• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করে শান্ত-লিটন ব্রিগেড

ভাবতেও অবাক লাগে পাকিস্তানের মতো ক্রিকেট দলের বিপক্ষে লড়াই করতে নেমে বাংলাদেশ ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়ে রইল। প্রথম টেস্টে জয়ের পরে দ্বিতীয় টেস্টেও বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অভাবনীয় জয়ের সাক্ষী হয়ে রইলেন। পরপর দু’টি টেস্টে পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জয় করে নিল। তাও আবার পাকিস্তানে খেলতে গিয়ে। প্রথম ম্যাচে তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে যেভাবে হারের লজ্জায় মুখ লুকিয়েছিল, তেমনই দ্বিতীয় টেস্টেও পাকিস্তানের হার শুধু লজ্জার নয়, ক্রিকেট দল নিয়ে ভাবতে হবে আগামী দিনে তাদের অবস্থান কী হবে।

উল্লেখ্য, প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয় পেয়েছিল। আর দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করে সবাই আউট হয়ে যান। আর দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান করে মাত্র ১৭২ রান। তার জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৬২ রান করে। আর দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করে ৬ উইকেটে জয়লাভ করে। টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের এই হার অবশ্যই সমর্থকদের হতাশ করেছে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে পাক বাহিনী প্রথম ইনিংসে ওপেনার সাইম আইয়ুবের ১১০ বলে ৫৮ রান ও অধিনায়ক শান মাসুদের ৬৯ বলে ৫৭ রান করে স্কোরবোর্ড কিছুটা ভালো জায়গায় পৌঁছয়। বাংলাদেশের মেহেদি হাসান মিরাজ ভয়ঙ্কর ভূমিকা নিয়ে পাকিস্তানকে ঘায়েল করে দেয়। তিনি একাই ২২.১ ওভারে ৬১ রান দিয়ে মোট পাঁচটি উইকেট সংগ্রহ করে নেয়। এর ফলে প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত সালমান আলি আঘার ৯৫ বলে ৪৫ রান করে পাকিস্তান ২৭৪ রান করে ইনিংস শেষ করে। এরপরে বাংলাদেশ খেলতে নেমে খুব একটা ভালো জায়গায় প্রথমে ছিল না। তারা মাত্র ২৬ রানে ৬টি উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে পড়ে যায়। এই সময় উইকেট কিপার লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ জুটি বেঁধে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড উজ্জ্বল করে। লিটন একাই ২২৮ বলে ১৩৮ রান করে রীতিমতো চমক দেন। আর মিরাজের ব্যাট  থেকে আসে ৮৭ রান। এই রানকে ভর করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস শেষ করে ২৬২ রানে। পাকিস্তানের বোলার খুররম শাহজাদ একাই ৬টি উইকেট দখল করেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়রা প্রথম দিকে কিছুটা সচেতনভাবে ব্যাট করতে থাকে। তার মধ্যেও ব্যাটিম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় পাকিস্তান দলকে। মহম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আলি আঘা কিছুটা ভরসা দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। বাংলাদেশের দুই বোলার হাসান মাহামুদ ও নাহিদ রানার বোলিংয়ের আক্রমণে নাস্তানাবুদ হয়ে যায় পাকিস্তান। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭২ রানে শেষ হয়। তার ফলে বাংলাদেশের জয়ের পথটা সহজ হয়ে যায়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনার জাকির হাসান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত শুরুটা দারুণ করে। জাকিরের ব্যাট থেকে ৩৯ বলে ৪০ রান করেন। অধিনায়ক শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৮২ বলে ৩৮ রান। এই রানকে ভর করেই বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় পঞ্চম দিনেই। পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দুই টেস্টে জয়ের সিরিজ  জিতে নিল। বাংলাদেশ এই প্রথম পাকিস্তানের মতো সেরা দলকে হারিয়ে দুরন্ত ভূমিকা পালন করল।

এদিকে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সিরিজের হার দেখে প্রাক্তন ক্রিকেটাররা হতাশ হয়েছেন। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক জাভেদ মিয়াদাঁদ বলেছেন আমাদের দেশের ক্রিকেট এখন যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে, তা বলার নেই। বাংলাদেশের জয়কে অবশ্যই কৃতিত্ব জানাতে হবে। তারা যেভাবে পাকিস্তানকে হারিয়েছে তার জন্য বোলারদের পাশে ব্যাটম্যানদেরও প্রশংসা করতে হবে। দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৮৫ রানের। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ সিরিজ জয়ের মধ্যে দিয়ে ইতিহাস রচনা করল। মিয়াদাঁদ আরও বলেন, খেলোয়াড়দের দোষ দিয়ে কিছু হবে না। পাক ক্রিকেট বের্ডের ভিতরের যা অবস্থা, তাতে ভালো হওয়ার কোনও কিছু নেই। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইনজামাম উল হক বলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দলগুলিকে হোম সিরিজে হারানোই আমাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করা হত। আর তার জন্য প্রয়োজন থাকে ব্যাটসম্যানদের কাছে বড় অঙ্কের রান। তারপরে ঘরের মাঠে বোলারদেরও একটা বড় ভূমিকা থাকার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাটসম্যান ও বোলাররা পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই বলতে দ্বিধা নেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ একেবারেই উজ্জ্বল নয়।