বয়সভিত্তিক লিগ নিয়ে অভিযোগের পাহাড়

ফাইল চিত্র

কলকাতা লিগ থেকে যুব ফুটবলার তুলে আনতেই আইএফএর উদ্যোগে প্রথমে নার্সারি লিগ চালু হয়। পরবর্তী সময়ে ৫ম ডিভিশন থেকে ২য় ডিভিশনের লিগকে বয়সভিত্তিক করা হয়েছে। প্রতিবছর নার্সারি লিগ থেকে ২য় ডিভিশন পর্যন্ত লিগ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠছে। প্রধানতঃ বয়সের কারচুপি ও খেলার মাঠ নিয়ে এতদিন অভিযোগ উঠতো, এখন নানা স্বজনপোষন ও কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইএফএর দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ উঠেছে। নার্সারি লিগে খেলার জন্য আইএফএ থেকে অনুমোদন পেতে ক্লাবের নিজস্ব মাঠ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। মাঠ পরিদর্শনে আইএফএ প্রতিনিধিদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই আবেদনকারী ক্লাবেরা নার্সারি লিগে খেলার অনুমোদন পেত। নার্সারি লিগের দুটো বিভাগের একশোর উপর ক্লাবের মধ্যে অধিকাংশ ক্লাবেরই এখন আর নিজস্ব মাঠ নেই। অবশ্য ৭৫০ টাকা ব্যয় করেই ক্লাবগুলো এখন মাঠ না থাকলেও খেলার সুযোগ পাবে। সময়ের সাথে সাথে নার্সারি লিগে অংশগ্রহণ সহজ করা হয়েছে। কিন্তু পাল্লা দিয়ে বয়সের কারচুপির অভিযোগ উঠে আসছে। এরসাথে নকল নামে খেলার প্রবনতা বেড়েছে। বিশেষতঃ কিছু ক্লাব হোম ম্যাচে নকল ফুটবলার খেলিয়ে দিচ্ছে। ৫০০র উপর ম্যাচের দেখভাল করার মত পরিকাঠামো আইএফএর নেই। জেলার লিগের উন্নতি ঘটিয়ে আইএফএ বিকল্প পথে নার্সারি লিগ ছড়িয়ে দিতে পারতো। নার্সারি লিগে অত্যধিক টিমের সংখ্যা বাড়িয়ে আইএফএ খেলার সংখ্যা কমানোর পথ ধরেছে। জোনের সংখ্যা বাড়িয়ে ক্লাবগুলোর খেলার সংখ্যা কমানোতে খেলোয়াড়দের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক ফুটবলার বছরে ৪/৫টার বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। নার্সারি লিগের এক ক্লাবকর্তারা চান আইএফএ নার্সারি লিগে বয়সের কারচুপি রুখতে জন্মের শংসাপত্রের পাশাপাশি, একসাথে প্লেয়ারদের মেডিকেল টেষ্ট করাক। প্রয়োজনে সন্দেহজনক খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করে স্পেশাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বয়সের যাচাই করুক। নার্সারি লিগে বয়সের কারচুপি রুখে দিতে পারলে বয়সভিত্তিক ৫ম থেকে ২য় ডিভিশন অবধি বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ কমে আসবে। সুষ্ঠুভাবে খেলাটা করানোর দাবি ছাড়া তাদের আর কোন অভিযোগ নেই। তারা চান, আইএফএ ভাবুক নার্সারি লিগ থেকে উঠে আসা ফুটবলাররা কেন হারিয়ে যাচ্ছে?

