মুম্বই— হার্দিক পাণ্ডিয়া শুধু হাসছেন৷ ক্যাচ পড়লে ও বল হাতে মার খেলেও৷ আবার ব্যাটে রান না পেলেও হাসছেন৷ হার্দিকের এই হাসি দেখে ভয় পাচ্ছেন কেভিন পিটারসেন৷ রবিবার চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হারের পরেই হার্দিকের মানসিক ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পিটারসেন৷ পিটারসেন বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, মাঠের বাইরের ঘটনা হার্দিকের উপর প্রভাব ফেলছে৷ টস করার সময় দেখলাম ও খুব হাসছে৷ জানি, হার্দিকের মনের মধ্যে কী চলছে৷’ মানসিক ভাবে ভেঙে পডে়ছেন হার্দিক?
ছ’ম্যাচ পরেও তা থামেনি৷ চারটে ম্যাচ হারতে হয়েছে৷ পাশাপাশি হার্দিকের নিজের ফর্মও প্রভাব ফেলেছে তাঁর উপর৷ হারতে হারতে হার্দিক এখন মুম্বইয়ের ডাগ আউটে একা৷ ক্রমে সেই একাকিত্ব আরও বাড়ছে৷
তিন বছর আগেও ছবিটা ছিল অন্য রকম ৷ তখন হার্দিক ছিলেন মুম্বই সমর্থকদের ভরসার নাম৷ অধিনায়ক রোহিত শর্মার বড় অস্ত্র৷ ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, তিন বিভাগেই হার্দিকের অবদান মুম্বইকে ২০১৯ ও ২০২০ সালে চ্যাম্পিয়ন করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল৷ কিন্ত্ত ২০২২ সালের নিলামের আগে হার্দিককে ছেডে় দেয় মুম্বই৷ তাঁকে কেনে গুজরাত টাইটান্স৷ নতুন দলে গিয়ে হার্দিকের আরও একটি রূপ সবার চোখে পডে়৷ অধিনায়ক হার্দিক৷ প্রথম বারই চ্যাম্পিয়ন৷ দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হতে হতে রানার্স৷ এই দু’বছরে হার্দিক সুপারস্টার হয়ে গিয়েছেন৷ তাই মুম্বইয়ের নজর আবার তাঁর দিকে পডে়৷
চলতি আইপিএলের নিলামের আগে থেকেই হার্দিকের মুম্বইয়ে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছিল৷ যে অধিনায়ক দলকে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন করেছেন, তাঁকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়ার পরিণতি যে খুব একটা সুখকর হবে না, এখন তারা টের পাচ্ছে৷ সত্যিই তো, রোহিত তো আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো নিজে থেকে সরে যাননি৷ তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এমন একটা সময়ে, যখন তিনি জাতীয় দলের তিনটি ফরম্যাটেই অধিনায়ক৷
পর পর দু’টি ম্যাচ মুম্বই জেতায় কিছুটা হলেও হার্দিকের মুখে হাসি ফিরেছিল৷ কিন্ত্ত রবিবার চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে হেরে পরিস্থিতি আবার খারাপ হয়ে গেল৷ চেন্নাইয়ের কাছে হারের জন্য হার্দিকের দিকেই আঙুল উঠেছে৷ বল হাতে ৩ ওভারে ৪৩ রান দিয়েছেন৷ ২ উইকেট নিলেও শেষ ওভারে ধোনির হাতে তাঁর তিনটি ছক্কা খাওয়াকেই হারের কারণ মনে করছেন অনেকে৷
অধিনায়ক হার্দিককে তুলোধনা করেছেন সুনীল গাভাসকার৷ ওয়াংখেডে়তে চেন্নাইয়ের ইনিংসের পরে তিনি বলেন, ‘ভয়াবহ বোলিং৷ ভয়াবহ নেতৃত্ব৷ হাতে একাধিক বোলার থাকতেও নিজে বল করতে এল৷ ধোনি অপেক্ষা করছিল ওর পায়ের কাছে বল আসার৷ সেটাই করল হার্দিক৷ ছক্কা মারতে দিল৷ খুব সাধারণ মানের বোলিং এটা৷ ততটাই সাধারণ নেতৃত্ব৷’ সত্যিই কি তাই? দলে কি ক্রমেই একা হয়ে পড়ছেন হার্দিক? গত যে কয়েকটি ম্যাচে মুম্বই হেরেছে, ম্যাচ শেষে দেখা গিয়েছে হার্দিক একা ডাগ আউটে বসে রয়েছেন৷ থমথমে মুখে৷ তাঁর আশপাশে কেউ নেই৷
এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য কি হার্দিকই দায়ী নন? মুম্বইয়ের প্রথম ম্যাচে দেখা গিয়েছিল কিছু দৃশ্য৷ বল করার সময় রোহিত মাঝেমাঝেই হার্দিককে কিছু বলার চেষ্টা করছেন৷ কিন্ত্ত হার্দিক তাতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ বুমরার সঙ্গে রোহিতের আলোচনার মাঝে হার্দিক সেখান থেকে চলে যান৷ তাঁর শরীরী ভাষা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছিল, অধিনায়ক তিনি৷ সুতরাং তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন৷ যে কাজটা তিনি গুজরাত টাইটান্সে করতেন সেটাই মুম্বইয়ে করার চেষ্টা করছেন৷ রোহিতও ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন৷ ধোনি যখন হার্দিককে পর পর ছক্কা মারছেন তখন দেখা যায়, চুপচাপ এক জায়গায় দাঁডি়য়ে রোহিত৷ হার্দিককে গিয়ে কোনও পরামর্শ দেননি তিনি৷
যে চ্যালেঞ্জ নয়ে হার্দিক পাণ্ডিয়া মুম্বই দলের অধিনায়কের ব্যাটনটা তুলে নিয়েছিলেন, সেখানে তিনি আশাহত পরপর কয়েকটি ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরে৷ হার্দিক পাণ্ডিয়াকে সবসময় দেখা যেত ফিনিশারের ভূমিকায় দক্ষ৷ সেখানেও তিনি ব্যর্থ৷ হয়তো এই ব্যর্থতার কারমেই মানসিক দিক দিয়ে তিনি বিপর্যস্ত৷ তাই হাসি মুখে হতাশাকে মনের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার একটা চেষ্টা করছেন৷