ময়দানের বারপুজোয় বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য এখনও কথা বলে

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী

বাংলার কৃষ্টি আর সংস্কৃতি আঙিনায় কলকাতা ময়দান একটা জায়গা করে নিয়েছে৷ তাই ময়দানের হালখাতা বলতেই ক্লাবে ক্লাবে বারপুজোর পরিচয় হয়ে যায় মিলন মেলায়৷ পয়লা বৈশাখ বাংলার নববর্ষকে আলিঙ্গন জানিয়ে কলকাতা শহর ছুটে যায় ময়দানে৷ মিষ্টি ভোরের আলোয় নিজেকে স্নান করিয়ে ময়দান অভিযানে বারপুজোয় সামিল হতে৷ ফুলে ফুলে সেজে ওঠে ক্লাব৷ সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়া৷ ফুটবল প্রিয় মানুষের আনাগোনায় চঞ্চল হয়ে ওঠে ময়দানের প্রতিটি চত্বর৷ আলাদা একটা অনুভূতি সবার হূদয়কে মাতিয়ে রাখে৷ এখন হয়তো সেই ‘বারপুজো’র উন্মাদনা চোখে না পড়লেও, আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই৷

এটা ঠিক ময়দানে বাঙালিয়ানা বলতেই নস্টালজিয়া৷ আজ থেকে কয়েক দশক আগে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যে ঐতিহ্যের কথা শোনা যেতো-সেখানে হয়তো আধুনিকতার ছাপ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে৷ তবুও বারপুজো কলকাতা ময়দানে একটা ভালোবাসা৷ মোহনবাগান ক্লাবে পয়লা বৈশাখে সেই বারপুজোকে সামনে রেখে আনন্দের ঝর্নায় এখনও ভেসে যান প্রত্যেকে৷ নতুন বছরকে আহ্বান করে সচিব দেবাশিস দত্ত ধুতি পাঞ্জাবি পরিধান করে সবাইকে বুকে টেনে নিতে ভুল করেননি৷ আমন্ত্রণে কোনও ভুল নেই৷ তখন পুরো পুরনো স্মৃতি উঁকি দিয়ে যায়৷ রাতে গোলাপ জাম তৈরি করা৷ গঙ্গা জলের ঘট মাথায় করে নিয়ে আসতেন সচিব ধীরেন দে৷ সেই জলে বারকে স্না করিয়ে পুজোয় বসতেন কালীঘাট থেকে আসা পুরোহিত৷ ফুটবলাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেন৷ সবার সঙ্গে পরিচিত হতেন৷ অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হতো৷ চুক্তিবদ্ধ আর্থিক অঙ্কের একটা টোকেন ফুটবলারদের হাতে তুলে দেওয়া হতো৷ এখনও সেই ধারা থাকলেও, একটু রঙ বদলে গেছে৷ বিদেশি কোচ ও ফুটবলাররা অবাক চোখে উপভোগ করছেন বাঙালিয়ানার আবেগকে৷ বিদেশিদের মধ্যে কেউই ধুতি ও পাঞ্জাবি পরে বাঙালি সাজে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন৷


শুধু মোহনবাগান নয়, বারপুজোর ঐতিহ্যকে অম্লান রেখেছে ইস্টবেঙ্গল৷ লাল হলুদ পাঞ্জাবি পরিধান করে অনেকেই মাঠে হাজির হয়েছেন৷ শুভেচ্ছা বিনিময়ে একে অপরকে কাছে টেনে নিয়েছেন৷ মন্ত্রী, আমলা, কর্মকর্তা, খেলোয়াড় সহ সমর্থকদের আনাগোনায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব চত্বর মুখর হয়ে ওঠে৷ ক্লাবের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার থেকে শুরু করে বাবু চক্রবর্তীর ব্যস্ততা চোখে পড়েছে৷ আলাপচারিতা শেষে সবার হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়েছে৷ বারপুজোয় হাজির এরিয়ান ক্লাবে সচিব সমর পাল, গোলরক্ষক কোচ বিশ্বজিৎ বিশ্বাস সহ মেন্টর রঘু নন্দী ও রাজদীপ নন্দীরা৷ ফুটবল প্রেমীদের কোলাহলে মুখর ভবানীপুর ক্লাব৷ কর্মকর্তা ও ফুটবলারদের ভিড়ে শুভেচ্ছা বিনিময়ে সচিব সৃঞ্জয় বসু৷ আন্তরিকতার ছোঁয়া দেখতে পাওয়া গেল খিদিরপুর ক্লাবে৷ সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্যে এগিয়ে আসছেন সিদ্ধার্থ বিশ্বালস ও অমিতাভ বিশ্বাস৷ কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের বারপুজোয় যেন মিলন উৎসবে চেহারা নিয়েছিল৷ সচিব স্বপন ব্যানার্জির আন্তরিকতায় সবাই অভিভূত হয়ে যান৷ নব বারাকপুর পুরসভা ফুটবল অ্যাকাদেমির ছোট ছোট ফুটবলারদের সঙ্গে বারপুজোয় সামিল হলেন পুরপ্রধান প্রবীর সাহা ও সাংসদ সৌগত রায়৷ তাইতা বাঙলার বারো মাসে তেরো পার্বনে ‘বারপুজো’ এক বড় প্রাপ্তি৷