• facebook
  • twitter
Tuesday, 7 January, 2025

অস্ট্রেলিয়ার কাছে লজ্জার হার ভারতীয় ক্রিকেটকে পিছিয়ে দিল

সত্যি তাই ক্রিকেটাররা যদি নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন তাহলে সাফল্য আশা করা যায় না। নিজের খেলা নিয়ে নিজেকেই সমীক্ষা করতে হবে।

না। হলো না। শেষ রক্ষা করতে পারল না ভারতীয় ক্রিকেট দল। অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের তরী এইভাবে ভরাডুবি হয়ে যাবে সিডনিতে তা কেউই ভাবতে পারেনি। পাঁচ টেস্ট সিরিজে ভারতের দৈন্যদশা শেষ ম্যাচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে হল। অস্ট্রেলিয়া ৩-১ ব্যবধানে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজ জিতে নিল। একরাশ হতাশা নিয়ে রোহিত, কোহলি, যশস্বী ও যশপ্রীত বুমরাদের দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। এর থেকে দুঃখের বার্তা আর কী হতে পারে। সিডনিতে শেষ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৬ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে দিয়ে নিজেদের দৌরাত্ম বুঝিয়ে দিল।

ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হয়ে যাওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়া সফরটা ভারতের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। কিন্তু প্যাট কামিন্সরা ভারতীয় ক্রিকেট দলকে সেই অর্থে পাত্তাই দিল না। এক কথায় বলা যায় রোহিত শর্মা ব্রিগেড আত্মসমর্পন করল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ভারতীয় ক্রিকেটারদের আগ্রাসী ও সাহসী ভূমিকা দেখতেই পাওয়া যায়নি। তা না হলে পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচ পুরো আড়াইদিনও গড়ায় না। আসলে টেস্ট ক্রিকেট খেলার যে ধারাপাত তা উধাও হয়ে গেছে। তাইতো ভারতকে লজ্জার হারকে তাড়া করেছে। প্রথম টেস্ট ম্যাচে পার্থে যশপ্রীত বুমরার হাতে অধিনায়কের ব্যাটনটা ছিল। প্রথম খেলায় অস্বস্তির জায়গা থেকে উঠে এসে ভারতীয় দল জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে পরাস্ত করে। আবার শেষ টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল বুমরাকে। কিন্তু বুমরার যাদুকাটির পরশে জয় এলো না সিডনির মাঠে। তারপরে হাতে চোট পাওয়ায় তৃতীয় দিনে মাঠে নামতে পারলেন না বুমরা। যা ভাবনা তাই হলো। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারের কাছে ত্রাস বুমরা না খেলায় মানসিকভাবে এগিয়ে থাকেন। বাড়তি প্রেরণায় খুব সহজেই ভারতকে হারিয়ে বাজিমাত করে অস্ট্রেলিয়া।

ভারতের এই ভরাডুবির পিছনে কারণ খুঁজতে গেলে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হবে। গত ১০ বছরে এই প্রথম ভারতীয় দল বর্ডার-গাভাসকার ট্রফি জিতে পারল না। লেখা হল ভারতীয় ক্রিকেটদলের লজ্জা হারের ইতিহাস।
টেস্ট এখনতো তিন দিনের খেলা হয়ে গেছে। সিডনিতে শেষ টেস্ট ম্যাচটা ফয়সালা করতে আড়াই দিনও লাগল না। ভারতীয় দলের করুণ অবস্থাটা দর্শকরা প্রত্যক্ষ করলেন। শনিবারের ৬ উইকেটে ১৪১ রান নিয়ে রবিবার মাঠে নামলে মাত্র ১৭ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস শেষ করে। আর প্রথম ইনিংসে ৪ রানে এগিয়ে থাকায় মোট ১৬১ রান অস্ট্রেলিয়ার সামনে তুলে ধরে ভারত। সিডনি উইকেটে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জয়ের জন্যে ১৬২ রান কোনও সমস্যা হবে না তা শরীরী ভাষায় স্পষ্ট বোঝা গিয়েছিল। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে অস্ট্রেলিয়াকে ৪টি উইকেট হারাতে হয়।

