• facebook
  • twitter
Wednesday, 1 January, 2025

সহজ ম্যাচের কঠিন জয়ে সন্তোষ ফাইনালে বাংলা

মনোতোষ মাঝির জায়গায় সুপ্রিয় পন্ডিত এবং সেন্ট্রাল মাঝমাঠে সুপ্রদীপ হাজরা পরিবর্তে তিনি আদিত্য থাপাকে নামিয়ে দেন। তথাপি খেলার রাশ বাংলার হাতে আসছিলনা।

নিজস্ব চিত্র

সার্ভিসেসকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বাংলা সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে গেল। দু’বছর আগে বাংলা শেষবারের মতন কেরলের মাটিতে সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে উঠেছিল। ফাইনালে বাংলা সেবার কেরলের কাছে ট্রাইব্রেকারে হেরে যায়। বাংলা আট বছর আগে গোয়ার মাটিতে, গোয়াকে হারিয়ে শেষবারের মতো সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।নিজামের শহরে বাংলার সামনে ৩৩ তম সন্তোষ ট্রফি জয়ের সুবর্ণ সুযোগ এসেছে।

এবারের সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা প্রাথমিক পর্ব থেকেই ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে চলেছে।ফাইনালে পৌঁছানোর পথে বাংলা দল দশটা ম্যাচ খেলেছে এবং এখন পর্যন্ত বাংলা অপরাজিত থাকতে পেরেছে। দশটা ম্যাচ খেলে বাংলা মাত্র দুটো ম্যাচ ড্র করেছে।

সেমিফাইনালে সার্ভিসের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে বাংলা এদিন প্রথম থেকেই সতর্কভাবে খেলা শুরু করে। প্রথম ১৫ মিনিট বাংলা দল প্রতিপক্ষকে বুঝে নিতে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে থাকে। খেলার ৭ম মিনিটে এরকম প্রতি আক্রমণ থেকেই মনোতোষ মাঝির মাইনাস থেকে গোল করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল নরহরি শ্রেষ্ঠা।কিন্তু সময়মতো সে বলের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। খেলার ১৬ মিনিটে সার্ভিসেসের রক্ষণের ক্লিয়ারেন্স থেকে গোলবক্সের ঠিক বাইরে মনোতোষ মাজি বল পেয়ে যায়।চকিতে নেওয়া তার জোরালো শটে সার্ভিসেসের জালে বল জড়িয়ে যায়।প্রথম তিরিশ মিনিটের মধ্যেই বাংলার সামনে তিনটে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ আসে। কিন্তু বাংলা মনোতোষ মাঝির করা একমাত্র গোলেই এগিয়ে থাকে। ৪৪ মিনিটে নরহরি শ্রেষ্ঠা থেকে বল পেয়ে রবি হাঁসদা গোল লক্ষ্য করে যে শট নেয়,তা সার্ভিসের গোলকিপার দক্ষতার চূড়ান্তে পৌঁছে প্রতিহত করে।প্রথম হাফের সংযুক্ত সময়ে বাংলা পরপর দুটি গোল করে। দুটো গোলের ক্ষেত্রেই নরহরি শ্রেষ্ঠার অবদান অনস্বীকার্য। প্রথমে রবি হাসদা কে দিয়ে তিনি দলের দ্বিতীয় গোল করান এবং বিপক্ষ খেলোয়াড়ের থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে নিজের প্রথম গোল ও দলের তৃতীয় গোলটি সেরে ফেলেন। বিরতিতে বাংলা ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকে।

