কলকাতা ময়দানে ভাস্কর-সন্দীপের উত্তরসূরী তরুণ গোলরক্ষক দেবজিৎ ঘোষাল

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী

কলকাতা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা বাসে করে পৌঁছতে হয় হাওড়ার শ্যামপুর থানার ওসমানপুর গ্রামে৷ একেবারে প্রত্যন্ত গ্রাম৷ এখনও মাটির রাস্তা৷ এবরোখেবরো ইটের পথ৷ সেই গ্রাম থেকে উঠে আসা দেবজিৎ ঘোষাল এবারে কলকাতা ময়দানে তরুণ প্রতিভাবান গোলরক্ষক৷ খেলছেন এরিয়ান দলে৷ দেবজিৎকে তুলে আনেন গোলরক্ষক কোচ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস৷ গতবছর পোর্টট্রাস্ট দলে খেলার জন্য জার্সি পেলেও কিন্ত্ত কোনও ম্যাচেই খেলার সুযোগ আসেনি৷ কিন্ত্ত কখনওই অভিমান করে ফুটবল খেলা ছেড়ে দেননি৷ বাগনান চন্দ্রভাগ কোচিং সেন্টারের কোচ বুলিদা এরিয়ান ক্লাবের ট্রায়ালে পাঠান দেবজিৎকে৷ প্রথম দিনেই নজর কেড়ে নেন দেবজিৎ৷ সঙ্গে সঙ্গে গোলরক্ষক কোচ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস দলের প্রধান কোচ অরিন্দম দেব এবং রাজদীপ নন্দীর সঙ্গে কথাবার্তা বলেন দেবজিতের ব্যাপারে৷

এমনকি মেন্টর রঘু নন্দীও দেবজিতের খেলা দেখে খুবই পছন্দ হয়৷ গ্রামের ছেলে বলে পরিশ্রম করতে তাঁর কোনও দ্বিধা প্রকাশ নেই৷ তাঁর চোখে স্বপ্ন একজন বড় গোলরক্ষক হয়ে দেশের জার্সিতে খেলা৷ তাই সময় পেলেই বিভিন্ন গোলরক্ষকের ভিডিও দেখে তাঁদের মতো হওয়ার স্বপ্ন দেখেন৷ প্রথম দিনই ট্রায়ালে এসেছিলেন বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে৷
দেবজিতের বাবা নারায়ণ ঘোষাল লোহার কারখানায় কাজ করতেন৷ কিন্ত্ত হঠাৎই কাজ করার সময় একটি লোহার টুকরো চোখে এসে আঘাত করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ তারপর থেকে এখনও চিকিৎসা চলছে৷ মা চম্পাবতী ঘোষাল ভাঙা টালির ঘরে বসে ছেলেকে সবসময় অনুপ্রেরণা দেন ভালো খেলার জন্য৷


উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরেই অভাবী সংসারে খেলাধুলো হবে কিনা, তা নিয়ে দেবজিৎ দীর্ঘদিন ভেবেছেন৷ কীভাবে এই খেলাকে ধরে রাখা যায়, তা নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এমনকি কোনওদিন সারাদিন খাওয়াও জোটেনি৷ রাতে মুড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ তবুও খেলা থেকে সরে থাকেননি৷ তাই পাড়ায় ছোট ছোট ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে কিছু অর্থ রোজগার করে বাবার হাতে তুলে দিতেন৷ কিন্ত্ত সবাই জানত কলকাতা ময়দানে যদি না খেলা যায়, তাহলে ফুটবলার হিসেবে কোনওভাবেই নিজেকে প্রকাশ করা যাবে না৷ কলকাতা ময়দানে এসে বিভিন্ন ক্লাবের ট্রায়ালে গত কয়েক বছর ধরেই ছুটেছেন৷ কিন্ত্ত সেইভাবে জায়গা পাননি৷ দু’বছর আগে মেসারার্স ক্লাবের হয়ে খেললেও, কিন্ত্ত প্রিমিয়ার ডিভিশনে এই প্রথম খেলছেন গোলরক্ষকের ভূমিকায় দেবজিৎ৷

একটা সময় কলকাতা ময়দানে গোলরক্ষকদের সাপ্লাই দিতেন প্রয়াত পটা গুপ্ত৷ এমনকি পটা গুপ্তের কাছে ভাস্কর গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় ফুটবলাররা অনুশীলনে ছুটে যেতেন আইএফএ’র মাঠে৷ বর্তমানে বাংলা জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলরক্ষক কোচ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে খেলোয়াড়দের তুলে আনার চেষ্টায় ব্রতী রয়েছেন৷ তাঁর হাত ধরে বেশ কয়েকজন গোলরক্ষক কলকাতা ময়দানে সুনাম অর্জন করেছে৷ বর্তমানে দেবজিৎ ঘোষালের প্রতিভাকে দেখতে পাওয়া গেছে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলার সময়৷ তিনি যেভাবে প্রতিপক্ষ দলের আক্রমণকে প্রতিহত করেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসা করার মতো৷ শেষ পর্যন্ত ওই ম্যাচে রেফারির বদান্যতায় ডায়মন্ড হারবার পেনাল্টিতে জয়লাভ করে৷ তাই দেবজিৎ মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতা থাকলে একদিন না একদিন সাফল্য আসবেই৷ সেই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে চান বাগনানের ছেলে গোলরক্ষক দেবজিৎ ঘোষাল৷