রনজিৎ দাস: আগামী ২২শে মার্চ বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভারতীয় ফুটবল দল খেলতে নামচ্ছে৷ ৪ দলের গ্রুপ-এতে ভারত তৃতীয় স্থানে আছে৷ আফগানিস্হানের ম্যাচ জিতলে ভারতীয় দল গ্রুপের দ্ধিতীয় স্হানে উঠে আসার সুযোগ পাবে৷যদিও ভারতীয় দলকে সৌদিআরবের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে ভারতীয় দলকে প্রতিকূল অবস্হায় খেলতে হবে৷দুর্বল আফগানিস্তান দলের বিরুদ্ধে গোল সংখ্যা বাড়িয়ে রাখার সুযোগ ভারতীয় দল কি নিতে পারবে? আফগানিস্তান দল ফিফা ক্রমতালিকায় ভারতের থেকে বেশ পিছনের সারিতে অবস্হান করে৷ ইতিমধ্যে তারা বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের দুটো ম্যাচে ১২টা গোল খেয়েছে৷ এহেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কেবল জয় নয়,গোল সংখ্যা বাড়িয়ে রাখারও লক্ষ্য থাকে৷
ভারতীয় দল বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের শেষ ম্যাচ গতবছরের নভেম্বরে শক্তিশালী কাতারের বিরুদ্ধে খেলেছে৷ তারপর ভারতীয় দল এশিয়ান কাপের মুলপর্বে অংশগ্রহণ করে৷ এশিয়ান কাপে ভারতীয় দল অষ্ট্রেলিয়া, উজভেকিস্তান ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে খেলে তিনটে ম্যাচেই পরাজিত হয় এবং ২৪দলের এশিয়ান কাপে ভারতীয় দল টেবিলের শেষস্থান পেয়েছে৷ এশিয়ান কাপের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর ভারতীয় দল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে প্রায় ২০ ধাপ পিছিয়ে পড়েছে৷ আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুটো ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আবার বিশ্ব ক্রমতালিকায় নিজেদের অবস্থান ভালো করার সুযোগ এসেছে৷ এই সুযোগে গ্রহণ করতে ভারতীয় দল কতটা প্রস্তুত?
নভেম্বরে শুরু হওয়া এই বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বের ম্যাচ থেকেই ভারতীয় দলের রক্ষণ চোটের জন্য একসাথে সন্দেশ ঝিংগান ও আনোয়ার আলিকে খেলাতে পারছেনা৷ আফগানিস্তানের বিপক্ষেও ভারতীয় দল তাদের নির্ভরযোগ্য স্টপার সন্দেশ ঝিংগানকে চোটের জন্য ২৩ জনের দলে নিতে পারেনি৷ চোট সারিয়ে ২৩ জনের দলে আনোয়ার আলি ফিরে আসলেও এখনও সে পুরো ৯০ মিনিট কঠিন লড়াই দেওয়ার মত ফিট নয়৷ এছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এতটা উঁচুতে খেলা হওয়াতে তার শারীরিক প্রতিবন্ধতা হয় কিনা তাও বেশ লক্ষ্যণীয়৷ তাই স্টপারে রাহুল ভিকের সাথে দুর্বল আফগানিস্তান দলের বিরুদ্ধে কে শুরু করে তা দেখার আছে৷ গোলে কি রোটেশন প্রয়োগে অমরিন্দার সিং সুযোগ পাবে? লেফ্টব্যাকে শুভাশীষ না আকাশ মিশ্র শুরু করবে? নাকি ভারতীয় দল ৩ ডিফেন্সে খলবে? যেখানে জয়টা প্রধান লক্ষ্য, সেখানে ভারতীয় দলের কোচ কি নতুন পরীক্ষানিরিক্ষা করবেন? মাঝমাঠে টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নে মুম্বাই সিটির পুইয়ার বিকল্প ভারতীয় দলে নেই বললেই চলে৷ সুরেশ, টাংরিরা লড়াই দিতে পারে কিন্ত্ত টিমকে আক্রমণভাগে সচল রাখতে মাঝমাঠে পুঁইয়াকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে হবে৷ দুই প্রান্তে চাংতে, মনভীর ও লিষ্টনের মধ্যে দুজনকে শুরুতে নামিয়ে পরে নাওরেম মহেশ কি নামার সুযোগ পাবে? ভারতীয় দল গোল না খাওয়ার লড়াই করলেও ভারতীয় দলে গোল করার খেলোয়াড়ের অভাব আছে৷
এখনও ৪০ বছরের সুনীল ছেত্রীর উপর ভারতীয় দলকে নির্ভর করে থাকতে হয়৷ যে সুনীল ছেত্রী এখন নিজের ক্লাব দলেই নিয়মিত পুরোসময় মাঠে থাকতে পারেনা৷ এবছর যে ক্লাব দলের হয়েই ১৭ ম্যাচে মাত্র ৪ টে গোল করেছে৷ সেই বয়স্ক সুনীল ছেত্রীর উপর ভারতীয় দলকে গোল এনে দেওয়ার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে৷ ভারতীয় দলগঠনে কোচ ইগর স্টিম্যাচ বরাবর নতুন খেলোয়াড়দের টিমে সুযোগ দিয়ে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ এবার যেমন দলে লেফ্টব্যাকে শুভাশীষ বসু ও আকাশ মিশ্র থাকতে ওই পজিশনে গোয়া এফসির জয় গুপ্তকে নিয়েছেন৷ তিনজন লেফ্টব্যাক দলে নিয়েছেন কিন্ত্ত আক্রমণভাগে আইএসএলে ৫টে গোল করা ইষ্টবেঙ্গল এফসির নন্দকুমারকে নেননি৷ নর্থইস্টের পার্থিব গোগই ৩৫ জনের দলে থাকলেও চুড়ান্ত ২৩ জনের দলে জায়গা পায়নি৷ স্ট্রাইকারে সুনীল ছেত্রীর পাশাপাশি মনভীর সিংকে ব্যবহার নিশ্চয়ই করা যাবে৷ কিন্ত্ত গোলের মধ্যে থাকা নন্দকুমার ও পার্থিবরা দুর্বল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও কেন খেলার সুযোগ পাবে না? এমন বির্তকের মাঝে ভারতীয় দল বিশ্বকাপের যোগ্যতা পর্বে ভালো ফল না করলে ভারতীয় কোচের চাকরি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য৷ এখন দেখার যে, এশিয়ান কাপের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ভারতীয় ফুটবল দল নিজেদেরকে কিভাবে প্রয়োগ করেন৷