খেলার গতির বিরুদ্ধেই সার্ভিসেস দল বাংলার রক্ষনের ভুলে সেকেন্ড হাফের ৫৩ মিনিটে গোল পেয়ে যায়। বিকাশ থাপার গোলের পরেই সার্ভিসেস দল খেলার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। ৬৩ মিনিটে নরহরি শ্রেষ্ঠা চোট পেয়ে বসে যেতেই, বাংলা দলকে কিছুটা দিশাহারা দেখায়।৭৪ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে সার্ভিসেস দল আক্রমণ শানিয়ে আনে।বামপ্রান্ত থেকে সার্ভিসেসের শুভম রানার ক্রসকে বক্সের উপর থেকে ক্লিয়ার করতে গিয়ে, বাংলার স্টপার জুয়েল আহমেদ নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন।খেলার ফলাফল ৩-২ হতেই, আক্রমণ প্রতি আক্রমণে সেমিফাইনাল ম্যাচ জমজমাট হয়ে ওঠে‌। ৮০ মিনিটে বাংলার কোচ সঞ্জয় সেন একসাথে দুটি পরিবর্তন নেন।

মনোতোষ মাঝির জায়গায় সুপ্রিয় পন্ডিত এবং সেন্ট্রাল মাঝমাঠে সুপ্রদীপ হাজরা পরিবর্তে তিনি আদিত্য থাপাকে নামিয়ে দেন। তথাপি খেলার রাশ বাংলার হাতে আসছিলনা। কর্নার থেকে সার্ভিসেস দল গোল করে খেলায় প্রায় সমতা ফিরিয়ে আনছিল।  গোল লাইন থেকে বাংলার রক্ষণভাগের ফুটবলার রবিলাল মান্ডি সেই বল ফিরিয়ে দেন।খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনতে সার্ভিসেসের কোচ রক্ষণভাগের ফুটবলার কমিয়ে আক্রমণ ভাগের ফুটবলার বাড়িয়ে দেন। দ্বিতীয় অধ্যায়ের সংযুক্ত সময়ের শেষমুহূর্তে প্রতি আক্রমণ থেকে ইসরাফিল দেওয়ান বল পেয়ে যান। প্রান্তিক দৌড়ে ইসরাফিল দেওয়ান সার্ভিসেস গোলবক্সে পৌঁছে রবি হাঁসদার উদ্দেশ্যে মাইনাস রাখেন। রবি হাঁসদা ঠান্ডা মাথায় সেই বল সার্ভিসেসের জালে জড়িয়ে দেন। নিজের দ্বিতীয় গোল ও বাংলার চতুর্থ গোল করে রবি হাঁসদা ফাইনালে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করে দেন।

বিরতির সময় ৩-০ গোলে বাংলা দল এগিয়ে ছিল। বিরতির পর বাংলা দল খেলার রাশ নিজেদের হাতেই রেখেছিল।কিন্তু অকস্মাৎ প্রতি আক্রমণে গোল খেয়ে গিয়ে বাংলা সহজ ম্যাচ কঠিন করে ফেলেছিল।শেষপর্যন্ত রবি হাঁসদার নেতৃত্বে বাংলা দল গতবারের চ্যাম্পিয়ন সার্ভিসেসকে হারিয়ে এবারে সন্তোষ ট্রফি জয়ের অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠলো।

রবি হাঁসদা এদিন আরও দুটি গোল করে আপাতত টুর্নামেন্টের সেরা গোলদাতার স্থানে পৌঁছে গেল। ইতিমধ্যে সে ১১টি গোল করে ফেলেছে। ১৯৬৯-৭০ সালের সন্তোষ ট্রফিতে বাংলার হয়ে স্ট্রাইকার মহাম্মদ হাবিব ১১টা গোল করেছিলেন। এদিন রবি হাঁসদা সেই রেকর্ড স্পর্শ করলেন।বছরের শেষদিন অর্থাৎ ৩১শে ডিসেম্বর বাংলা দল ফাইনালে খেলতে নামবে। সন্তোষ ট্রফি  জয়ের মাধ্যমে নতুন বছরের শুভসূচনার প্রত্যাশায় বাংলার  ফুটবল মহল আগামী কয়েকদিনের অপেক্ষা করবে।