দু’দিন যদি বৃষ্টি না হত, তাহলে ভারতীয় শিবিরে হয়তো হারের কথা উঁকি দিত। অস্ট্রেলিয়ার ৪৪৫ রানের জবাবে ভারত চতুর্থ দিনের শেষে ৯ উইকেটে ২৫২ রান করেছিল। ভারত তখন পিছিয়ে ছিল ১৯৩ রানে। তবে প্রথম দিকে বৃষ্টির জন্য বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আকাশদীপ ও যশপ্রীত বুমরা পঞ্চম দিনে অর্থাৎ বুধবার খেলা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় দল ২৬০ রানে তাদের প্রথম ইনিংস শেষ করে। আকাশদীপ ৩১ রানে আউট হন ট্রাভিস হেডের বলে। অ্যালেক্স ক্যারির হাতে তিনি ক্যাচ তুলে দেন। ক্রিজে থেকে যান যশপ্রীত বুমরা ১০ রানে। ভারত পিছিয়ে পড়ে ১৮৫ রানে। এই অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া দল দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় মাঠে নামে। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে ৮৯ রান করে। তারপরেই তারা দান ছেড়ে দেয়।
একটা সময় অস্ট্রেলিয়া দলও বৃষ্টিকে আহ্বান করছিলেন। তার প্রধান কারণ ছিল ভারতীয় দল যদি আরেকটু সময় পেত, তাহলে ঝোড়ো ব্যাটিং করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করত। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় শিবির কোনও উইকেট না হারিয়ে ৮ রান তোলে। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে তারকা ক্রিকেটাররা সেই অর্থে কোনও রানই পাননি। ভারতীয় বোলারদের দাপটে তাঁরা চাপে পড়ে যান। এই ইনিংসেও ভারতের অন্যতম সেরা বোলার যশপ্রীত বুমরা তিনটি উইকেট তুলে দেন। আর দু’টি করে উইকেট পেয়েছেন মহম্মদ সিরাজ ও আকাশদীপ। নাথান ম্যাকসুইনে মাত্র ৪ রান করে আকাশদীপের বলে ঋষভ পন্থের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। অপর ওপেনার উসমান খাউজা ৮ রান করেন। খাউজাকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন যশপ্রীত বুমরা। লাবু সেনের উইকেটটাও তুলে নেন যশপ্রীত বুমরা। অবশ্য লাবুসেন ঋষভের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর ব্যাট এসেছে মাত্র ১ রান।
মিচেল মার্শ তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মাত্র ২ রানে আউট হয়ে যান। আকাশদীপের বলে ঋষভ পন্থের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। স্টিভ স্মিথ করেছেন মাত্র ৪ রান। তবে এই উইকেটটি পেয়েছেন মহম্মদ সিরাজ। সিরাজের বলে স্মিথ ঋষভ পন্থের হাতে ধরা পড়েন। প্যাট কামিন্স ২২ রান করে প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়ান। যশপ্রীত বুমরার বলে রাহুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ২২ রান। এই ২২ রান করার ফাঁকে তিনি দু’টি চার ও দু’টি ছক্কা মেরেছেন। অ্যালেক্স ক্যারি ২০ রানে ও মিচেল স্টার্ক ২ রানে অপরাজিত থাকেন। ভারতীয় দল দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে মাত্র ৮ রান করে। জেতার জন্য ২৭৫ রানের প্রয়োজন ছিল। দিনের শেষে ভারতের হয়ে তখন ব্যাট করছিলেন যশস্বী জয়সওয়াল ও লোকেশ রাহুল। দু’জনের ব্যাট থেকেই ৪ রান করে এসেছে। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি ড্র হওয়ায় ভারতীয় দলের কাছে আগামী দু’টি টেস্ট অত্যন্ত ভাইটাল হয়ে গেল। যদি ওই দু’টি টেস্টে তারা জিততে না পারে, তাহলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নসিপে খেলা অসম্ভব হয়ে যাবে। সেই কারণেই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে ভারতীয় দলকে। কোনওভাবেই হালকা চালে খেলা চলবে না রোহিত ব্রিগেডের।
গাব্বায় কোনওমতে ফল-অন বাঁচানোর পরে ভারতীয় শিবিরে উল্লাস দেখা দিয়েছিল। সেই উল্লাস দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো হারের লজ্জা থেকে বাঁচা গেল। আবার অনেকে কটাক্ষও করেছেন, ফলো-অন বাঁচানোর জন্য এরকম উৎসব করার কোনও কারণ ছিল না বলে মনে করেন। আসলে ফলো-অনের আতঙ্ক চেপে বসেছিল রোহিত ব্রিগেডদের উপরে।
প্রয়োজনীয় রান তোলার আগেই ন’জন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ উইকেটে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন আকাশদীপ ও যশপ্রীত বুমরা। ৩৯ রানের জুটি গড়েন দশম উইকেটে আকাশ ও বুমরা। ভারত ২৪৬ রানে পৌঁছে যায় প্রথম ইনিংসে। এমনকি আকাশ যখন বাউন্ডারি মারছিলেন, তখন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কোচ গৌতম গম্ভীর অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। আবার বিরাট কোহলিও প্রশংসা করেছেন।
হাততালি দিতে ভুল করেননি অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেই কারণে ফলো-অন বাঁচানোয় সবাই উল্লাস করেছেন শেষ জুটির খেলা দেখে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে রোহিত-গৌতমের জমানায় ভারতীয় দলের এমন করুণ অবস্থায় কেন দেখা গেল, তার সমীক্ষা করা উচিত। কিন্তু ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা এসব নিয়ে ভাবতে রাজি নন। তাঁর অভিমত, কে কী বলল, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। খেলার মাঠে অনেককিছুই ঘটে থাকে। তা নিয়ে সময় নষ্ট করার অর্থ পিছিয়ে পড়া।