ইষ্টবেঙ্গল থেকে ম্যাকডোয়েল মোহনবাগান নিশ্চয়ই কিছুটা এগিয়ে আছে৷কিন্ত্ত এই সময়ে সর্বভারতীয় স্তরে কি ম্যাকডোয়েল মোহনবাগান যথাযত সাফল্য পেয়েছে? জাতীয় লিগ ও আইলিগ মিলে ২৮বছরে ১৯বার বাংলার বাইরের দল চ্যাম্পিয়ান হয়েছে৷ সেখানে বাংলার তিনপ্রধানের মোট সাফল্য মাত্র ৯! আর আইএসএল শুরু হওয়ার পর এই প্রতিযোগিতা আরও বেড়েছে৷

অর্থাৎ পরিস্থিতি কেবল ইষ্টবেঙ্গলের সাথে মোহনবাগানের লড়াই করার নয়৷
এই যে,আইএসএলে মুম্বাই সিটি এফসিকে হারিয়ে মোহনবাগান এসজি চ্যাম্পিয়ান হলো–মুম্বাই সিটির চেয়ারম্যান মুম্বাই সিটি এফসির শেয়ার ৬৫% যে সিটি ফুটবল গ্রুপ কিনে নিল, তারা কারা?

ইংলিশ লিগের ম্যাঞ্চেষ্টার সিটি ক্লাব ওনারাই পরিচালনা করেন৷ সেখানেও অনেক বির্তক আছে৷ তদন্ত প্রক্রিয়া আছে৷ কিন্ত্ত গত ৭বছর ধরে পেপের ম্যঞ্চেষ্টার সিটি কিন্ত্ত ইপিএলে শুধুই চ্যাম্পিয়ান আর চ্যাম্পিয়ান৷ এহেন মুম্বাই সিটি এফসির সাথে টক্করে ট্রফি জয়ে ক্যারিশ্মা লাগে৷ মানে যথাযথ অর্থের যোগান লাগে৷ ঠিক সময়ে হুগো বুমাসকে সরিয়ে কাউকেকে আনতে হয়৷ জুয়ানের পরিবর্তে হাবাসে ফিরতে হয়৷ শিল্ড বাক্সবন্দী হয়ে কোথায় ছুটলো–এই আবেগ আঁকড়ে ধরে চলবে?

শিল্ডের এমন পরিণতিতে, টুটুদার মুখটা খুব মনে পড়ছে৷ অসুস্থ শরীর নিয়েও হুইলচেয়ারে মাঠে আসেন৷ মোহনবাগানের ছোটদলের বিরুদ্ধে একটা জয় দেখলে যিনি বাচ্চাশিশুর মত আনন্দে অশ্রু ঝড়ান৷ যার হূদয়ে কেবল সবুজ-মেরুনের রঙ লেগে নেই৷ লাল, হলুদ, নীল, সাদা, সবুজ, মেরুন–রামধনু রঙ্গের হৃদয়ে মাইক্রোফোন হাতে যেন কিছু বলতে চান৷ ..ওরে আমায় একটু মাইক্রোফোনটা দে..একটা কথা বলবো রে… ১৩৭ বছর আগে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “দেবতার গ্রাস” কবিতায় পুন্য লোভাতুর বিধবা যুবতী মোক্ষদার সাগর সংগমে তীর্থস্নানের করুন কাহিনী মনে পড়ে যায়৷

মোক্ষদার রোগগ্রস্ত ছেলে যখন তার সাথে সাগরতীর্থে যাওয়ার বায়না ধরলো তখন মোক্ষদা রাগে বলে ওঠে..
“যাইবি সাগরে! আরে,দসু্য ছেলে
“চল তরে দিয়ে আসি সাগরের জলে!”
মোক্ষদার এই কথাটা মৈত্র মহাশয়ের সাগরসংগম তীর্থস্নানের দলের ব্রাম্মণ দাদাঠাকুর শুনেছিলেন৷ মোক্ষদার ছেলে রাখাল জন্ম থেকেই সূতিকার জ্বরে ভুগছিল৷ রাখালের মাসিই অন্নদা তাকে আগলে রাখতো৷ দুষ্টু রাখলের সাগরের যাওয়া আটকাতে অন্নদা মাসিও চেষ্টা করেছিলেন৷কিন্ত্ত শেষপর্যন্ত ব্রাম্মণ দাদাঠাকুর অন্নদা মাসিকে কথা দিয়েছিলেন যে,তিনি রাখলকে আগলে রাখবেন৷

শেষের পরিনতি হয় ভয়ঙ্কর৷
তীর্থস্নান সেরে ফেরার সময় সাগর অসময়ে অশান্ত হয়ে ওঠে৷ নিরুপায় মাঝি সকলকে দেবতার ঋন শোধ করে দিতে বলেন৷যার যা ছিল সবাই জলে ফেলে দিলেও সাগরের হিংস্রতা কমেনা৷ তখন ব্রাম্মন দাদাঠাকুর মোক্ষদাকে তার ছেলে সাগরকে দিয়ে দেওয়ার কথা মনে করিয়ে, রাখালকে জলে ফেলে দিতে বলে৷

মা হয়ে ছেলেকে কিভাবে জলে ফেলে দেবে?
মোক্ষদার সেই করুন আর্তনাদ.. “শুধু কি মুখের বাক্য শুনেছ দেবতা?
শোন নি কি জননীর অন্তরের কথা?”
রাখলকে তো মোক্ষদার কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে জলে ফেলেই দেওয়া হলো৷ কিন্ত্ত ব্রাম্মণ দাদাঠাকুর তো অন্নদা মাসিকে কথা দিয়েছিলেন, রাখালকে আগলে রাখবেন৷ তার কাছে ফিরিয়ে আনবেন৷ মুহূর্তের মধ্যে দাদাঠাকুর দিকশূন্য হয়ে রাখলকে বাঁচাতে গঙ্গায় দিলেন ঝাঁপ৷