লাল হলুদের সেই উজ্জ্বল রঙটা একেবারে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এখন আর সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন নেই ইস্টবেঙ্গল শিবিরে। কেউই বড় গলায় বলতে পারবেন না ফুটবলের রণক্ষেত্রে লাল হলুদ ব্রিগেড প্রতিপক্ষ দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে জানে। যেমন ঘুমপাড়ানি বাঘ বদ্ধ খাঁচায় শুধু ঘোরা ফেরা করে, তেমনি ইস্টবেঙ্গলের অবস্থা সেই রকম। মাঠে নামছে দল। কোনও আস্ফালন নেই। নেই লড়াকু মনোভাব। হার আর হারের লজ্জায় শীত ঘুম দিতে গর্তে মুখ লুকাতে হচ্ছে। হতাশা ও ব্যর্থতা ঘাড়ে চেপে বসেছে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের। তার জন্যে কোনও আক্ষেপ নেই। নেই ঘুরে দাঁড়ানো অঙ্গীকার। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে সাহসী ভূমিকার পরিচয় আছে। তা আজ আঁধারে হাবুডুবু খাচ্ছে।
এবার আইএসএল ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল হার দিয়ে অভিযান শুরু করে। তারপরে টানা ছ’টি ম্যাচে হেরে গিয়ে গৌরবের ইস্টবেঙ্গলের সাইনবোর্ডের রঙটা ম্লান হয়ে গেছে। সবার মুখগুলো এখন ফ্যাকাশে। শরীরী ভাষায় শুধুই হতাশার ছবি। এই ছবি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সমর্থকরা। কর্মকর্তারা এই ব্যর্থতা নিজেদের ঘাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে প্রথম পদক্ষেপ কার্লোস কুয়াদ্রাতকে কোচের পদ থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া। কিন্তু কোনও সময়ের জন্যে বলা হলো না যে সব ফুটবলারদের রিক্রুট করা হয়েছে, তাঁরা সেই অর্থে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলার যোগ্যতা রাখেন কি? তাহলে কেন কোটি কোটি টাকা ওইসব খেলোয়াড়দের জন্যে ব্যয় করা হলো? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোচকে বদল করে মহানুভব হওয়া যায় না। আসলে নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা। ফুটবলাররা একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করছেন।
রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই। কোনও ভুল হলেই একে অপরকে দোষারোপ করছেন। কোচের কোনও নির্দেশ মানা হচ্ছে না। যার ফলে ইস্টবেঙ্গলের দৈন্যদশা আরও প্রকট হচ্ছে। ফুটবলারদের মনোভাবে প্রকাশ পাচ্ছে—আমি রাজা। কিন্তু রাজা যে সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে সেদিকে কোনও ভ্রুক্ষেপই নেই।
লাল হলুদ ঘরে নতুন কোচ এলেন। তাও আবার স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজো। ডার্বি ম্যাচ দেখে গাল ভরা কথা বললেন। তাঁর অভিমত লাল হলুদ শিবিরের রোগটা ধরে ফেলেছি। দল ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু সেই তথৈবচ।
ওড়িশা এফসি-র কাছেও হারতে হল। টানা ছ’টি ম্যাচে অর্থাৎ হারের ডাবল হ্যাটট্রিক করে আইএসএল ফুটবলে নতুন অধ্যায়ের রূপকার হল ইস্টবেঙ্গল। আর কবে? ইস্টবেঙ্গল জয়ের মুখ দেখবে? এই আওয়াজ গ্যালারিতে মুখর হয়ে উঠছে।
আসলে কোচ বদল করলেই দলের চেহারা বদলে যাবে এই ভাবনা কখনওই বড় করে দেখা দেয় না। যেখানে অনুশোচনা থাকে না। যেখানে আন্তরিকতা থাকে না। সেখানে জেদ বলে কথা থাকে না। প্রতিশোধ নেওয়ার তাগিদ থাকে না। সেখানে সার্থক শব্দটা কোনও ভাবেই খেলা করে না। অতীতের পাতায় চোখ রাখলে ইস্টবেঙ্গলের হুঙ্কারের কাহিনি সাবাইকে অবাক করে দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান কর্মকর্তাদের কোনও আফশোষ নেই। খোশ মেজাজে ক্লাব তাঁবুতে আড্ডার টেবিলটা জমিয়ে রাখতে দ্বিধা প্রকাশ করেন না। কিন্তু দলের করুণ অবস্থা থেকে কবে মুক্তি পাবে দল এর উত্তর কেউই দিতে পারছেন না। তলানি থেকে কবে উঠে আসতে পারবে তা কারো জানা নেই। সবার মুখে একটাই কথা ইস্টবেঙ্গল জয়ের মুখ আর কবে দেখবে?