বিদেশের মাটিতে কোচ শঙ্করলালের বড় জয়

প্রতিবেশী দেশের উত্তাল আবহাওয়ের মধ্যেও আমাদের বাংলার এক বাঙালির সাফল‍্য নিয়ে বেশ কয়েকদিন চর্চা চলছে।আশাকরি,আগামী আরও কয়েকদিন এই চর্চা চলতে থাকবে।বিদেশের মাটিতে ভারতের ক্লাবদলের জয়ে বাঙালির অবদান–চর্চা তো হবেই।ইউরোপের দুটো এ্যকাডেমির দলকে একটা টুর্নামেন্টে হারিয়ে দেওয়া–চমক নয়,বাঙালি মস্তিষ্কের ক্ষুরধার পরিচালনা।আরেকটু এগিয়ে বলা যায়–তার দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করতেই হয়।টাটা ফুটবল এ্যকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র শঙ্করলাল চক্রবর্তী তার ফুটবলার জীবনের প্রথম বছরেই গুরুতর আঘাত পেয়ে বসেন।পায়ের আঘাতে কি মস্তিষ্কের মেধাকে দমিয়ে দেওয়া যায়?যায়নি বলেই–বিদেশের মাটিতে বিদেশীদের হারিয়ে এসেছেন।

রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট লিগের ‘দ‍্য নেক্সট জেন কাপে’র খেলায় কেবল বিদেশের মাটিতে শঙ্করলালের জয় আসেনি–ঘরের মাঠেও ইষ্টবেঙ্গল এফসিকে হারিয়ে তার পাঞ্জাব এফসি দল জাতীয় স্তরে চ‍্যাম্পিয়ান হয়েছে।৬মাসের লিগের ১৬টা ম‍্যাচ খেলে তার দল অপরাজিত থেকেছে।ইষ্টবেঙ্গল এফসি যেখানে বিদেশের মাটিতে দ‍্য নেক্সট জেন কাপের ৪ম‍্যাচে ১৮টা গোল খেয়ে মাত্র ১টা গোল করতে পেরেছে,সেখানে পাঞ্জাব এফসি ৪ম‍্যাচে ৮টা গোল খেলেও বিপক্ষদের ৫টা গোল ফিরিয়ে দিতে পেরেছে।

ইষ্টবেঙ্গল এফসি ও মূথুট ফুটবল এ্যকাডেমি মিলে বিদেশের মাটিতে ৮টা ম‍্যাচ খেলে একটাও জয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি।বরং দুটো দল মিলে ২টো গোল দিয়ে ৩২টা গোল খেয়েছে।কোচ শঙ্করলালের পাঞ্জাব এফসি কিন্তু ৪ম‍্যাচের মধ্যে ২টো ম‍্যাচ জিতে ‘৮দলে’ তৃতীয় স্হান পেয়েছে।ইষ্টবেঙ্গল এফসি ৮দলের মধ্যে টেবিলের সবার শেষ স্হানটা পেয়েছে।অথচ,ভারতের তিনটে দলই তাদের প্রথম ম‍্যাচ দারুণ শুরু করেছিল। নামমাত্র ব‍্যবধানে তারা হেরেছিল। ‘হার’ থেকে তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর মানসিকতা কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী দেখাতে পেরেছে–যা ইষ্টবেঙ্গল বা মূথুটের দলের কোচেরা পারেনি।এখানেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রভেদ–বাঙালি এখনও মরে যায়নি।ভারতীয় ফুটবলের জনক, বাঙালি নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর উত্তরসূরীরা আজও জীবিত আছে।শঙ্করলালের জন্য আমরা গর্বিত।গর্বটা আরও বেড়ে যায়–শঙ্করলাল তার কোচিং জীবন আইএফএর ফুটবল এ্যকাডেমি থেকে শুরু করেছিল।


