অসমাপ্ত কাহিনী : সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন অম্বাতি রায়াডু

অম্বাতি রায়াডু (Photo: Instagram/@a.t.rayudu)

এ যেন এক অসমাপ্ত কাহিনীর মত . . . আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেভাবে খেলতে পারেননি কিন্তু যখন জাতীয় দলে ডাক পেলেন তখন এমনই অবস্থা সেই সময়ে দলের চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসাবে একদিনের ক্রিকেটের দলে জায়গা পাকাপাকি ধরে নেওয়া হয়েছিল।

নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার আরাে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথম সিদ্ধান্ত নেন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর ঘােষণা। তখন প্রায় বিশ্বকাপ দোড়গােড়ায়। দলে নিশ্চিত জায়গা পাবেন সেটা একেবারেই সঠিক ছিল।

কিন্তু, হঠাৎই তাঁর জীবনে যে টুইস্ট আসবে সেটা বুঝতে পারেননি। তাই অম্বাতি রায়ডুর ছােট ক্রিকেট কেরিয়ারটা একটা অসমাপ্ত কাহিনীর মতনই বলা যায়।


যখন তাঁঁকে দলের নিশ্চিত চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল এবং অম্বাতি রায়াড়ু নিজেও ঠিক করে নিয়েছিলেন তিনি এখন দলের ওই জায়গাটার জন্য নির্ভরযােগ্য ক্রিকেটার। সেই কথাটা মাথায় রেখে খেলার দিকে ফোকাস করার জন্য পুরােপুরি মনােযােগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু খেলায় খারাপ পারফরমেন্স এবং ধারাবাহিকতার অভাবের জন্য রান না পাওয়ায় তাঁঁকে দলের বাইরে চলে যেতে হয়েছিল।

তবে, অম্বাতি রায়াডু কখনই ভাবেননি তাঁঁকে আর দলে ফিরিয়ে আনা হবে না। দলের বাইরে গেলেও, তিনি তাঁঁর খেলার প্র্যাকটিস চালিয়ে যেতে থাকেন কাজের কাজটা কি করতে হবে এবং কামব্যাকটা আরাে জোরদার করতে হবে সেটার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

ঠিক সেই সময়ে রায়ডুর ক্রিকেট জীবনে আরাে একটা বড়াে ভােলবদল ঘটে গেল। চলতি বিশ্বকাপের জন্য জাতীয় নির্বাচকরা পনেরােজনের ভারতীয় দল ঘােষণা করেন আর সেখানেই ঘটে গেল বড় বিপত্তি।

যে ব্যাটসম্যানকে কয়েকদিন ধরে বলা হচ্ছিল দলের চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসাবে তিনি একজন পারফেক্ট ব্যক্তি। পাশাপাশি বলে রাখা ভালাে, অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও কোচ রবি শাস্ত্রীর মুখেও এই কথা শােনা গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাঁঁকে বাদ দিয়েই নির্বাচকরা বিশ্বকাপের দল ঘােষণা করলেন। এবং অম্বাতি রায়াড়ুর জায়গায় দলে আনা হয়েছিল বিজয় শঙ্করকে।

সেখানে কোচ ও অধিনায়ক কি করে এই ব্যাপারটিকে সম্মতি জানালেন সেটাই সবথেকে বিরাট প্রশ্ন হয়ে উঠেছিল।

অম্বাতি রায়ডুকে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়ার পর প্রাক্তন ক্রিকেটাররা নানান মত প্রকাশ করেছিলেন। বিশেষ করে, প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর তাে অম্বাতি রায়ডুর পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন কেন তাঁঁকে বাদ দেওয়া হল? এই প্রশ্নের উত্তর কি নির্বাচকদের কাছে আছে?

তবে, অম্বাতি রায়াডু বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার পর তিনি নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তারপর তিনি প্রধান নির্বাচক এমএসকে প্রসাদকে লক্ষ্য করে টুইটারে লিখেছিলেন, ‘এবার থ্রিডি গ্লাস কিনছি বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য।

এই টুইটবার্তাটিও অম্বাতি রায়াডুর জীবনে অনেকটাই ভােল পাল্টে দিয়েছিল। এবং প্রাক্তন ক্রিকেটাররা প্রশ্ন করেছিলেন কেন রায়াডু বাদ। সেজন্য তাঁঁকে বাধ্য হয়ে নির্বাচকরা বিশ্বকাপের স্ট্যান্ড বাই ক্রিকেটার হিসাবে ধরে রেখেছিলেন।

এখানেই থেমে থাকেনি ব্যাপারটা। যখন বিশ্বকাপের আসরে শিখর ধাওয়ান চোট পেলেন তখন তাঁঁর পরিবর্তে দলে ডাকা হয়েছিল ঋষভ পন্থকে। এরপর নির্বাচক থেকে শুরু করে কোচ ও অধিনায়ক যে বিজয় শঙ্করকে নিয়ে বাজি ধরেছিলেন, তিনি তাে ব্যর্থ হয়েছেন। পাশাপাশি চোটের কারণে প্রতিযােগিতা থেকে বাদ পড়েছেন। স্ট্যান্ড বাই ক্রিকেটার অম্বাতি রায়াডু থাকা সত্বেও তাঁঁকে দলে না ডেকে নির্বাচকরা লন্ডনগামী ফ্লাইট ধরার টিকিট দিয়ে দেন মায়াঙ্ক আগরওয়ালের হাতে।

বুধবারই অবশ্য দলের সঙ্গে যােগ দিয়েছেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। তবে, এখানেও আরাে একটা প্রশ্ন থেকে গেল যে, অম্বাতি রায়াডু স্টান্ড বাই ক্রিকেটার থাকার পরেও কেন তাঁঁকে বাদের তালিকায় রেখে মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে ডেকে পাঠানাে হল।

অনেকেই বলাবলি করছেন, হয়তাে রায়াডু বিশ্বকাপের দলে ডাক না পাওয়ায় প্রধান নির্বাচককে লক্ষ্য করে যে টুইট করেছিলেন সেই কারণেই তাঁঁকে দলে ডাকা হয়নি। তবে, এই ব্যাপার নিয়ে কোনও কথা না বলেই, সাবা করিমকে একটি ই-মেল করে দিয়ে অম্বাতি রায়াডু জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছেন।

বিসিসিআইয়ের জেনারেল ম্যানেজার এই কথাটি তারপর সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন। রায়াডু তাঁঁর ই-মেলে লিখেছেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ক্রিকেটের সবধরনের ফরম্যাট থেকে আমি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি অবসর নিচ্ছি ক্রিকেট থেকে। তবে, আমি অবসর গ্রহণের আগে বিসিসিআই এবং প্রতিটা রাজ্যের ক্রিকেট অ্যাসােসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরা আমাকে যে সুযােগ দিয়েছিলেন সে জন্য আমি কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে, হায়দরাবাদ, বরােদা, অন্ধ্র এবং বিদর্ভকেও ধন্যবাদ জানাই’।

৩৩ বছর বয়সী রায়াডু জাতীয় দলের হয়ে ৫৫ টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ১,৬৯৪। ব্যাটিং অ্যাভারেজ ৪৭.০৫। পাশাপাশি ছয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন।