কোচ গৌতমের উপরে আস্থা না থাকায়, সাপোর্ট স্টাফ নিয়োগে বোর্ডই শেষ কথা বলবে

ফাইল চিত্র

আইপিএল ক্রিকেটে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সফল কোচ হিসেবে নিজেকে যখন প্রমাণ করলেন গৌতম গম্ভীর, তারপরেই বিসিসিআইয়ের কর্মকর্তারা প্রায় সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছিলেন, রাহুল দ্রাবিড়ের পরিবর্তে ভারতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে তাঁর নামটাই বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তাই-ই হলো। দায়িত্ব নেওয়ার পরে গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে আলোচনা প্রচুর হয়েছিল। বিশেষ করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছিলেন, তিনি নাকি বড্ড নিজের উপরেই আস্থা রেখে দলকে পরিচালনা করার চেষ্টা করে থাকেন। এমনকি, অধিনায়ককেও প্রয়োজনে কোনও কথা বলতে রাজি হন না। আবার ড্রেসিং রুমেও সবার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। তবুও বোর্ড কর্মকর্তারা গৌতম গম্ভীরকেই কোচের দায়িত্ব দিয়ে ভারতীয় দলকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বাস রেখেছিলেন।

কোচ হওয়ার পরে সেই অর্থে ভারতীয় দলের সাফল্য আসেনি। একের পর এক হার কোচ গৌতম গম্ভীরকে ভারাক্রান্ত করেছে। একমাত্র সাফল্য বলতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। অবশ্য তার আগেই ৫০ ওভারে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ফাইনালে খেললেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার স্বীকার করতে হয়েছে। আবার ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছ হোয়াইট ওয়াশ হতে হয়েছে ভারতকে। তারপরে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েও সেইভাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেননি কোচ গৌতম গম্ভীর। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে মাত্র একটা জয় এসেছে। আর তিনটি ম্যাচে হেরে গিয়ে সিরিজ হাতছাড়া হয়েছে। আর একটা ম্যাচ ড্র হয়। এমনকি, শেষ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনিতে কোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে অধিনায়ক রোহিত শর্মার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। কোচ ও অধিনায়কের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হওয়ার পরে ড্রেসিং রুমের অবস্থা খুব একটা ভালো জায়গায় পৌঁছয়নি। যার ফলে অধিনায়ক রোহিত শর্মা নিজেই ঘোষণা করে দেন, শেষ টেস্ট ম্যাচে তিনি খেলবেন না।

ভারতীয় ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়া সফরে হতাশাই তৈরি করেছে। তারপরেই বোর্ডের সভায় কোচ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বিশেষ করে কোচ গৌতম গম্ভীর ও অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সেই আলোচনার পরেই জানা যায়, কোচ গৌতম গম্ভীর নিজের ইচ্ছায় সাপোর্ট স্টাফদের নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোনও রকম প্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে নতুন করে সাপোর্ট স্টাফদের কথা ভাবা হচ্ছে।


এবার আর কোচের পছন্দের মতো নয়, বোর্ড কর্মকর্তারাই তাঁদের নির্বাচন করবে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে সিরিজ় হারের পর গোটা কোচিং স্টাফই সমালোচনার মুখে। বিশেষ করে অভিষেক নায়ার। বিরাট কোহলি বার বার একই ভাবে আউট হওয়ার পরেও কেন তাঁকে সতর্ক করে দেননি সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গিয়েছিল, দলের সাপোর্ট স্টাফেরা কেমন কাজ করছেন সে ব্যাপারে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মতামত চেয়েছে বোর্ড। বোর্ডের এক সূত্র দাবি করেছিলেন, “অভিষেক নায়ার সবচেয়ে কড়া নজরে রয়েছেন। বোর্ড ক্রিকেটারদের জিজ্ঞাসা করেছে যে, নায়ারের পরিকল্পনায় আলাদা কোনও বিষয় রয়েছে কি না। একই ভাবে রায়ান টেন দুশখাতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার অভাব এবং ভাল মানের ক্রিকেটারদের উন্নতিতে অবদান রাখতে না পারার কারণে ওকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।” কিছু সাপোর্ট স্টাফের চুক্তির মেয়াদ কমিয়ে দু’-তিন বছর করা হতে পারে। কারণ বোর্ডের ধারণা, তাঁরা দীর্ঘ দিন থাকলেও দলের কোনও লাভ হয়নি।

প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাসকার ভারতের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে সমালোচনায় মুখর হন। যাঁদের কাছ থেকে বড় রান পাওয়ার কথা ছিল, তাঁরা বার বার ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচকরা কখনওই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে চেষ্টা করেননি। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে কেন রান আসছে না, সেই বিষয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল কোচ সহ অন্যদেরও। কেন প্রতিটি টেস্টে এমন দুর্দশার মধ্যে পড়তে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের, সেই বিষয়েও কোনও মন্তব্য শোনা যায়নি। সবসময় মনে রাখতে হবে, ড্রেসিং রুমের অবস্থা যদি ঠিক থাকে, তাহলে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস এগিয়ে থাকে। এই মনোভাব যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারতীয় দলে বাসা না বাঁধছে, ততক্ষণ এই ব্যর্থতা চলতেই থাকবে।