বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কাছে এবারের জাতীয় গেমস স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কত বছর বাদে বাংলা পদকের তালিকায় ১০-এর গণ্ডিতে জায়গা পেল, তা কোনও কর্মকর্তাই স্পষ্ট করতে পারেননি। তবে, সংস্থার নতুন কমিটির সদস্যরা অত্যন্ত আপ্লুত বাংলার প্রতিযোগীদের দারুণ পারফরম্যান্সের জন্য। অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বাংলার ছেলেমেয়েদের অনুপ্রাণিত করে বলেছেন, যাঁরা পদক পাবেন, তাঁদের চাকরির ব্যবস্থার পাশে আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হবে। স্বাভাবিকভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলার ছেলেমেয়েরা এবারে জাতীয় গেমসে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে পদক তুলে এনেছেন।
এবারে বাংলার ঘরে মোট ৪৭টি পদক এসেছে। তার মধ্যে ১৬টি সোনা, ১৩টি রুপো ও ১৮টি ব্রোঞ্জ পদক। অবশ্যই অভাবনীয়। এই কথা প্রসঙ্গে শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে উচ্ছ্বসিত হয়ে বিওএস-এর সচিব চন্দন রায়চৌধুরী বলেন, আমরা গর্বিত। যে সমস্ত প্রতিযোগী বাংলার গৌরবকে তুলে আনার জন্য লড়াই করেছেন, তাঁদেরকে স্যালুট করি। মাত্র অল্প কয়েকদিনের প্রস্তুতিতে বাংলা দল এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে, তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। বিশেষ করে জিমন্যাস্টিকস, যোগাসন এবং সাঁতার আমাদেরকে সোনা উপহার দিয়েছে। সাঁতারে দুটো সোনা এসেছে। আরও সোনার পদক আসত, তা অল্পের জন্য ছিটকে গিয়েছে। জিমন্যাস্টিকসে ৫টি সোনা, ৫টি রুপো ও দুটি ব্রোঞ্জ পদক এসেছে।
এইরকম অতীতে জিমন্যাস্টরা পদক উপহার দিতে পারেননি বাংলার ঘরে। টেবল টেনিসে আবার তিনটি সোনার পদক এসেছে। আর তিনটি ব্রোঞ্জ পদক আসে। কোনও রুপোর পদক না পেলেও আমাদের আক্ষেপ থেকে গেছে আরও কয়েকটি পদক আসতে পারত প্রতিযোগীদের কাছ থেকে। তাঁরা অল্পের জন্য চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে ইভেন্ট শেষ করেন। যোগাসনে তিনটি সোনা ও একটি রুপোর পদক এসেছে। সচিব চন্দন রায়চৌধুরী আরও বলেন, রাজ্য সরকার যেভাবে আমাদের পাশে থেকে সবরকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, তা প্রতিযোগীদের কাছে বড় হাতিয়ার হিসেবে দেখা দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সহযোগিতা না পেলে, এভাবে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেতেন না প্রতিযোগীরা।
বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান উপদেষ্টা অজিত ব্যানার্জি বলেন, আমরা জাতীয় গেমস থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আগামী দিনে এই বাংলায় বিভিন্ন একাডেমি যেমন গঠন করা হবে, তেমনই আবার অনুশীলনের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করার চেষ্টা করা হবে। আমরা শুনেছি, বাংলা থেকে সেইভাবে অনুশীলনের জন্য সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়নি বলে তারা ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে পরিকাঠামার কীভাবে উন্নতি করা যায় এবং ভিনরাজ্য থেকে সেইসব প্রতিনিধিদের আবার বাংলায় নিয়ে আসা যায়। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি এবং বেঙ্গল আর্চারি অ্যাকাডেমি গঠন করেছে।
বেঙ্গল আর্চারি অ্যকাডেমির ছাত্র জুয়েল সোনার পদক তুলে নিয়েছেন। তাহলে বিশ্বাস করা যেতে পরে, অ্যাকাডেমির সঠিক পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্য সরকার বেলেঘাটায় সুভাষ সরোবর সুইমিং পুলটিকে নবরূপে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাহলে সাঁতারুদের পক্ষে ওই সুইমিং পুলে অনুশীলন করতে কোনও রকম অসুবিধা হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। বেঙ্গল অলিম্পিকের প্রাক্তন সচিব কমলেশ চ্যাটার্জি বলেন, বাংলায় জাতীয় গেমস আয়োজন করা সম্ভব। এককথায় বলা যায়, এই গেমসের জন্য যা প্রয়োজনীয়, তা সবই বাংলাতে রয়েছে।সংস্থার সবি জহর দাস বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, ২০২৯ সালে বাংলাতে জাতীয় গেমস সংগঠিত করা। তার জন্য অবশ্যই আমরা বিড করব।
এদিন লন বলের পদকজয়ী আগ্নেশ বর্মা, বীণা সাহা, সৌমেন ব্যানার্জি, হর্ষবর্ধন শর্মা ও উসু-র পদকজয়ী দেবেশ সাহু উপস্থিত ছিলেন। ছবি— মউল মণ্ডল