টসে জিতে অধিনায়ক যশপ্রীত বুমরা কেন প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন-তা বোঝা গেল না। তবে ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া ধারাবাহিক ভাবে ব্যর্থতার স্কোরশিটে নাম লিখিয়েছেন। তারপরে তারকা ব্যাটসম্যানদের অতি আত্মবিশ্বাস পতনের অন্যতম কারণ বলতেই হবে। একমাত্র যশপ্রীত বুমরা ভারতীয় দলের অক্সিজেন ছিলেন। তিনি যেভাবে প্রতিপক্ষ দলের উইকেট ভেহে দিয়ে নজির গড়েছেন-সেখানে ব্যাটসম্যানদের হতাশাজনক খেলা সবাইকে আশাভঙ্গ করে দিয়েছে। কোনও সময়ের জন্যে স্বপ্ন দেখা সম্ভব হয়নি। যশপ্রীত বুমরা নির্ভর ভারতীয় দলকে দেখে কষ্ট হয়েছে। বুমরা যখন চোটের কারণে বল করতে পারলেন না—তখনই বোঝা গেল ভারতের দূর্দশার কাহিনি কী হতে পারে। শেষ টেস্ট ম্যাচে হেরে যাওয়ায় ভারতকে দেখতে পাওয়া যাবে না এবারে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে। সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের স্কোরবোর্ডকে একটু ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন ঋষভ পন্থ। তিনি ৩৩ বলে ৬১ রান করে ভারতের ১৫০ রান টপকানো সম্ভব হয়। কিন্তু তারপরে! ভারতের দ্বিতীয় ইনংস শেষ হয় ১৫৭ রানে। অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬২ রানের। প্যাট কামিন্সরা দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে প্রথমদিকে অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলেও, তা অতিক্রম করতে সেইভাবে বেগ পেতে হয়নি। বুমরার অনুপস্থিতিতে বোলার প্রসিদ্ধ ঝড় তুললেও, অন্যরা সেইভাবে সাপোর্ট দিতে পারেননি। একটা সময়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৫৮ রানে ৩ উইকেট। সেই জায়গায় থেকে উসমান খাওজা ও ট্র্যাভিস হেড জুটি বেঁধে জয়ের ভিতকে শক্ত করেন। কাওজা ৪১ রান করে প্যাভেলিয়নে ফিরত যাওয়ার পরে ট্যাভিসের সঙ্গী হন বিউ ওয়েবস্টার। ট্র্যাভিস ও ওয়েস্টার অস্ট্রেলিয়াকে জয় নিশ্চিত করে দেন। ট্র্যাভিস ৩৪ আর ওয়েবস্টার ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

কোচ গৌতম গম্ভীর ভারতীয় ক্রিকেটারদের খেলায় খুবই নিরাশ। শুধু নিরাশ নন কোচ। বেশ ক্ষুব্ধ। তিনি অভিজ্ঞ থেকে তরুণ ক্রিকেটারদের পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে হবে। লাল বলের ক্রিকেট খেলতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে না খেলে এমন দূর্দশা হবে। এটা মনে রাখতে হবে খেলোয়াড়দের মধ্যে খিদে ও প্রতিশ্রুতি না থাকলে ব্যর্থতাই কথা বলবে। ক্রিকেট সম্মিলিত প্রয়াস। একা কেউই ম্যাচ ছিনিয়ে আনতে পারেন না। সবাইকে সচেতন হবে।

সত্যি তাই ক্রিকেটাররা যদি নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন তাহলে সাফল্য আশা করা যায় না। নিজের খেলা নিয়ে নিজেকেই সমীক্ষা করতে হবে। নিজের ব্যর্থতাকে চাপা দিতে গিয়ে অন্যকে দোষারোপ করে লাভ হবে না। ভারতের ক্রিকেটীয় সম্মান যেভাবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে হারাতে হল তা দীর্ঘদিন ভাবাবে। এই হতাশা ভারতীয় ক্রিকেটকে অনেকটা পিছিয়ে দিল।