• facebook
  • twitter
Friday, 25 April, 2025

কলকাতা ময়দানে দুই প্রধানের বারপুজোকে কেন্দ্র করে উৎসাহের জনজোয়ার

খিদিরপুর ক্লাবের বারপুজোতে ব্যস্ত দেখা গেল সিদ্ধার্থ ও অমিতাভ বিশ্বাসকে। এসেছিলেন সিএবি’র প্রাক্তন সচিব বিশ্বরূপ দে সহ অন্যরা।

নিজস্ব চিত্র

নতুন বছরের প্রথম দিনেই কলকাতা ময়দান অন্যভাবে সেজে ওঠে। বাংলার সংস্কৃতিতে বারো মাসে তেরো পার্বণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে পয়লা বৈশাখের বারপুজো। আর এই বারপুজোকে কেন্দ্র করেই সারা ময়দান উৎসবের চেহারা নেয়। মোহনবাগান ক্লাব থেকে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল, পাশাপাশি ভবানীপুর, খিদিরপুর, এরিয়ান, ওয়াড়ি, জর্জ টেলিগ্রাফ, কালীঘাট মিলন সংঘ, সাদার্ন সমিতি, ডায়মন্ড হারবার ও কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের বারপুজোতে সবাই মিলিত হন মিলন মেলায়। বিশেষ করে এবারে মোহনবাগানের বারপুজোর আলাদা একটা ঐতিহ্য ছিল। সকাল থেকেই তাঁবুতে সাজো সাজো রব। গঙ্গার জল নিয়ে আসা হয়েছিল ঘটে করে। এসেছিলেন কালীঘাটের পুরোহিত। সানাইয়ের সুরে পুরো এলাকাটি অন্য চেহারায় রূপ পেয়েছিল।

সচিব দেবাশিস দত্ত প্রবেশ করতেই মুখর হয়ে ওঠে ক্লাব লন। একে একে প্রাক্তন ও বর্তমান খেলোয়াড়রা মাঠে এসে হাজির হন। কিছুক্ষণ বাদেই আসেন প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসু। আসেন মন্ত্রী অরূপ রায় থেকে কুণাল ঘোষ সহ অন্যরা। প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন ব্যানার্জি, সুব্রত ভট্টাচার্য থেকে মানস ভট্টাচার্যরাও সকাল থেকে হাজির ছিলেন। ভোরের আলো ফুটতেই মোহনবাগানের সমর্থকরা ছুটে আসেন গ্যালারিতে। বিশেষ মঞ্চে শোভা পাচ্ছিল এবারের আইএসএল ফুটবলে দ্বিমুকুট জয়ী ট্রফি ও কাপ, কলকাতা হকি লিগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। পাশাপাশি, মোহনবাগানের ছোটরাও ভারত সেরা হওয়ায় প্রত্যেকেই আনন্দে উৎফুল্ল।

কলকাতা ময়দানে নববর্ষের এই বারপুজোকে কেন্দ্র করে সবাই মেতে ওঠেন অনেকটা শারদীয়া উৎসবের মতো। এই দিন থেকে শুরু হয়ে যায় কলকাতা ময়দানের ফুটবল মরশুম। এদিন ঘোষণা করা হয় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের অধিনায়কের নাম। অতীতে দেখা গিয়েছে সমস্ত ফুটবলাররা ছুটে আসতেন মাঠে। প্রত্যেকের সঙ্গে পরিচিত হতে।

কিন্তু পরিবর্তনের যুগে ফুটবল মাঠেও পরিবর্তন এসেছে। তবে, আন্তরিকতার কোনও অভাব নেই। মাঠের মধ্যে গিয়ে বার ফুল দিয়ে সাজানো হয়। পুরোহিত আসেন। নারকেল ভেঙে পুজো শুরু করা হয়। মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত নারকেল ভেঙে বারের উপরে সেই জল দিতেই সমর্থকরা চিৎকার করে ওঠেন জয় মোহনবাগান। পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ করেন দীপেন্দু বিশ্বাস। তিনি এবারে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। এগিয়ে আসেন ফুটবল সচিব স্বপন ব্যানার্জি। সবাই মিলে আগামী বছরটা আরও সুন্দর হোক, এই কামনা করেন। এই বারপুজোর পরেই মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার করুণা ভট্টাচার্যের জীবনালক্ষ্য প্রকাশ করা হয়।