নার্সারি লিগ থেকে উঠে আসা প্লেয়ারদের নিয়েই কোচ সায়ন্তন দাস রায় এবারের লিগে বিভিন্ন বিভাগে কোচিং করিয়েছেন। তার কোচিংয়েই খিদিরপুর ক্লাব দীর্ঘদিন বাদে গত মরশুমে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে ছিল। এখন ৪র্থ বিভাগের টিমকে নিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে নামবে। অকপটে কোচ সায়ন্তন বলছিলেন, বয়সভিত্তিক লিগে বয়সের কারচুপি হলে নার্সারি বা বয়সভিত্তিক কোন লিগেরই কিচ্ছু ভূমিকা থাকেনা। ১৬ বছরের লিগে যদি ১৮ বছরের ছেলে বয়সের কারচুপি করে খেলে, তবে তার খেলা অনেকের নজরে পড়বে। কিন্তু সে তো দীর্ঘদিন একই সুবিধা পাবেনা। পরবর্তী সময়ে তার কোয়ালিটি না থাকলে ধরা পরে যাবে। উপরের দিকে সে খেলতে পারবে না। প্রিমিয়ার ডিভিশনের সাথে প্রথম বিভাগের লিগের বিস্তর ফাঁরাক আছে।ঠিক তেমনভাবে প্রথম বিভাগের সাথে ২য় বা ৩য় বিভাগের যথেষ্ট ফাঁরাক থাকে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ফুটবলারদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হতে পারে। বয়সের কারচুপি করে প্রচুর খেলোয়াড় হারিয়ে গেছে বলেই এখন উপরের লেভেলের ডিভিশনে ফুটবলারদের আকাল চলছে। বয়সের কারচুপি তো একটা সমস্যা বটে। তবে ভরা বর্ষায় খোলামাঠে ছোটদের খেলা বেশ কষ্টকর। শরীরের শক্তি না থাকলে সে খেলবে কি করে? অনেক ভালো স্কিলফুল ফুটবলার ঐ ভারী মাঠে সুবিধা করতে পারছেনা। কিছু আদিবাসী ফুটবলার তাদের শারীরিক শক্তির জন্য উতরে যাচ্ছে। যারা ১২ মাস ভালো মাঠে প্র্যাকটিস করে, তাদের পক্ষে বর্ষার মাঠে এসে ভালো খেলা সম্ভব হচ্ছেনা। তারপর ১/২দিন অন্তর এদের ম্যাচ খেলাও সম্ভব হচ্ছে না। এর সাথে রেফারিদের ভূমিকা আরো যন্ত্রনাদায়ক হলে ফুটবলে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এদিকে দূরের জেলার মাঠে খেলা হলে বিভিন্ন ক্লাবকর্তারা মাঠে উপস্থিত থাকেন না। ফলতঃ কোচেরাই ভালো খেলোয়াড়দের খোঁজ রাখেন। আর, ক্লাবকর্তারা খেলোয়াড়দের এজেন্টদের উপর নির্ভর হয়ে পড়েন। সামগ্রিক সকলের পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাবে আদতে বাংলার ফুটবল পিছিয়ে পড়ছে।

আইএফএর বাস্তব ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষমতায় বয়সভিত্তিক লিগের কার্যকারিতা হারিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্লাব খেলার মাঠে হারছে কিন্তু বয়সের কারচুপির নানা ফাঁকফোকর থেকে সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। আইএফএ সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। বিশেষ বিশেষ তথ্য নির্দিষ্ট ক্লাবকর্তাদের খবর পৌঁছে যাচ্ছে। কিছু ক্লাব এই সুবিধা পাচ্ছে। এদিকে বয়সভিত্তিক লিগের টালবাহানায় বাংলার অনেক অনূর্ধ্ব -১৭ ফুটবলার এবার সর্বভারতীয় লিগে অংশগ্রহণ করতে পারলো না। ৪র্থ বিভাগের চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা পিছতে পিছতে এমন সময় শুরু হলো যে, ক্লাবগুলো তাদের ভালো ভালো ফুটবলারদের সর্বভারতীয় লিগে খেলার জন্য অন্য ক্লাবে ছাড়েনি। বিভিন্ন বিভাগের লিগে নানা অভিযোগের যথাসময়ে সমাধান হয়নি। ফলে লিগের খেলা পিছতে হয়েছে। দিনের শেষে খেলোয়াড়দের ক্ষতি হলো। বয়সভিত্তিক লিগ নিয়ে এভাবেই আইএফএর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠছে।