অতি আত্মবিশ্বাসেই সোনা হাতছাড়া নীরজের

স্বপ্ন ও আশা সার্থক রূপ পেল না জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়ার। সারা দেশবাসী আত্মবিশ্বাস নিয়েই বৃহস্পতিবার রাতেই টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন। সবাই ভেবেছিলেন নীরজের হাত ধরে আবার সোনার পদক আসবে ভারতে। নীরজ নিজেও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিলেন। হয়তো অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিলেন। যার ফলে মনের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হল নীরজকে। তা না হলে পাকিস্তানের জ্যাভলিন থ্রোয়ার আরশাদ নাদিমের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে হত না। ছ’টা থ্রোয়ের মধ্যে নীরজ পাঁচটা থ্রোতেই ডিসকোয়ালিফায়েড হয়ে যান। একটি থ্রোতে নীরজ ৮৯.৪৫ মিটার দূরে বর্শা ছূড়ে রুপোর পদক জিতলেন। সেই জায়গায় পাকিস্তানের তারকা জ্যাভলিন থ্রোয়ার আরশাদ নাদিম দ্বিতীয় থ্রোতেই 92.97 মিটার দূরত্ব করে সোনার পদকটা নিজের হাতে নিয়ে নিলেন। পারলেন না নীরজ কীর্তি গড়তে। পিছিয়ে পড়তে হল পাকিস্তানের আরশাদের কাছে নীরজকে।

টোকিও অলিম্পিক্স গেমসে ৭ আগস্ট ভারতের আকাশ সোনার আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। জ্যাভলিন থ্রোতে সোনার পদক নিয়ে আসেন নীরজ চোপড়া। সেদিন কেউ ভাবতেও পারেননি, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে কোনও ভারতীয় সোনা জিততে পারেন। আর সেটাই দেখিয়ে দিয়েছিলেন নীরজ। 87.58 মিটার দূরত্ব করে সোনা জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি। অভিনব বিন্দ্রার পরে ভারতের ব্যক্তিগত সোনাজয়ীদের তালিকায় নাম খোদাই করেছিলেন নীরজ চোপড়া। প্যারিস অলিম্পিক্সের ফাইনালে নীরজ কিন্তু প্রথম থেকেই হয়তো স্নায়ুযুদ্ধের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। যার ফলে প্রথম থ্রোতেই দাগের উপর পা চলে যায়। বাতিল হয় থ্রো। প্রথম থ্রোটা বাতিল হতেই নীরজ আরও চাপে পড়ে যান। তিনি ভাবতে থাকেন পড়ের থ্রোটা ভালো করতেই হবে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তানের আরশাদ নাদিম দ্বিতীয় থ্রোতেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে যে দূরত্ব করলেন, তা সোনার জন্য পাকা হয়ে গেল। তিনি নতুন অলিম্পিক্স রেকর্ড গড়লেন। যদি নীরজ চলতি অলিম্পিক্স গেমসে সোনা জিততে পারতেন, তাহলে ভারতের অ্যাথলিট হিসেবে তিনি ইতিহাসে নাম লেখাতেন। পরপর কয়েকটি থ্রো বাতিল হওয়াতে নীরজ মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েন। এমনকি চতুর্থ থ্রোও তাঁর বাতিল হয়ে যায়। শেষ থ্রোটাও তাঁর ভালো হয়নি। শেষ থ্রোতে ৯০ মিটরের বেশি দূরত্ব করে পাকিস্তানের আরশাদ নিজের জায়গাটা পাকা করে নেন।

নীরজ চোপড়া রুপোর পদক পাওয়ার পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রত্যেকের অভিমত, নীরজ দেশকে সম্মানিত করেছেন। চণ্ডীগড়ের অ্যাথলিট নীরজ চোপড়ার কৃতিত্বে ভারতের একটি রুপোর পদক এল। এখনও পর্যন্ত ভারত চারটি পদক পেয়েছে। তিনটি ব্রোঞ্জ পদক এসেছে শুটিংয়ে আর জ্যাভলিন থেকে এল রুপোর পদক।


প্যারিসে দুই সন্তানের সাফল্যে খুশি নীরজের মা সরোজ দেবী। নীরজের মা খুশি হয়ে বলেন, আমার এক সন্তান পাকিস্তানের আরশাদ আলি, আরেক সন্তান ভারতের নীরজ চোপড়া। একজন সোনা জিতেছে, আরেকজন রুপোর পদক পেয়েছে। তাতে আমি খুশি। তাঁর এই কথার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে দুই দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্ক। নীরজ আর নাদিমের মধ্যে লড়াইটা নতুন নয়। একজন হরিয়ানার ছেলে আরেকজন পাকিস্তানের পাঞ্জাবের ছেলে। তাই সরোজ দেবী সবসময় এই দুই অ্যাথলিটকে সন্তান বলেই ভাবেন। সরোজ দেবীর কথায় কুর্নিশ জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার শোয়েব আখতার। তিনি বলেছেন, যে সোনা জিতেছে সেও আমার সন্তান, এমন কথা একজন মা’ই বলতে পারেন।