এদিকে বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্ত ও প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসু সকালে একবার মুখোমুখি হলেও তখন কোনও বাক্যালাপ হয়নি। বারপুজোর শেষে দুই সচিবের আবার দেখা হয়ে যায়। তখন দেখা গেল একে অপরকে জড়িয়ে কথা বলতে। তবে এই মিলনমেলায় মোহনবাগান ক্লাবের নির্বাচনী তরজাও শুরু হয়ে যায়। সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পয়লা বৈশাখের দিনে ক্লাবের পঞ্চাশ বছরেরও বেশি যাঁরা সদস্য, তাঁদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। কিন্তু তাতে আপত্তি জানান প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসু। তিনি নির্বাচন কমিটির কাছে আবেদন করেন ওইসব সদস্যদের এই সংবর্ধনা দিয়ে তাঁদের ভোট বর্তমান প্রশাসনের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই প্রশ্ন উঠতেই সৃঞ্জয় বসু বলেন, তিন বছর ধরে প্রশাসনের থাকার সময় কেন এঁদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি? আর কয়েকদিন বাদে নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে যাবে। তার আগে কোনওভাবেই এমন ভাবনা প্রকাশ করা উচিত নয়। আগামী ২৯ জুলাই মোহনবাগান দিবসে নির্বাচনের শেষে যে প্রশাসকরা আসবেন, তাঁরাই সংবর্ধনা ব্যবস্থা করতে পারে। তারই মধ্যে বর্তমান প্রশাসকদের ভূমিকাকে প্রশংসা করে অনেকেই জয়ধ্বনি দিতে থাকে এবং আগামী দিনে এই জয়ের রথ আরও জোরে ছুটবে বলে বিশ্বাস।

অন্যদিকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে সকাল থেকেই লাল-হলুদ সমর্থকদের ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে। একের পর এক প্রাক্তন ফুটবলাররা এসেছেন। এসেছেন বর্তমান বেশ কয়েকজন ফুটবলার সহ কোচ অস্কার ব্রুজো। নতুন অধিনায়ক মহেশকে দেখে সবাই জয়ধ্বনি দিতে থাকেন। এসেছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, অলোক মুখার্জি, ভাস্কর গাঙ্গুলি, মিহির বসু, অমিত ভদ্র, বিকাশ পাঁজি সহ আরও অনেকে। পতাকা উত্তোলনের পরেই বারপুজোতে সবাই মেতে ওঠেন। এসেছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন আইএফএ’র সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। কলকাতা ময়দানের বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা যেমন হাজির হয়েছিলেন, তেমনই ফুটবলাররাও এই বারপুজোতে ছুটে এসেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, এই উৎসবটা সবার কাছে মিলনের। এখানে কোনওরকম ভেদাভেদ থাকে না। তারই ছবিটা স্পষ্ট দেখা গেল। অনেকেই পুরনো স্মৃতিকে তুলে ধরলেন আলাপচারিতার মধ্যে দিয়ে।

ইস্টবেঙ্গলের সেই আন্তরিকতা এবং আবেগ এখনও যেন কথা বলে। দেখতে পাওয়া গেল প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ ব্যানার্জির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালেন বর্তমান ক্রিকেট কোচ আবদুল মোনায়েমের সঙ্গে। ইস্টবেঙ্গল ফুটবল স্কুলের খেলোয়াড় সহ বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রাও উপভোগ করলেন এই দিনটাকে। প্রত্যেক বছরের মতো এবারেও সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয় ক্লাবের পক্ষ থেকে। পুরো ক্লাব চত্বর সেজে উঠেছিল লাল-হলুদ পতাকায়। প্রবেশদ্বারেই বড় অক্ষরে লেখা ছিল শুভ নববর্ষ। অনেককেই দেখা গেল ক্লাবে প্রবেশ করতেই সেলফি তুলছেন। অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, চলতি মরশুমের প্রথম দিকে হয়তো সেইভাবে আমরা ভালো জায়গায় পৌঁছতে পারিনি। কিন্তু আগামী সুপার কাপ ফুটবলে আমরা জেতার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামব। আমাদের মেয়েরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ছোটরাও কম যায়নি।

এদিকে ভবানীপুর ও এরিয়ান ক্লাবে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। সৌরভ বর্তমানে এরিয়ান ক্লাবের সভাপতি। ক্লাবে প্রবেশ করতেই সৌরভকে বরণ করে নেওয়া হয় ফুলের স্তবক দিয়ে। ভবানীপুর ক্লাবে সৌরভ সবার সঙ্গে সময় কাটালেন বেশ কিছুক্ষণ। সচিব সৃঞ্জয় বসু ও প্রাক্তন ফুটবলার শিশির ঘোষ, অভি​ষেক ডালমিয়াকেও এই আলাপচারিতায় দেখতে পাওয়া গিয়েছিল।

খিদিরপুর ক্লাবের বারপুজোতে ব্যস্ত দেখা গেল সিদ্ধার্থ ও অমিতাভ বিশ্বাসকে। এসেছিলেন সিএবি’র প্রাক্তন সচিব বিশ্বরূপ দে সহ অন্যরা। সাদার্ন সমিতিতে নববর্ষের আড্ডায় মেতে গিয়েছিলেন আইএপএ’র চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত থেকে শুরু করে প্রাক্তন সচিব জয়দীপ মুখার্জি, প্রাক্তন সহসচিব নজরুল ইসলাম, রবীন ঘোষ, শঙ্কর দাস সহ ক্লাবসচিব সৌরভ পাল। কালীঘাট মিলন সংঘ ও কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনের বারপুজোতেও দেখা গেল বেশ উন্মাদনা।

টালিগঞ্জের ঐতিহ্যশালী ক্লাব জাতীয় সেবাদলের খুঁটিপুজোয় উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও টালিগঞ্জের পুজো প্রতিনিধিরা।