বরানগরের ইন্ডিয়ান স্ট‍্যাটিস্টিক‍্যাল ইনস্টিটিউট ভারতের পরিসংখ্যান বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ স্হান দখল করে আছে।দেশের অন‍্যতম প্রাচীন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম এখানেই অবস্হিত।বাংলার ফুটবলে বরানগরের শঙ্করলালের সাথে সাথে আরেক বাঙালি কোচ রঞ্জন ভট্রাচার্যের নাম উল্লেখ করতে হয়।রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ডেভলপমেন্ট লিগকে যিনি শঙ্করলালের মত পাখির চোখ করেছিলেন।অধিকাংশ ২০বছরের ছেলেদের নিয়ে এ্যডামাস ইউনাইটেড স্পোর্টস কিন্তু ইষ্ট-রিজিওন থেকে ৮দলের প্রাথমিক ৭খেলায় ১২পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষ স্হানে ছিল। এ্যডামাস ইউনাইটেড স্পোর্টস পরবর্তী সময়ে ন‍্যাশনাল স্টেজে খেলার যোগ‍্যতাও অর্জন করেছিল।সীমিত ক্ষমতা নিয়ে এভাবে সর্বভারতীয় স্তরে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করাটাও গর্বের বলা যায়।ইষ্ট-রিজওনে টাটা ফুটবল এ্যকাডেমির খেলোয়াড়রা জামশেদপুর এফসির হয়ে খেলেছিল।শুধু তাই নয়,আইএসএলের ইষ্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ছাড়া আইলিগের মহামেডান ও ইউনাইটেড স্পোর্টস কিন্তু এই জোনে অংশগ্রহণ করেছিল।এমন গ্রুপ থেকে কলকাতা লিগের দ্ধিতীয় ডিভিশনের অধিকাংশ ফুটবলার নিয়ে এ্যডামাস ইউনাইটেডের জাতীয় স্তরে খেলার যোগ্যতা অর্জন করাকে কিভাবে অস্বীকার করা যায়?

৫৭টা দল নিয়ে রিলায়েন্স ডেভেলপমেন্টের লিগের প্রাথমিক পর্যায় থেকে ২০দলের সর্বভারতীয় পর্যায়ে নিজেদের তুলে ধরার জন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশেষ ক্ষিদে তুলে ধরতে হয়। দলের দায়িত্ব নিয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি খেলোয়াড়দের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে–স্বপ্নের জাল বানাতে জানতে হয়। কোচ রঞ্জন ভট্রাচার্যের প্রশিক্ষণে এ্যডামাস ইউনাইটেড স্পোর্টস এই কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছিল।সর্বভারতীয় স্তরে তারা মিজোরাম ও দিল্লির ক্লাবগুলোর সাথে এই দল নিয়েও অপরাজিত থাকতে পেরেছিল। আইএসএলের ইষ্টবেঙ্গল এফসি বা পাঞ্জাব এফসির পরিকাঠামোর সাথে এ্যডামাস ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিস্তর ফাঁরাক আছে।কিন্তু মানসিকতার বিচারে–নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে যে লড়াই দেওয়া প্রয়োজন, তা কোচ রঞ্জন ভট্রাচার্যের প্রশিক্ষণে এ্যডামাস ইউনাইটেড স্পোর্টস দিতে পেরেছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যেখানে মন ভয় ছাড়া’য় বলেছেন,’যেখানে অক্লান্ত পরিশ্রম তার বাহু প্রসারিত করে পরিপূর্নতার দিকে–‘
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার বাংলা–বাংলাদেশ, আজ খুব অশান্ত।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন‍্যতম প্রিয় ছাত্র হিসেবে প্রমথনাথ বিশীর খুব খ‍্যাতি ছিল।উনি একসময় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ও রাজ‍্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রমথনাথ বিশী, দুজনেরই সাথে বাংলাদেশের শিলাইদহ ও রাজশাহী অঞ্চলের হৃদয়ের টান ছিল।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শান্তিনিকেতন সম্পর্কিত ঘটনা নিয়ে লেখক ও সাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশীর অনেক লেখা আছে।একটা ঘটনার বিবরন এমন ছিল–শান্তিনিকেতনের ছাত্ররা ”অচলায়তন” নাটক মঞ্চস্হ করবেন।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাটকের আচার্য্যর ভূমিকা নিলেন।এখন একটা দৃশ‍্যে ছাত্রদের ‘অচলায়তনের আচার্য্য তথা রবীন্দ্রনাথকে চেয়ারে বেঁধে রাখতে হবে।কিন্তু ছাত্ররা গুরুদেবকে বাঁধবার সাহস পাচ্ছিলনা।এমন সময় প্রমথনাথ বলে উঠলেন,’ধূর,এতো অভিনয়, আমিই গুরুদেবকে বেঁধে ফেলবো।’

আমাদের গর্বের বাংলা,ঐতিহ‍্যের বাংলা।কত তার ইতিহাস।একটু অভিনয় করেও কেউ জিজ্ঞাসা করবেনা–কিহে,তোমরা ১৮টা গোল খেয়ে চলে আসলে?ক্লাবের ঐতিহ্য নিয়ে একটু ভাবলেনা?৪টে ম‍্যাচেই নাহয় হারতে,কিন্তু গোটা পাঁচেক গোল কম খেলে হতোনা?

কাদের ইতিহাস, কারা বলবে?
আমাদের কর্তারা বিশ্বাস করেন–ভিন্নরাজ‍্যের কোচ ও ফুটবলাররা কলকাতা লিগের ভিত্তি ও বাংলার ফুটবলের ভবিষ্যৎ!!